ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনগড়া রিপোর্ট!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২০
সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনগড়া রিপোর্ট!

চট্টগ্রাম: গাইনোকোলজির চিকিৎসকের পরামর্শে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর থাইরয়েড হরমোন টেস্ট করার পর অদ্ভুত ফলাফল পাওয়া গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম থেকে।

চিকিৎসকের কাছে এই ফলাফল অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় পুনরায় বেসরকারি শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরীতে একই পরীক্ষা করানো হয়। দুই পরীক্ষায় ফলাফলও এসেছে ভিন্ন।

জানা গেছে, গত ২২ জুন মিসেস সাইমা ইসলাম নামের রোগী ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস-এ এফটি৪ ও টিএসএইচ (থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) পরীক্ষা করে ২ জুলাই রিপোর্ট পান। ডা. নুর-ই আমরিন আলিম স্বাক্ষরিত রিপোর্টে টিএসএইচ এসটিমেটেড ভ্যালু ৫.৪৭৩ µIU/mL ও এফটি৪ ২৪.০৭ pmoI/L আসে।

এ রিপোর্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ আনোয়ারুল করিমকে দেখানো হলে তিনি তা অবিশ্বাস্য বলে দাবি করেন। তাঁর পরামর্শে পুনরায় শেভরনে পরীক্ষা করে ফলাফল টিএসএইচ এসটিমেটেড ভ্যালু ৩.৪৪৯ µIU/mL ও এফটি৪ ০.৯২০ ng/dL পাওয়া যায়। টিএসএইচ নরমাল রেঞ্জ থাকে ০.৩৫০-৫.০০ µIU/mL ও এফটি৪ থাকে ০.৬৫-২.৩ ng/dL.

ভুক্তভোগীর স্বামী চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশে সহ-সম্পাদক পদে কর্মরত শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস-এ ৮শ টাকা ফি দিয়ে স্ত্রীর হরমোন টেস্ট করানোর পর তারা মনগড়া ফলাফল দেয়। এ রিপোর্ট দেখে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শেখ আনোয়ারুল করিম সন্দেহ প্রকাশ করে পুনরায় পরীক্ষা করাতে বলেন। শেভরনে ৪ জুলাই এই পরীক্ষা করিয়ে ভিন্ন ফলাফল পেয়েছি। পূর্বের ফলাফল অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হলে গর্ভস্থ ভ্রুণের ক্ষতি হয়ে যেতো বলেও জানান চিকিৎসক।

তিনি বলেন, সরকারি ল্যাবের অস্বাভাবিক রিপোর্ট পাওয়ার পর থেকে আমি, আমার স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই বেশ চিন্তিত ছিলাম। আমার স্ত্রীকে প্রতি তিনমাস পর পরই থাইরয়েড ও হরমোন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে টেস্ট করিয়ে একই চিকিৎসককে দেখাচ্ছি এবং তাঁর দেওয়া পরামর্শ মতো চিকিৎসা চলছে। সরকারি ল্যাবটিতে প্রতিবারই রক্ত নিতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে একাধিকবার সুঁই ফোটানো হয় যা অস্বস্তিদায়ক ও কষ্টকর। সরকারি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট যদি এমন হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চমেক হাসপাতাল পরিচালক বরাবরে অভিযোগ জানাতে বলেছেন সিভিল সার্জন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নারীদের থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। থাইরয়েড হরমোনের ওঠানামা নারীর সার্বিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা নিরূপন ও যথাযথ চিকিৎসা খুব জরুরি।

এ সমস্যার কারণে নারীদের মাসিকের জটিলতা, বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত ও গর্ভকালীন নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক সময় সমস্যাগুলো আগে থেকে বোঝা যায় না, কেবল প্রজননকালীন জটিলতার সময়ই ধরা পড়ে। গর্ভধারণ পরিকল্পনাকারিণী থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত কি না তা জানতে গর্ভধারণ পরিকল্পনার শুরুতেই স্ক্রিনিং টেস্ট করে নেওয়া ভালো। এতে হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম শনাক্ত হলে গর্ভধারণের আগেই ওষুধ সেবন করে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে হবে। হাইপোথাইরয়েডিজম হলে রক্তে এফটি৪ কমে যায় এবং টিএসএইচ বেড়ে যায়। এর বিপরীত হয় হাইপারথাইরয়েডিজ়মের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ভুল রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস এর পরিচালক ডা. আবু হায়াত মোহাম্মদ রকিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, টিএসএইচ এবং এফটি৪ রিপোর্টগুলোতে তেমন একটা ভুল আসে না। বিভিন্ন পদ্ধতিগত কারণে রিপোর্টে ভিন্নতা হতে পারে। আর যদি ভুলও হয় তাহলে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করতে ভুল হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনই শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। একটি টেস্ট করে কয়েকদিন পর আবারও পরীক্ষা করলে ফলাফলের তারতম্য হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, একই দিন দুইবার পরীক্ষা করলেও রিপোর্টে ভিন্নতা আসতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।