ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে একাডেমিক ফলাফলের শ্রেষ্ঠত্বে এগিয়ে ছাত্রীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
রাবিতে একাডেমিক ফলাফলের শ্রেষ্ঠত্বে এগিয়ে ছাত্রীরা রাবির ছাত্রীরা।

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) একাডেমিক ফলাফলে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা ও নতুন বিভাগগুলোর সর্বশেষ পরীক্ষা মিলিয়ে মোট ৩৪টি বিভাগে ছাত্রীরা প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। এর মধ্যে ১৮টি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান ছাত্রীদের দখলে।

বাকি বিভাগগুলোতে ছাত্ররা প্রথম হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন ছাত্রীরাই। শুধু স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় নয়, বিভাগের অন্য বর্ষের ফলাফলেও ছাত্রীরা শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

এমনকি সব বিভাগের ফলাফলে শীর্ষ ১০ জনের অন্তত ৫ জনই ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার তথ্য মতে, চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৫ হাজার ৫৭৯ জন ও ছাত্রী ১২ হাজার ৫৫১ জন।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি বিভাগের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫৩টি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা ও নতুন ৫টি বিভাগের সর্বশেষ পরীক্ষার ফল মিলিয়ে ৩৪টি বিভাগে ছাত্রীরা প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ২৪টি বিভাগে ছাত্ররা প্রথম হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান ছাত্রীদের দখলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলা অনুষদের ১২টি বিভাগের ৮টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র, আইন অনুষদের ২টি বিভাগের একটিতে ছাত্রী ও অন্যটিতে ছাত্র, বিজ্ঞান অনুষদের ৯টি বিভাগের ৫টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৫টি বিভাগের ৪টিতে ছাত্রী ও অন্যটিতে ছাত্র, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১০টি বিভাগের ৬টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ৭টি বিভাগের ৪টিতে ছাত্রী ও ৩টিতে ছাত্র, কৃষি অনুষদের ৪টি বিভাগের ২টিতে ছাত্রী ও ২টিতে ছাত্র, প্রকৌশল অনুষদের ৬টি বিভাগের ২টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র এবং চারুকলা অনুষদের ৩টি বিভাগের ২টিতে ছাত্রী ও অন্যটিতে ছাত্র প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

শুধু স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলে নয়, বিভাগের অন্য বর্ষের ফলাফলেও (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ) ছাত্রীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি, কোনো কোনো বিভাগে ছাত্রীদের ফল অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একছাত্রী বিভাগের ৬৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফল অর্জন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, ছাত্রীরা তুলনামূলকভাবে ছাত্রদের চেয়ে পড়ালেখায় অধিক পরিশ্রমী ও অধ্যাবসায়ী। মেয়েরা স্বভাবসুলভ গোছালো এবং সৃজনশীল হয়। যে সময়টুকু ছাত্ররা অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করে, ছাত্রীরা সে সময়টুকুতে পড়ালেখা করে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশও নিশ্চিত করেছে। এসব কারণে তারা একাডেমিক ফলে এগিয়ে যাচ্ছেন। শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রে নয়, সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। কর্মজীবনেও ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ফৌজিয়া এদিব ফ্লোরা বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রীদের ভালো ফলাফলের পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। তারা পড়ালেখায় ছাত্রদের তুলনায় বেশি মনোযোগী। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে নই, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায়ও ছাত্রীরা ভালো করছেন। বিভাগগুলোতে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের সংখ্যা অনেকক্ষেত্রে ছাত্রদের তুলনায় বেশি। ছাত্রীরা স্বভাবতই গোছালো। তারা একাডেমিক বই-নোটসহ অন্যান্য বিষয়ের যত্নশীল। তাছাড়া তাদের অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করার সুযোগ কম। ফলে স্বাভাবিকভাবে একাডেমিক ফলাফলেও ইতিবাচক পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ফলাফল বেশ ঈর্ষণীয়। কেবল পাঠ্যপুস্তকে নয় তারা গবেষণাগারে কাজ করার ক্ষেত্রেও মনোযোগী। ভালো রেজাল্টের পেছনে রয়েছে তাদের শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা। সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছাত্রীদের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। ফলে তারা অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট না করে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্রীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও উৎসাহ দিচ্ছে ছাত্রীদের পড়ালেখায় আগ্রহী হওয়ার এটিও একটি কারণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।