ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কবিতা

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | জুননু রাইন

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৭
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | জুননু রাইন ছবি: বাংলানিউজ

কবি জুননু রাইনের জন্ম ০৫ নভেম্বর ১৯৮২, ভোলা বোরহানউদ্দিনের দেউলা গ্রামে। স্কুল-কলেজ ভোলার বোরহানউদ্দিনে। এরপর ঢাকা কলেজ। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত। 

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি জুননু রাইনের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।  


প্রিয় পাঁচ কবিতা

শৈশব
তোকে দেখি না কতোদিন
তোর নাম ডালিম গাছের ডালে বসে উড়ে যাওয়া দোয়েল পাখি
তোর নাম শেষ বিকেলের অশ্রুর মতো ঝরে পড়া শান্তির হাসি...
তুই ছুটে বেড়াতিস আমাদের ধুলোমাখা পায়ের ছন্দে
খেলতিস ফুটবল ক্রিকেট।

তোকে দেখি না কতোদিন
তুই'ত শিশির ফোঁটা; সমুদ্র পেটে নিয়ে চেয়ে থাকতিস।
না, সকাল-বিকেল চারাগাছে পানি দিতিস
না, তুই ছিলি চারাগাছ শীতের সবজি-স্বজন।
না! তুই ঘুড়ি উড়াতিস আকাশে
অথবা ছিলি সুতাভর্তি নাটাইয়ের চালক
কিংবা তোরই নাম ঘুড়ি ওড়ানো সেদিনের বিকেলবেলা।

তোকে দেখি না কতোদিন...

একদিন বৃষ্টি হবে
একদিন বৃষ্টি হবে
ব্যথিতের রক্তক্ষরণের
গুড়ো গুড়ো দারিদ্রের শব্দে
সূর্যের লাল চোখরাঙ্গানি ঝরিয়ে
শতাব্দী থেকে শতাব্দী দীর্ঘ আর্তনাদে
...একদিন বৃষ্টি হবে।

একদিন বৃষ্টি হবে
আশ্রয়হীনের আকাশ ভরা শূন্য চাহনী ঝরিয়ে
সব রাত্রিকে বন্দি করে অন্ধকারের বৃষ্টি হবে।

জীবন 
জীবন অনেক বড় হতে হয়
সুউচ্চ টাওয়ার, পাহাড়, গাছের মতো না
বড় হতে হয় ঘাসের মতো
দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয় পদপিষ্টতা সহ্য করে।

জীবন অনেক বড় হতে হয়
থেতলে যেতে যেতে চ্যাপ্টা হতে হতে
নিজের রক্ত পান করতে করতে
বিস্তৃত হতে হয় ধৈর্যে সহ্যে...

জীবন অনেক বড় হতে হয়।

মায়ের জন্য কবিতা   
একটি কবিতা লিখে দেব
এমন কথা মাকে আমি দিইনি
... যদি লিখতে না পারি
বলিনি আমাকেও এই ভয়ে।

সংকোচে মোড়ানো বিষয়টি
নিঃসংকোচে কাছে এলো
আর গেলোও না তার কোনো ঠিকানায়

একটি কবিতা লিখে দেব
এমন কথা মাকে আমি দিইনি তো কখনোই

রাজা
'এক দেশে ছিলো এক রাজা'
... তারপর অন্ধকারের শব্দ থেমে গেল
জোছনায় ধোয়া শীতল বাতাসে
গল্পগুলো কান পাতলো ইতিহাসে।

দাদু ঘুমোচ্ছে আর গল্প বলে যাচ্ছে তাঁকে
দাঁড়ানো হাতের মুঠোয় পাখাটি ঘুরছে
ঘোড়া উড়ছে, সাদা সাদা মেঘের কেশরে
ঝরছে মৃত্যুর তুষার...।

প্রচন্ড গরমকেও মৃত্যু শীতল করলো
অনেক ঘোড়া চলে গেল রাজত্বের ধুলো উড়িয়ে
সবাই ঘুমিয়ে গেল
পৃথিবীতে শত-সহস্র ঘুমের আস্তরণ শেষে
দাদুর মৃত্যুর পরেও-
... এক দেশে রাজা একজনই রয়ে গেল।


