ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দিয়াশলাই নিয়ে অপেক্ষা, কখন আসবে গ্যাস

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭
দিয়াশলাই নিয়ে অপেক্ষা, কখন আসবে গ্যাস

চট্টগ্রাম: কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। এতে রেশনিংয়ের মাধ্যমে আবাসিকে গ্যাসের চাহিদা কোনোভাবে মেটানো যেত।

কিন্তু গত শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে কেজিডিসিএলকে দেওয়া হচ্ছে ২২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডকে (কাফকো) দিতে হচ্ছে ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, প্রায় ১০ মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হওয়া চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডকে (সিইউএফএল) দিতে হচ্ছে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

বাকি থাকা মাত্র ১৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে আবাসিক খাতে চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এর ফলে নগরীজুড়ে প্রকট গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।

এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, প্রতিদিনই সকাল সাড়ে ছয়টা-সাতটার মধ্যেই গ্যাস চলে যায়। দিনভর আর আসে না। বিকেলের দিকে আসলেও আবার চলে যায় সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে। রাত ১০টার পর কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায়।

চকবাজার এলাকার চাকরিজীবী নারী শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার সময় গ্যাস পাই না। ফলে রান্না না করেই বের হয়ে যেতে হয়। আবার বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পরও গ্যাস পাচ্ছি না। আমি গ্যাস পাচ্ছি রাত ১০টার পর। এতো রাতে তো আর রান্নার প্রয়োজন হয় না। তাই কয়েকদিন ধরে বাইরের খাবারই খেতে হচ্ছে আমাদের। ’

তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংকট আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ’

বাদুরতলা এলাকার গৃহিণী হামিদা বেগম একই অভিযোগ করে বলেন, ‘দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস না দিলেও মাস শেষে ঠিকই একই টাকা রাখা হচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। গ্যাস পাবো না, কিন্তু টাকা দেব-এটা কেমন কথা। ’

গ্যাস সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।

কেজিডিসিএল’র ম্যানেজার (কাস্টমার অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি গ্যাস সংকট বাড়ার কারণ আছে। কারণ আমরা আগে প্রতিদিন ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেতাম। রেশনিংয়ের মাধ্যমে এই গ্যাস দিয়ে আবাসিকের চাহিদা মেটানো যেত। কিন্তু হঠাৎ করে গত শনিবার থেকে আমরা পাচ্ছি ২২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে থেকে কাফকো ও সিইউএফএলকে দেওয়ার পর বাকি ১৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে আসলে আবাসিকের চাহিদা মেটানো সম্ভব না।

এদিকে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপকের কাছে এমআইএস প্রতিবেদন পাঠায়  কেজিডিএল’র মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মো. আবু জাফর।

কেজিডিএল’র ডিসেম্বর মাসের এই এমআইএস প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গ্যাস সংকটের কথা।

এতে বলা হয়, কেজিডিএল’র ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। এছাড়া আবেদন করা গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ প্রদান করলে প্রায় ৫০০ ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। এই বিপুল চাহিদার বিপরীতে ডিসেম্বর মাসে ২০৮ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত চাপে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না করলে কেজিডিসিএল’র চাহিদা মেটানো সম্ভব না।

তবে এই গ্যাস সংকট বেশিদিন থাকবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রকৌশলী অনুপম দত্ত। তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংকটটা সার্বজনীন সমস্যা। এই সংকট নিরসনে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।