ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শুল্ক ফাঁকি দেয়া দুটি গাড়ি ফেরত দিলো বিশ্বব্যাংক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
শুল্ক ফাঁকি দেয়া দুটি গাড়ি ফেরত দিলো বিশ্বব্যাংক শুল্ক ফাঁকি দেয়া দুটি গাড়ি ফেরত দিলো বিশ্বব্যাংক

ঢাকা: শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ উঠায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস শুল্কমুক্ত সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগে দুইজন সাবেক কর্মকর্তার ব্যবহৃত দুইটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস থেকে দুইটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতরে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান।

মঈনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার সকালে বিশ্বব্যাংকের একজন কর্মকর্তা গাড়িগুলো হস্তান্তর করে।

গাড়ি দুটির মডেল হচ্ছে, টয়োটা আরএভি-ফোর এসইউভি এবং একটি সেডান। আর এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হলো, বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন। যদি তারা ফাঁকি না দেবেন, তাহলে কেন তারা গাড়িগুলো ফেরত দিলেন। এছাড়া গাড়ি দুইটির ব্যবহারকারী ছিলেন ফিনল্যান্ডের নাগরিক মিজ মির্ভা তুলিয়া এবং ভারতীয় মিজ মৃদুলা সিং।

অন্যদিকে, ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত মিজ মির্ভা তুলিয়া বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট হিসেবে এবং ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মিজ মৃদুলা সিং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে সিনিয়র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা বাংলাদেশে অবস্থানকালীন ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশে এই গাড়ি দুইটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ক্রয় করে বাংলাদেশে আনেন।

তিনি আরও বলেন, মিজ মির্ভা তুলিয়ার (কাস্টমস পাসবুক নম্বর ৭১/২০১১) ব্যবহৃত গাড়ির রেজি. এজেবি-০৭১, চেচিস নং-এসিএ৩৬-৫০১০৯৪৩, ইঞ্জিন নং-২এজেড-২৪৭৮৮৫৭, সিসি-২৪০০, মডেল-টয়োটা র‌্যাভ-৪, ইয়ার ২০০৬। এবং  মিজ মৃদুলা সিং (কাস্টমস পাসবুক নম্বর ৩৩/২০১৩) ব্যবহৃত গাড়ির রেজি. এজেবি-০০৯২, চেচিস নং-জেডজেডটি ২৪০, ইঞ্জিন নং-আইজেডজেড-২৮১২১৬৮, সিসি-১৭৯০, মডেল-টয়োটা প্রিমিও, ইয়ার ২০০৭।

এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, যেকোনো বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের কাজ শেষে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশে আনা গাড়িগুলো শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে জমা দিয়ে যাওয়ার কথা। পরবর্তীতে এই গাড়ি বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব কোষাগারে অর্থ জমা দেবে অধিদফতর।  কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ১৬ কর্মকর্তা কাজ শেষে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেও তাদের ব্যবহৃত গাড়িগুলো শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে জমা দেননি।

অপরদিকে, মিজ মির্ভা তুলিয়া গত বছরের ডিসেম্বরে এবং মিজ মৃদুলা সিং ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে তাদের অ্যাসাইমেন্ট শেষ করে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

শুল্ক গোয়েন্দার তথ্য মতে, আইনানুযায়ী তারা বাংলাদেশ ত্যাগের আগে তাদের ব্যবহৃত কাস্টমস পাসবুক ও তাদের ব্যবহৃত গাড়ি দুইটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে যাননি। বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিদেশি সংস্থায় কর্মরত প্রিভিলিজড পার্সনদের শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার সংক্রান্ত চলমান তদন্তের প্রয়োজনে শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতর থেকে বিশ্বব্যাংক বরাবর এ ধরনের ১৬টি গাড়ির তথ্য চেয়ে গত ১৫ জানুয়ারি একটি চিঠি দেয়া হয়। এবং চিঠির জবাব দিতে ১ সপ্তাহ সময় দেয়া হয়।  

এছাড়া এই পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ দফতর থেকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে উপস্থিত হয়ে তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

এই আলোচনার সূত্রে দেশে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান স্বাক্ষরিত পত্র মারফত বিশ্বব্যাংকের পক্ষে গাড়ি দুইটি সোমবার সকালে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।

বর্তমানে গাড়ি দুইটি শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতরের হেফাজতে রয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গাড়ি দুইটির বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এসজে/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।