তবে সেই বৃত্ত ভেঙে বিদেশি জাতের এ কমলালেবুর চাষ করা হচ্ছে দেশের মাটিতেই। যা গত কয়েকবছর আগেও দেশের কৃষকদের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো।
ওমর ফারুক খানের নেশাই ভিন্নজাতের ফসল উৎপাদন করা। ভিন্নধর্মী ফল ও সবজির সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে খুলনাতে বেড়াতে যান তিনি। সেখানে গিয়ে তার এক বন্ধুর বাড়ির আঙিনায় চায়না কমলার গাছ দেখতে পান তিনি। বিদেশি জাতের এ সুস্বাদু ফল উৎপাদন করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। ব্যাস! যেই ভাবনা সেই কাজ। খুলনা থেকেই কয়েকটি গাছের চারা সংগ্রহ করে আনেন তিনি। পরে সে চারা থেকে কলমের মাধ্যমে আরও চারা উৎপাদন করেন তিনি। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে শুরু করেন গাছের চারা রোপণের কাজ। নিজের পতিত একখণ্ড জমিতে প্রায় ১০০টি গাছের চারা রোপণ করেন এ কমলা চাষি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওমর ফারুককে। গাছ লাগানোর পরের বছর থেকেই ফল পেতে শুরু করেন তিনি। প্রথমবার আশানুরূপ ফলন না পেলেও তার পরের বছর থেকে ফলে ফলে ভরে ওঠে পুরো কমলার বাগান। এবছরও তার প্রত্যাশার তুলনায় ভালো ফল পেয়েছেন তিনি।
কথা হয় চয়না কমলা চাষি ওমর ফারুক খানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তিনি মূলত একজন মৌসুমি সবজি চাষি। আজ থেকে ৬/৭ বছর আগে অনেকটাই শখের বসে একটি ছোট্ট অনাবাদি জমিতে একটি নার্সারি শুরু করেন। সরকারের কৃষি বিভাগের কোনো প্রশিক্ষাণ-সহযোগিতায় ছাড়াই তিলে তিলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের বাণিজ্যিক নার্সারি ‘খান নার্সারি’। নিজের নেশা থেকে নতুন নতুন ফল উৎপাদন করার প্রচেষ্টায় এবার চায়না কমলার বাণিজ্যিক চাষ করেছেন তিনি। প্রচেষ্টা থেকে তা আজ বড় সফলতায় রূপ নিয়েছে। দেশের কোথাও একসঙ্গে এত বড় চায়না কমলার বাগান আর না থাকায় দেশের মধ্যে এটিই একমাত্র ও অন্যতম চায়না কমলার বাগান বলে দাবি তার।
তিনি আরও বলেন, কমলা চাষে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। একটি গাছে গতবছর গড়ে ৫০-৫৫ কেজি কমলা ধরেছিল। ১০০-১২০ টাকা দরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা বাগানে এসে কিনে নিয়ে গেছেন। তাতে একটি গাছে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার কমলালেবু বিক্রি হয়েছে। তবে, এবছর এখনো কমলা বিক্রির উপযোগী হয়নি। আর কিছুদিন পর থেকে বিক্রি শুরু করবেন বলে আশা তার। ওমর ফারুক খান মনে করেন, বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বড় চায়না কমলার বাগান। তাই এ জাতের কমলার নামের আগে চায়না শব্দ ব্যবহার না করে বাংলা কমলা বলে আখ্যা দেন তিনি।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটা গাছে ঝুলে রয়েছে সবুজ ও হলুদ বর্ণের চায়না কমলা। সুস্বাদু এ ফলের ভারে নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা প্রতিটি গাছের ডালগুলো। সুবজ পাতার মধ্যে হলুদ ফলের উঁকি যে কারো দৃষ্টি কাড়ে নিঃসন্দেহে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে উৎসুক লোকজন। বাগান দেখে মুগ্ধতার শ্বাস ফেলছেন তারা।
কমলার বাগান দেখতে আসা লতিফ মোল্লা নামে একজন বাংলানিউজকে জানান, তিনি প্রায়ই ভিন্নধর্মী এরকম জাতের বাগান পরিদর্শন করে থাকেন। দেশের আর কোথাও এমন বাণিজ্যিকভাবে এত বড় কমলার বাগান দেখেননি তিনি। বাগান দেখে অভিভূত ভাব প্রকাশ করেন তিনি। স্থানীয় গ্রামবাসী জালাল উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, বাগানে উৎসুক জনতার পাশাপাশি ফল উৎপাদনকারীরাও ভির জমায়। তারাও এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে নিয়ে তা রোপণ করছে। এভাবে যদি বিদেশি ফল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। তবে, দেশের মানুষকে আর আমদানি নির্ভর থাকতে হবে না। ওমর ফারুকের বাগানে শুধু চায়না কমলাই নয় বিভিন্ন বিদেশি ও ভিন্নজাতের ফলের আবাদ করা হয়। চায়না কমলার পাশাপাশি ড্রাগন, কাশ্মিরী আপেল কুল, মাল্টা ও থাই পেয়ারার মতো ফলের চাষ হচ্ছে তার জমিতে। জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, কৃষি বিভাগ সবসময়ই এ ধরনের ভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদনে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। ওমর ফারুকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই চায়না কমলা বাগান শুরু থেকেই তাকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার কৃষকও এভাবে ভিন্ন জাতের লাভজনক ফসল ফলানোর জন্য নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এএটি