অপরদিকে চাষিদের ভুলের কারণেই ক্ষেতে মড়ক রোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। একই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ কমলে আলুর গাছের মড়ক রোগ কমবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
শস্যের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর জেলা। এ জেলায় ধান, গম, ভুট্টাসহ সব ধরনের শাক-সবজি চাষ করা হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলায়ও সরবরাহ করা হয় এ জেলায় উৎপাদিত পণ্য। ইতোমধ্যে বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি বিক্রি করতে হয়েছে অনেক কৃষককে। চলতি আমন মৌসুম বাজারে কৃষকরা ধানের মূল্য কিছুটা পেলেও এবার আলু রোপণ করে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। চলতি শীত মৌসুমে টানা কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে ক্ষেতে আলুর গাছে মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে।
জেলার অধিকাংশ আলুর ক্ষেতে মড়ক রোগ দেখা দেওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আলু চাষিরা। প্রথমদিকে আগাম আলু চাষ করে দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা লাভবান হয়েছিল। সেই আশায় একই ক্ষেতে ও আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে আলু রোপণ করেছেন। কিন্তু তাদের আশা এখন ফিকে যেতে বসেছে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাঝাডাঙ্গা গ্রামের আলু চাষি মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বোরো ধান আবাদ করে আমরা খুবই লোকশানের মুখে পড়েছিলাম। এবার আমন ধান উৎপাদন করে সামান্য লাভ হলেও আলু রোপণ করায় লাভের থেকে এখন লোকশানই হবে বেশি। আমরা যখন আমন ধান আবাদ করছিলাম সেই সময় আমাদের এলাকার কিছু কৃষক আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভ করেছিলেন। প্রথমদিকে বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছিল। ফলে তাদের লাভ দেখে পরবর্তী জাতের আলু আবাদ করতে গিয়ে লোকসানের বোঝা মাথায় নিতে যাচ্ছি আমরা। কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহের তীব্র শীতের কারণে আলু ক্ষেতে মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগের কারণে ক্ষেতে আলুর নতুন চারাগাছ মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানেরই শিকার হবো আমরা।
তিনি আরও বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের যেভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলেছেন, আমরা সেভাবেই করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আলু মৌসুমে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বেশি উৎপাদন হয়েছিল। চলতি আলু মৌসুমে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ইতিমধ্যে আগাম জাতের আলু উৎপাদন করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর দিনাজপুরে আলুর মড়ক রোগ দেখা দেয়। শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ রোগটি হয়। কিন্তু এ বছর মড়ক রোগের পরিমাণ একটু বেশি। এর জন্য সরাসরি কৃষকরা দায়ী। শৈত্যপ্রবাহ যেসময় কম থাকে সেই সময় আলুর আবাদ করতে একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা বেশি লাভের আশায় দেরি করে আলুর চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতার অনেক অভাব রয়েছে। তাদের পরিমাণ মতো কীটনাশক দিতে বলা হলেও তারা অতিরিক্ত মাত্রায় তা প্রয়োগ করছেন। শৈত্যপ্রবাহের সময় পরিমাণ মতো কীটনাশক দিলে আলু গাছের মড়ক রোগের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে লেট ব্রাইট (মড়ক রোগ) রোগ যেসব আলুর জাতের গাছে দেখা দেয়, সে সব আলু আগেই আবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২০
এসআরএস