ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

১৭ ইঞ্চি হলেই ১ হাজার কোটি টাকা!  

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
১৭ ইঞ্চি হলেই ১ হাজার কোটি টাকা!   মোজ্জাদ্দেদ হাসান আমুল, সিরাজুল ইসলাম ও লিটন আহম্মদ (বাদিক থেকে) / ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ‘তক্ষক’ এর আকৃতি ১৭ ইঞ্চি হলেই দাম পাওয়া যাবে এক হাজার কোটি টাকা! চরম বিস্ময়কর ও অতি লোভনীয় এই তথ্যটির সত্যতা যাচাই না করেই এক শ্রেণির অর্থলোভী মানুষ বেশ কিছুদিন থেকেই গোপনে নেমে পড়েছেন ‘তক্ষক’ সংগ্রহে।

আর এর ফলেই দেশব্যাপী মরতে হচ্ছে নিরীহ ও উপকারী এ সরীসৃপ প্রাণিকে।
 
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত তক্ষক সংগ্রহ ও পাচারচক্রের চারজনকে আটক করে শাস্তি দিয়েছে।

প্রত্যেকের কাছ থেকে তৎক্ষণাৎ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।  

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- ঝিনাইদহ সদরের শহীদ মশিউর রহমান সড়কের (টিএনটি পাড়া) মৃত ডা. নঈমুদ্দিন আহমেদের ছেলে মোজ্জাদ্দেদ হাসান আমুল (৪০), ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের মৃত আয়াত উল্লাহের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪০), শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা-হাজিপুর এলাকার মৃত ডা. ফজলুল করিমের ছেলে লিটন আহম্মদ (৩৮) এবং মাইজদিহি চা বাগানের মৃত রাধা প্রসাদ বাউরির ছেলে সুনীল বাউরি (৫৫)।  

তক্ষক

এদিন আমুল ও সিরাজুল নামে দুই ব্যক্তি তক্ষক সংগ্রহের লোভে শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার রোডে অবস্থিত ‘গ্রেন্ড শ্রীমঙ্গল’ হোটেলে অবস্থান নেন। তারা ‘ইনফর্মার’ হিসেবে বরুণা-হাজিপুর এলাকার লিটনকে কাজে লাগান। তাদের সঙ্গে ছিলো তক্ষক মাপার স্প্রিং নিকতি, ওজন মাপার যন্ত্র, ফিতা প্রভৃতি।  

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯ আমুল, সিরাজুল ও লিটনকে আটক করে র‌্যাব অফিসে নিয়ে আসে। পরে লিটককে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাব সাদাপোশাকে ক্রেতা সেজে মাইজদিহি চা বাগানের সুনীলের কাছে গিয়ে তার কাছে থাকা দু’টি তক্ষকসহ তাকে আটক করে।  

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল হক বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ছয় ধারাতে অপরাধ এবং ৩৯ ধারাতে শাস্তিস্বরূপ অপরাধীদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।  
 
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধীরা বলেছেন যে, কোনো তক্ষক ১৭ ইঞ্চি বা এর বেশি হলেই নাকি এক হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায়। আর এর লোভেই তারা গোপনে তক্ষক সংগ্রহ করে চীন দেশে পাচার করছেন। চীনে নাকি ক্যানসারের প্রতিষেধক তৈরির কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই বলে জানি।  

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় আহাদ নামে এক লোকের পক্ষে কাজ করেন আমুল ও সিরাজুল। তারা তক্ষক সংগ্রহের জন্য শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে স্থানীয় লিটনের সহযোগিতায় এই অবৈধ কাজটি করার চেষ্টা চালান।  

তক্ষকের অবৈধ সংগ্রহ ও পাচারকারীর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে বলে জানান বন কর্মকর্তা তবিবুর রহমান।  

বন্যপ্রাণী রেঞ্জ সূত্র জানায়, তক্ষকের ইংরেজি নাম South Asian Giant House Gecko এবং বৈজ্ঞানিক নাম Gekko gecko। এদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এরা নিশাচর প্রাণী। টিকটিকি, ছোট ইঁদুর, ছোট পাখি প্রভৃতি তাদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে। সারাদেশেই তাদের দেখতে পাওয়া যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭ 
বিবিবি/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।