বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, এ পাখিটা সবার চোখের সামনে আছে অথচ চোখে ধরা পড়ে না- সেটা হলো আমাদের ‘ছোট ডুবুরি’। পৃথিবীতে ‘ডুবুরি’ পাখি আছে মাত্র ২০ প্রজাতির।
‘এই জলজপাখিটা অতি সুন্দর একটা পাখি। হঠাৎ ডুবে যায়; অনেকক্ষণ পর অনেক দূরে গিয়ে ভেসে ওঠে। পানির নিচে থাকার তার কোনো ইচ্ছে নেই; একমাত্র ভয় পেলেই কেবল সে এটা করে। বাচ্চা হলে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে পানিতে ভেসে বেড়ায়; এত সুন্দর লাগে দেখতে তখন! বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ওর গলাটা খয়েরি রং ধারণ করে। এমনিতে সে হালকা মেটে রং। জলজ উদ্ভিদের সঙ্গে সহজে মিশে যায়, দেখা যায় না। ’
ভেসে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ডুব দিয়ে সে বহুক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারে এরকম পাখি খুব কম আছে। যেমন- পানকৌড়ি। কারণ ওর ডানার পালকগুলো পানিতে ভিজে যায়। ভিজলে পানির নিচে থাকা যায়। যে পালক পানিতে ভেজে না সেগুলো পানির নিচে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। কিন্তু ডুবুরি আবার ভিন্ন। ডুবুরির পালক কিন্তু পানিতে ভেজে না। ওর পালকটা তুলার পিণ্ডের মতো। সহজে ভেতরে পানি ঢোকে না।
‘সে পায়ের জোরে পানির একেবারে নিচে যেতে পারে। ওর পা আবার ভিন্ন। সাধারণত পাখির পা যেমন থাকে তেমন নয়। ওর প্রতিটি আঙুল অনেকখানি চওড়া চওড়া; একেবারে গাছের পাতা বা বৈঠার মতো। ফলে ছোটডুবুরি সহজে পানিতে ধাক্কা দিয়ে নিচে চলে যেতে পারে। ’
ভিন্ন নাম প্রসঙ্গে ইনাম বলেন, এরা বাইক্কাবিলসহ চা বাগানের বিভিন্ন নির্জন জলাশয়গুলোতে আছে। সে পানির যে কোনো জায়গা টিকে থাকতে পারে। পানিতে বিচরণ করা পোকামাকড়, লতাপাতা, খুদে মাছের পোনা এগুলো খেয়ে দিব্বি দিন কেটে যায়। বাংলাদেশের প্রতিটি ডোবায় এরা এক সময় ছিল। আমি প্রায় ৩০ বছর আগেও তাকে সব জায়গায় দেখেছি। তখন মানুষ চিনতো। এখন তো মানুষ নেনে না। যদি আপনি বলেন- ‘ডুবুরি’ বলে কোনো পাখি আছে? চিনবে না। বাংলাদেশের বেশিভাগ গ্রামের লোকেরা এই পাখিটাকে বলে ‘ছ্যারছ্যারি’। ও ভয় পেলে পানির উপর দিয়ে অনেক দূরে উড়ে যায় বলে এই নাম।
তিনি আরো বলেন, শীতের দিনে পানি কমে গেলে ওরা একত্রিত হয়ে দলবেঁধে থাকে। কোনো কোনো দলে ১০০/২০০ পাখিও আমি খুঁজে পেয়েছি। এখনো কোনো কোনো বিলে আমি দেখতে পাই তাদের। লোকে নৌকা নিয়ে গেলে ওরা পানির উপর দিয়ে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেত। এমন একটা ভাব তার যে- না উড়ছে, না ডুবছে। সে পানির উপর দিয়ে দৌড়াচ্ছে।
পাখিটি ছোট থাকায় সুবিধা হলো- খাবার কম লাগে। অল্প জায়গায় থাকাসহ সহজে লুকাতে পারে। আর অসুবিধা হলো- এর ডিমটা খুবই ছোট। ফলে টিকটিকি, গিরগিটি, অঞ্জন প্রভৃতি সরীসৃপরা এর ডিম খেয়ে ফেলতে পারে। এছাড়াও চিল, গুইসাপ প্রভৃতি ওর শত্রু রয়েছে। ও তো পানির উপরের পাতার মধ্যেই ডিম পাড়ে, ডিমে তা দেওয়া, ছানাদের বড় করা এ বড়ই কঠিন কাজ। ও আগে যেসব প্রাকৃতিক বিল-হাওরগুলোতে ছিল, এখন তো এসব প্রাকৃতিক বিলে মানুষের আনাগোনা। নিরিবিলি থাকতে দিচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২০
বিবিবি/এএ