ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৩০০ লোকের কাজ করছে একটি ম্যাগনেট ক্রেন

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
৩০০ লোকের কাজ করছে একটি ম্যাগনেট ক্রেন ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

৩০০ লোকের সমান কাজ একাই করছে ছোট্ট একটি ম্যাগনেট ক্রেন। একজন অপারেটরের সাহায্যে শক্তিশালী ‍চুম্বকশক্তি প্রয়োগে সক্ষম  ক্রেনটি মাত্র ১৫ মিনিটে ১৫ টন স্ক্র্যাপ ধারণক্ষমতার একটি ট্রাক বোঝাই করতে পারে। জাদুকরী ক্ষমতার ক্রেনটি ৩০০ লোকের কাজ একাই করছে পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির ইয়ার্ডে।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে: ৩০০ লোকের সমান কাজ একাই করছে ছোট্ট একটি ম্যাগনেট ক্রেন। একজন অপারেটরের সাহায্যে শক্তিশালী ‍চুম্বকশক্তি প্রয়োগে সক্ষম ক্রেনটি মাত্র ১৫ মিনিটে ১৫ টন স্ক্র্যাপ ধারণক্ষমতার একটি ট্রাক বোঝাই করতে পারে।

জাদুকরী ক্ষমতার ক্রেনটি ৩০০ লোকের কাজ একাই করছে পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির ইয়ার্ডে।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিশ্বের আধুনিক শিপইয়ার্ডগুলোর অনুকরণে প্রায় শতভাগ কমপ্লায়েন্স এ ইয়ার্ডে ম্যাগনেটিক ক্রেন আছে তিনটি।

ম্যাগনেটিক ক্রেনের সুফল সম্পর্কে পিএইচপি শিপইয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) নূর মোহাম্মদ ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, একটা সময় ছিল আমাদের ইয়ার্ডে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখর থাকত পুরো এলাকা। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে শ্রমিকদের সংখ্যা কমছে। একসময় লোড-আনলোড, স্টেকিং, রিপ্লেসমেন্ট ইত্যাদি কাজে প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন হতো। বর্তমানে ম্যাগনেটিক ক্রেনের জাদুকরী ছোঁয়ায় অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে ট্রাক লোড হচ্ছে। মাত্র ১৫ মিনিটে একটি ট্রাক ভরে দিচ্ছে ক্রেনটি।

১৯৮২ সাল থেকে জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ফারুকী বলেন, খুব সম্ভবত ১৯৯৪ সালে পিএইচপি ইয়ার্ডে ম্যাগনেটিক ক্রেন ব্যবহার শুরু করি। তখন টাকার মূল্য ছিল বেশি, জাপানি একটি ম্যাগনেটিক ক্রেন কিনেছি ৮০ লাখ টাকায়। এখন একেকটি ক্রেন বিক্রি হয় সোয়া কোটি টাকার বেশি।

আগে যেখানে ৫০০ কেজি ওজনের একটি লোহার টুকরা সরাতে ২০ জন লোক লাগত এখন মাত্র দুই মিনিটে কাজটি করে দিচ্ছে ম্যাগনেটিক ক্রেন। দেড়-দুই ঘণ্টা লাগত স্ক্র্যাপের ছোট-বড় টুকরা দিয়ে স্টিল রিরোলিং মিলের কাঁচামালের ট্রাক লোড করতে। এখন ১৮-২০ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক বোঝাই হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ মিনিটে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে শুধু শ্রমিক কমেছে তা নয়, একই সঙ্গে শ্রমিকদের দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও কমে গেছে। শ্রমিক কম হওয়ায় সবার জন্য হেলমেট, গ্লাভস, গামবুট, বয়লার স্যুট, সেফটি গগলস, সেফটি সুজ ইত্যাদি সরবরাহ, ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, পিএইচপি শিপইয়ার্ড দেশের শীর্ষ কমপ্লায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি। যেখানে পুরো ইয়ার্ডটি পরিকল্পিতভাবে পাকা করা হয়েছে। ফলে ম্যাগনেটিক ক্রেন সহজে যাতায়াত করতে পারছে। আমাদের রয়েছে শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিতে সংযোজিত প্রথম টাওয়ার ক্রেন। আমরা আরও ম্যাগনেটিক ক্রেন আনছি। পরিকল্পনা রয়েছে একটি উ‌চ্চক্ষমতার ক্রলার ক্রেন সংগ্রহের, যার দাম প্রায় চার কোটি টাকা। এটি ৫০-৭০ টন ওজনের জাহাজের টুকরা সাগর থেকে ইয়ার্ডে নিয়ে আসতে পারবে।    

সোমবার দুপুরে ম্যাগনেটিক ক্রেনে বসে অপারেটর মোহাম্মদ রফিক (৫১) বাংলানিউজকে বলেন, ২২ বছর ধরে এ ইয়ার্ডে চাকরি করছি। এখন মাসিক বেতন পাই ২৩ হাজার টাকা। আমার তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরি করে। আমরা বেতন ছাড়াও থাকা-খাওয়াসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা পাই কোম্পানির কাছ থেকে।

লোহাগাড়ার আমিরাবাদের রফিক বললেন, ম্যাগনেটিক ক্রেন আসাতে লোডিং শ্রমিকদের চাহিদা কমে গেছে। যদি জাহাজের বড় লোহার টুকরা বা প্লেট (পাত) হয় তবে ১৫ মিনিটে ট্রাক লোড করতে পারি আমরা। ছোট টুকরা কিংবা ইয়ার্ডে ছড়ানো লোহার টুকরা দিয়ে ট্রাক ভর্তি করতে হলে বড় জোর ২০ মিনিট লাগে।      

সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে ২১ একর জায়গার ওপর ২০০০ সালে পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১৯৮২ সালে এ ইয়ার্ডে যাত্রা শুরু হয়েছিল আরএম শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। ১৯৮৫ সালে ‘ট্রেড ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ নামের ২২ হাজার টনের একটি বিশাল জাহাজ কাটা হয় বলে ইয়ার্ড বাইশহাজারি ইয়ার্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। ২০০৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজের মধ্যে চতুর্থতম ‘এমটি আর্কটিক ব্লু’ কেটে আবার ইতিহাসের অংশ হয় পিএইচপি শিপইয়ার্ড। এ পর্যন্ত ১৩৬টি জাহাজ কাটা হয় এ ইয়ার্ডে। অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশের আইকনিক এ ইয়ার্ডে একসঙ্গে পাঁচটি জাহাজ কাটার সক্ষমতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আইএসও ৯০০১, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আইএসও ১৪০০১, হেলথ সেফটি অ্যাসেসমেন্ট সিরিজে আইএসও ১৮০০১ এবং শিপ রিসাইক্লিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আইএসও ৩০০০০ সনদ লাভ করেছে।  

** টাওয়ার ক্রেন বসিয়ে ইতিহাস গড়ল পিএইচপি শিপইয়ার্ড

** পিএইচপি শিপ ব্রেকিং: গ্রিন শিপইয়ার্ডের পথিকৃৎ

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

এআর/টিসি   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।