শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন ফলাফল স্থগিত থাকা পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। যদিও এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস।
প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মাহবুব আলম বলেন, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই এইচএসসি (সেশন ২০১৭-১৮) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমাদের ১৮ জন সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে যা এখনো পাইনি। এজন্য ফলাফল প্রকাশের আবেদন জানিয়ে গত ১৮ জুলাই বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন জানাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জুলাই বোর্ডের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ১৮ পরীক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশের বিষয়ে আশ্বাস দেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আযিম। কিন্তু সভা পরবর্তী ২৫ জুলাই বোর্ডের ওয়েবসাইটে ১৮ শিক্ষার্থীর ফলাফল পূর্বের ন্যায় স্থগিত (উইথেলড) দেখা যায়। এজন্য পুনরায় বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়।
এদিকে ১৮ শিক্ষার্থীর উচ্চতর গণিত পরীক্ষায় একই ফলাফল আসায় বিষয়টি নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এমনকি এ বিষয়ে প্রধান পরীক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম বোর্ডে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। যেখানে গত ৫ আগস্ট ১৮ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে, ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বোর্ড চেয়ারম্যান, বোর্ড সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উচ্চতর গণিত প্রথম পত্রে তারা ১৮ জন পরীক্ষার্থী কেন অধিকতর নম্বর পেলো, কীভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবং বোর্ড সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ অস্বীকার করলে তাদেরকে বোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি এবং হুমকি দেয়। এমনকি তারা জোর করেই বোর্ডের অফিস সহকারী গবিন্দ’র নাম বলতে বাধ্য করেন। তা না করলে ১৮ শিক্ষার্থীর ফলাফল বাতিল করার হুমকি দেয়।
শুধু তাই নয়, ফলাফল স্থগিত থাকা নুসরাত কবির নামের বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে চেয়ারম্যানের বিশেষ কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়। এমনকি ওই ছাত্রীকে অফিস সহকারী গবিন্দ’র বিরুদ্ধে অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতা করার বিষয়ে জোরপূর্বক লিখিত নেওয়া হয়। তাছাড়া সর্বশেষ ৮ আগস্ট স্থগিত রাখা ফলাফল প্রকাশের কথা থাকলেও এখনো তা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, অভিভাকরা সংবাদ সম্মেলন এমনকি চাইলে আইনি সহায়তাও নিতে পারেন। কিন্তু আমরাও বোর্ডের নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। যে ১৮ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা গুরুতর। তারা অসদুপায়ের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, ওই ১৮ জন পরীক্ষার্থী বরিশাল বিভাগের ১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিলেও তাদের খাতা একজন পরীক্ষকের হাতে পৌঁছেছে। এটা বোর্ডের কারোর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না। আবার উচ্চতর গণিতে পরীক্ষার্থীরা যে অংক করেছেন তার মধ্যে একটি অংক এক ছাত্রীকে পুনরায় করতে দিলে তাও সে পারেনি।
শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, এটি স্রেফ গুজব। মূলত এখন ষড়যন্ত্র চলছে। ১৮ শিক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার চক্রের সদস্য বোর্ডের অফিস সহকারী গবিন্দকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৯
এমএস/এইচএডি