ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘অতিরিক্ত টাকা’ ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭
‘অতিরিক্ত টাকা’ ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে বক্তব্য রাখছেন জেলা প্রশাসক (ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

চট্টগ্রাম: ‘ভর্তিক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকার চেয়ে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত না দিলে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত টাকা আদায় ঠেকাতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। সভায় ৪৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
এর আগে নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫টি তদারক কমিটি গঠন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটিতে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
ওই তদারক কমিটি নগরীর বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাস্তব চিত্র তুলে আনতে সক্ষম হয়। তদারক টিম ভর্তিক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৬৩ হাজার টাকা আদায়ের ও টিসির জন্য ১০ হাজারোধিক টাকা নেওয়ারও অভিযোগ পায়। পরবর্তীতে ভর্তি নীতিমালার বাইরে সর্বসাকূল্যে কেন ৩ হাজার বেশি আদায় করা হয়েছে, তার লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে ৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানের নোটিশ পাঠায় এবং বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসনের সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
 
সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন আরও বলেন, বারংবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডেকে সভা করা ব্রিবতকর। কেননা, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এ সেক্টরে আমরা যদি নীতিমালাকে অনুসরণ না করি, তা সত্যিই ব্রিবতকর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি নীতিমালার বাইরে যায়, তাহলে আমরা কি শিখবো আর শিক্ষার্থীদের কি শিক্ষা দিবো। আমাদের তদারক টিম যাচাই বাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ভর্তি নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বসাকূল্যে ৩ হাজার টাকার বেশি টাকা আদায় করা যাবে না। কিন্তু তদারক কমিটি তার চিত্র পেয়েছে ভিন্ন। তদন্তে ৫ থেকে ১০গুণ বেশি টাকা আদায়ের চিত্রও উঠে আসে। যা কখনো কাম্য নয়। তাই আগামী ১০ দিনের মধ্যে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানানখাতে শিক্ষার্থীদের কাছে ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করেছে, তাদেরকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে হবে। নইলে শিক্ষার্থীদের সাথে বেতন অথবা পরীক্ষার ফি এর মাধ্যমে সমন্বয় করে নিতে হবে। পরে তা জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তীতে ৭ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসন তদন্তপূর্বক যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিবে না; সেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনকি মন্ত্রণালয়ে ওইসব স্কুলের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. দৌলতুজ্জামান খাঁন বলেন, ভর্তি নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি নীতিমালার বাইরে এক টাকাও বেশি নিতে পারবে না। ভর্তি নীতিমালার ১০-এ স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উন্নয়ন ফি, সেশনচার্জসহ নানাখাতে ভর্তির সময় সর্বসাকূলে ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না। সেহেতু কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ছাড়পত্রের জন্য কোন টাকা নেওয়া যাবে না।
 
তিনি আরও বলেন, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতিরজনকের ছবি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো না হলে সেই স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নিয়ম ভঙ্গ করছে, তাদের অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই স্কুলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন বলেন, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নীতিমালা সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিন শুরু হবে এসেম্বিলি, জাতীয় সংগীত ও ছাত্র সমাবেশ দিয়ে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার বাইরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে সরকারি দপ্তরগুলো তৎপর রয়েছে। বাড়তি টাকা নিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
 
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক আবুল মনসুর ভুইয়া বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি নীতিমালা অনুসরণ না করে, এ সংক্রান্ত কোন লিখিত অভিযোগ পেলে, ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নীতিমালার মধ্যে থাকতে হবে।
 
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসনে বাড়তি টাকা আদায়ের তথ্য সম্বলিত একটি তালিকা দিয়েছিল ছাত্রলীগ। যেখানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চসিক পরিচালিত স্কুলও রয়েছে। যদিও কারণ দর্শানো প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অনেক স্কুলের নাম বাদ পড়েছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে এসএসসি পরীক্ষার আগের দিন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে জোর করে ১৬০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতিরজনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো হয় না। যা সংবিধান পরিপস্থি এবং কখনো মেনে নেওয়া যায় না। তাই বাড়তি টাকা আদায়কৃত স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।
 
সভায় উপস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ভর্তি নীতিমালার ১০-এর গ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেছেন-‘ নীতিমালা অনুসারে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি উন্নয়ন ফি নেওয়া যায়, তাহলে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরীর স্কুলগুলোতে উন্নয়ন ফি নেওয়া যাবে না কেন? তারা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান।
 
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে আরা, চসিক এর প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন, ক্যাবের (কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজির হোসাইন প্রমুখ।
 
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নীতিমালা নেই: সভায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোন ব্রবস্থা নিতে পারে নি জেলা প্রশাসন। তার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. দৌলতুজ্জামান খান বাংলানিউজকে বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কোন নীতিমালা না থাকায় এখন কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানাবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭
এসবি/টিসি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।