ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

চিকিৎসাসুবিধা বঞ্চিত দুবলার চরের জেলেরা

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
চিকিৎসাসুবিধা বঞ্চিত দুবলার চরের জেলেরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রতিবছর অক্টোবর থেকে টানা ছয় মাস সুন্দরবনের দুবলার চর পায় নতুন প্রাণ। এ সময় মৎস্যজীবীরা অনুমতি পায় সাগরে মাছ ধরার।

দুবলার চর থেকে ফিরে: প্রতিবছর অক্টোবর থেকে টানা ছয় মাস সুন্দরবনের দুবলার চর পায় নতুন প্রাণ। এ সময় মৎস্যজীবীরা অনুমতি পায় সাগরে মাছ ধরার।

জেলেরা হাজার হাজার শ্রমিক নিয়ে দুবলার চরে হাজির হন। মাছ ধরার পাশাপাশি সেখানে দুবেলা দু’মুঠো খাবারের আয়োজন হলেও চিকিৎসা নামের মৌলিক চাহিদার বালাই সেখানে নেই।

খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের কয়েকজন হাতুড়ে ডাক্তার জেলেদের সঙ্গে সঙ্গে মাছের মৌসুমে এই চরে এসে আসন গাড়লেও প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় তাদের। জটিল রোগ কিংবা হঠাৎ দুর্ঘটনায় অনেক জেলেকে উন্নত চিকিৎসা ছাড়াই ঢলে পড়তে হয় মৃত্যুর কোলে।
জেলেদের ভাষায়, চরের জীবন মানে মরণের হাতেই সমর্পণ করে আসা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুবলার চরে ৮শ ৫৪টি মাছের চাতাল রয়েছে। একেকটি চাতালে অন্তত ৫-১০জন করে শ্রমকি কাজ করে। দিনের পর দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে পড়ে থাকায় ডাকাতের আক্রমণ থেকে শুরু করে নানা রোগে আক্রান্ত হতে হয় তাদের। অনেক সময় সাগর থেকে চরে এসে পৌঁছাতে পারলেও চর থেকে বাগেরহাট বা খুলনার কোনো হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় সহকর্মীর অকাল মৃত্যু চোখের সামনে দেখতে হয় জেলেদের।
স্থানীয়রা জানান, বেশ আগে মাছের মৌসুম এলে বাগেরহাট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দু’জন সহকারীসহ একজন ডাক্তার পাঠানো হতো। গত কয়েকবছর যাবত সেটাও বন্ধ রয়েছে।

তাদের মতে, এ যেনো ডাক্তার তুলে নেওয়া নয়, দুবলার চরের জেলেদের উপর থেকে সরকারে মনোযোগ তুলে নেওয়া।

এ বিষয়ে শরণখোলার মৎস্য শ্রমিক কাশেম মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগে একবার আমাদের নৌকায় ডাকাতরা হামলা করে। কয়েকজন জেলেকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায় তারা। আহতদের একজনের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিলো। নৌকা নিয়ে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় দুবলার চরে পৌঁছালেও সেখানকার ডাক্তার জানান, এখানে এ রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য কোনো হাসপাতালে নিতে হবে। এ অবস্থায় দ্রুত পৌঁছুতে না পারলে রোগী মারা যেতে পারে।

কাশেম জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকায় দ্বীপের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত কামালউদ্দিন স্পিডবোডে সেই শ্রমিককে শরণখোলার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে বেঁচে যায় সেই শ্রমিক।

এ প্রসঙ্গে কামালউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা এখানকার জেলেরা পায় না। আমাদের আহ্বানে আশপাশের এলাকা থেকে কয়েকজন হাতুড়ে ডাক্তার এখানে বসেন। তবে তাদের ক্ষমতা ও ওষুধের অপ্রতুলতায় অনেক সময় জেলেদের জীবন শঙ্কায় পড়ে।

তিনি শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার আসা বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাছের মৌসুম এলে চরে কয়েক হাজার জেলে বসবাস করে। প্রতিবছর এ সংখ্যা বাড়ছে। তার পরেও কর্তৃপক্ষ এখানে ডাক্তার পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে না।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুধু রাসমেলার সময় অধিক পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর চাপ থাকায় তিনদিনের জন্য একটি মেডিকেল টিম পাঠায় শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এটা গা বাঁচানোর নামান্তর।

দুবলার চরে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণে জেলেদের মতোই জোর দাবি জানান তিনি। যেখান থেকে মাছ ধরার মৌসুমে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা পাবে জেলেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
জেপি/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।