কবিতার গল্প
'শৈশব' ছোটবেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিলো গাছ লাগানো। গাছে পানি দেওয়া। চারা গাছকে বড় হতে দেখা। ছোট ছোট চারাগাছগুলো এখনও আমার কাছে জীবনের হাসি, যা এখন আর দেখি না কোথাও, কোনোকিছুতেই।  

'একদিন বৃষ্টি হবে' অত্যাচারিতরা যেনো পেরেই ওঠে না। তাদের যন্ত্রণাগুলো মনে হচ্ছে কোথাও যেনো জমা হচ্ছে। এবং এই পরাজিতরা একত্রিত হচ্ছে। শক্তিশালী হচ্ছে কোথাও না কোথাও। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার সময় মাথায় এসেছিল কথাগুলো।

'জীবন' জীবন যাদের কাছে সবচাইতে প্রিয় এবং মহামূল্যবান- তারা সেটা যাপন করে, দেখার সুযোগ নেয় না। আমার কাছে জীবন অভিজ্ঞতা মাত্র। আমি বাঁচতে বা মরতে অতোটা তৎপর নই-যতোটা একটি চারাগাছে পানি দিয়ে, গাছের ছায়ায় বসে গল্প করে। আমার বন্ধু কবি তৌফিক জোয়ার্দার আমার দেখা ভালো মানুষ। এবং অনেক বড় হয়েও নিজেকে বনসাই করে রাখার দৃষ্টান্ত। ওর জন্য খুব কষ্ট হয়েছিল। ওর একটি সমুদ্রকে সানন্দে নদীতে ভরে দিতে পারার আনন্দ দেখে। এই কবিতাটি একটি বিষয়ে কথা বলা-বলির ঠিক কিছুক্ষণ পরেই লেখা।

'মায়ের জন্য কবিতা' আমিও প্রথমতো অন্য সবার মতোই মা বলেই মাকে ভালোবাসি। দ্বিতীয়ত তার অভিনয়গুণের জন্য। আমার অনেক ফুফু ও খালা আছে। মাকে নিয়ে তারা বিকেলে পাশের বাড়িগুলোতে দলবেঁধে ঘুরতে যেতেন। ফিরে এসে যারা যেতে পারেননি তাদেরকে সেইসব বাড়িতে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা বলতেন এবং ওইসব বাড়ির মেয়েদের আপ্যায়ন ও কথাবলার ভুলত্রুটি অসম্ভব নিখুঁত অভিনয়ে সবাইকে দেখাতেন। বাড়ির অন্য চাচি ও বড়বোনেরা সবাই জড়ো হয়ে সার্কাস দেখার মতো করে মায়ের অভিনয় দেখতেন। এসবের মধ্যে মা আনন্দ খুঁজতে চাইতেন। সাধারণত আনন্দের যায়গা আমার মায়ের খুব কমই ছিলো। অনেকবার ভেবেছি, মাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবো, পারিনি। কারণ, আমার দেখা এবং বোঝা, মায়ের ত্যাগগুলোর সামান্য প্রতিদান হতে পারে এমন কোনো বাক্যই আমি খুঁজে পাইনি। সেই না পাওয়া নিয়েই লেখা এই কবিতাটি।

'রাজা' বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে যারা গ্রামের শৈশব পায়নি, তারা তাদের জীবনে জীবনের সিংহভাগই সংযোজিত করতে পারেনি। দাদি মানুষের জীবনে জীবন্ত মিথ। দাদিরা অভিজ্ঞতা এবং জীবনের অর্থ বয়ে বেড়ায়। তাদের দেখলেই যেনো শেখা হয় অনেক কিছু। দাদিরা গল্প শুরুই করেন এক দেশের এক রাজা দিয়ে। অনেক বছর আগে মারা যাওয়া দাদির বলা গল্পের কথা মনে করে লেখা এই কবিতাটি।

যোগাযোগ

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।