সেবা বুথে আসা মাত্রই ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জয়নাল আবেদীনের হাতে তুলে দেন ফুল। কাজের ফাঁকে তাকে দেওয়া হয় মিষ্টিও।
বছরের অন্য সময়ে ভূমি অফিসে এমন উৎসব মুখর পরিবেশ দেখা না গেলেও জয়নাল আবেদীনের মতো সেবা প্রার্থীদের জন্য বুধবার (১০ এপ্রিল) সারাদিন ষোলশহর এসি ল্যান্ড অফিসে ছিল ফুল-মিষ্টিসহ নানা আয়োজন।
আরও খবর>>
** ভূমি সেবা সপ্তাহ শুরু বুধবার
ভূমি সেবা সপ্তাহ ২০১৯ উপলক্ষে ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ই-নামজারির আবেদন গ্রহণ, ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়সহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় এ অফিসে।
শুধু ষোলশহর এসি ল্যান্ড অফিস নয়- সেবা প্রার্থীদের জন্য এমনসব আয়োজন ছিল বাকলিয়া এসি ল্যান্ড অফিস, সদর এসি ল্যান্ড অফিসসহ নগরের ৬টি ও জেলার ১৪টি এসি ল্যান্ড অফিসে। চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।
বুধবার চান্দগাঁও, বাকলিয়া ও সদর এসি ল্যান্ড অফিস ঘুরে দেখা গেছে- এসব অফিসের প্রবেশপথ থেকে মূল ভবন পর্যন্ত নানা রঙের বাতি, বেলুন আর ফুলে সাজানো। ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে টাঙানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। কর্মকর্তারা সেবা প্রার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ফুল আর মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করছেন।
নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তন করতে চাই
জানতে চাইলে চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফোরকান এলাহী অনুপম বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক বছর ধরে ভূমি সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমি অফিস সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তনের কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় ভূমিমন্ত্রী ভূমি অফিসগুলোতে ভূমি সেবা সপ্তাহ পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারিসহ নানা ডিজিটাল সেবা চালু করা হয়েছে। মানুষ এখন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ঘরে বসেই তার দলিল-খতিয়ান চেক করতে পারছে। সরকারি এসব উদ্যোগ ভূমি মালিকদের কাছে তুলে ধরতেই ভূমি সেবা সপ্তাহে নানা উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। সেবা প্রার্থীদের সঙ্গে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে দেওয়া হচ্ছে ফুল-মিষ্টি।
ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচেতন করতে চাই
বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা আফরিন মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, ভূমি অফিসকে আরও জনবান্ধব করতে সরকারের উদ্যোগের অভাব নেই। তবে ভূমি মালিকদের অনেকেই এখনো সচেতন নন। বিশেষ করে আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ধারনা নেই তেমন কারও। তাই এবার ভূমি সেবা সপ্তাহে সেবা দানের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।
তিনি বলেন, ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন সড়কে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে। ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নানা ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
ভূমি অফিস জনবান্ধব করতে চাই
সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে ভূমি অফিসের স্বাভাবিক কাজে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তারা যেমন আগ্রহ নিয়ে কাজ করছেন, তেমনি সেবা প্রার্থীদেরও সব ধরনের সেবা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ উৎসবটা সারা বছর ধরে রাখতে চাই আমরা। ভূমি অফিসকে আরও জনবান্ধব করতে চাই।
সন্তুষ্ট সেবা প্রার্থীরাও
ভূমি অফিসে কোনো কাজে গেলে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়- সেবা প্রার্থীদের এমন অভিযোগ বেশ পুরনো। তবে বুধবার এসি ল্যান্ড অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক সেবা প্রার্থী বাংলানিউজকে তাদের সন্তষ্টিুর কথা জানিয়েছেন।
বাকলিয়া এসি ল্যান্ড অফিসে খতিয়ানের জন্য এসেছেন ব্যবসায়ী মৃণাল কান্তি ধর। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বাতি-বেলুন-ফুল দিয়ে সাজানো ভূমি অফিস দেখেই চমকে যাই। অফিসে ঢুকার পর একজন এগিয়ে ফুল দিলেন। কাজটাও দ্রুত করে দিলেন। মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। বিষয়গুলো ভালো লেগেছে। বছরের অন্য সময়ে ভূমি অফিসের এমন পরিবেশ বজায় রাখা গেলে দ্রুতই পরিবর্তন আসবে। মানুষ হয়রানির শিকার হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এমআর/টিসি