ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘যে পরিবর্তনকে হেফাজত স্বাগত জানায় তা আমার না পড়লেও চলে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
‘যে পরিবর্তনকে হেফাজত স্বাগত জানায় তা আমার না পড়লেও চলে’ তীর্যক নাট্যদলের ‘নাট্যভাষা বাংলা আমার’ নাট্যায়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর

চট্টগ্রাম: পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন সম্পর্কে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, যে পরিবর্তনকে হেফাজত বিবৃতি দিয়ে স্বাগত জানায় সেই পরিবর্তন আমার না পড়লেও চলে। তারা হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের সামনে ন্যায় বিচারের আন্তর্জাতিক প্রতীক বিবেচিত ভাস্কর্যটি তুলে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর টিআইসি মিলনায়তনে তীর্যক নাট্যদলের একুশে স্মরণে ‘নাট্যভাষা বাংলা আমার’ শীর্ষক পাঁচ দিনের নাট্যায়োজনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ক’দিন পর এ মঞ্চে নাটক করতে পারবেন না, গান গাইতে পারবেন না, আবৃত্তি করতে পারবেন না।

এখানে তারা সমাবেশ করবে। হেফাজত এমনভাবে বলছে মনে হয় এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয়, যেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ।

বাংলাভাষার মধ্যে ক্রমাগত ইংরেজি শব্দ ঢুকে পড়ছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এখন ১০টি শব্দের মধ্যে চারটি ইংরেজি। আমরা কিন্ডারগার্টেনের দিকে ঝুঁকে পড়ছি। ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে ঝুঁকছি। কোচিং না করালে সন্তানরা ভালো করবে না, ভালো রেজাল্ট করবে না সেটি ভাবছি। কিন্তু তারা যে মানুষ হচ্ছে না সেটি নিয়ে কম চিন্তিত।

তিনি বলেন, ঢাকার উত্তরায় কিশোররা সংঘবদ্ধ হয়ে খুনও করল। এরা ফুটপাতের দরিদ্র সন্তান নয়। এরা শিক্ষিত পরিবারের। যেকোনো সময় ধাক্কা লাগবে। হলি আর্টিজানে, শোলাকিয়ায় যে ঘটনা ঘটল তা তো বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল না। মাত্রা পাঁচটি ছেলে ঠাণ্ডা মাথায় কুড়িজনকে হত্যা করল। এর মধ্যে নারী ছিলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ছিলেন। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে তারা রক্তাক্ত করল।  

‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক স্লোগান আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, জয় বাংলার শক্তি হারিয়ে ফেললে ক্ষতি আমাদের সবার। এদেশে গণজাগরণ মঞ্চ সম্ভব হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। উদ্বোধকের বক্তব্য দেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমির সভাপতি নাট্য ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে এ নাট্যায়োজন উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমির সভাপতি নাট্য ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশিদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তির্যকের দলপ্রধান আহমেদ ইকবাল হায়দার।

মনোজ মিত্র বলেন, সামাজিক জীবন যাপনে নাটক আমার কাছে আদর্শ এক শিক্ষা পদ্ধতি। একজন মানুষের পূর্ণতা প্রাপ্তি বা পূর্ণাঙ্গ মানুষের রূপ গ্রহণে নাটকের চর্চা উল্লেখযোগ্য প্রধান ভূমিকা রাখে। এ বাংলায় নাটকের চর্চা বা নাট্যপ্রাণ মানুষদের সাহচর্য আমাকে উদ্বেলিত করে।

মামুনুর রশিদ বলেন, মঞ্চ অবিরত সত্যই উচ্চারণ করে এবং মঞ্চকর্মীরা এই সত্যালোকের সহযাত্রী।

বিকেলে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যায়োজনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরপরই মিলনায়তনে তির্যকের শিল্পীরা পরিবেশন করে আহমেদ ইকবাল হায়দারের প্রয়োগ ভাবনায় নির্মিত চট্টগ্রামের লোকগানের নাট্যিক পরিবেশনা ‘চট্টলনামা’। এতে ‘ঘুম যারে দুধর বাচা’, ‘ও ভাই আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান’, ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানি’, ‘নাতিন বড়ই হা’, ‘বদর বদর’, ‘মলকা বানুর দেশে’ ইত্যাদি চমৎকার ভাবে চিত্রায়িত হয়।   বক্তব্য দেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ

মুক্তমঞ্চে সুজিত চক্রবর্ত্তীর পরিচালনায় সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং নৃত্য পরিবেশন করে শুভ্রা সেনগুপ্তার পরিচালনায় স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স এবং প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টারের শিল্পীরা।

সবশেষে তির্যক নাট্যদল মিলনায়তনে পরিবেশন করে কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রচিত এবং আহমেদ ইকবাল হায়দার নির্দেশিত নাটক ‘তরঙ্গভঙ্গ’। নাটকটিতে অভিনয় এবং নেপথ্যে ছিলেন সুজিত চক্রবর্ত্তী, রমিজ আহমেদ, অমিত চক্রবর্ত্তী, রিপন বড়ুয়া, মাহবুবুল ইসলাম রাজিব, মফিজুর রহমান, জুয়েল চাকমা, জয়া বড়ুয়া, প্রবাল বড়ুয়া, কিরিটি সাহা, একেএম ইছমাইল, মিখাইল মোহাম্মদ রফিক ও আহমেদ ইকবাল হায়দার। নাটকটির পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন নায়লা আজাদ নূপুর।

‘রূপচান সুন্দরীর পালা’

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টায় টিআইসি লেকচার থিয়েটারে নাট্যজন সম্মিলন ও নাট্য ভাবনা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চর্চারত নাট্যশিল্পীরা। বিকেল চারটায় লেকচার থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হবে বিষয়ভিত্তিক কথোপকথন নাট্য সংলাপ: মনোজ মিত্রের সাথে মামুনুর রশিদ। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মুক্তমঞ্চে আবৃত্তি করবে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন এবং নৃত্য পরিবেশন করবে ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার। সন্ধ্যা সাতটায় মিলনায়তনে রয়েছে বঙ্গলোক পরিবেশনা ‘রূপচান সুন্দরীর পালা’।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।