অর্থাভাবে ১৫ ভাগ শুটিং বাকি থাকতেই 'নৃ'র নির্মাণ প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলানিউজ বিনোদন বিভাগে একটি খবরও প্রকাশ করা হয়েছিলো।
নৃ’র বাকি অংশের শুটিং শুরু কবে থেকে আর কাজটা কিভাবে শেষ করবেন...
নৃ’র ডাবিং হয় নাই, সাউন্ড স্কোর হয়নি। তাই টিজার করার ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু অর্থ সংকটে পড়ার কারণে আমরা টিজারটি তৈরি করে ইউটিউবে ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আর টিজারটি প্রচার হওয়ার পর থেকেই আমরা চারদিক থেকে সাড়া পেয়েছি। অনেক চলচ্চিত্রপ্রেমী এটিকে পছন্দের কথা জানিয়েছেন, পরামর্শ, উপদেশ দিয়েছেন।
কোথা থেকে ফান্ড সংগ্রহ করতে পারবো, বিদেশের কোন ওয়েব সাইটটিতে যোগাযোগ করবো- এই সব। কিন্তু আসলে এই ধরনের সহযোগিতা আমাদের নৃ’র জন্য দরকার হয় নাই। শেষ পযর্ন্ত আমরা নৃ'র ৪৫ ভাগ কাজের পর যার সহযোগিতায় ৮৫ কাজ শেষ করতে পেরেছিলাম, সেই প্রবাসী ডাক্তার ডা. আরিফুর রহমানই আবার তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই আশা করছি সামনের মাসেই আমরা নৃ’র বাকি অংশের শুটিং শুরু করতে পারবো।
চলচ্চিত্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মূল কারণ কী ছিল?
বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমাদের প্রোডাকশন খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হরতালের সময়গুলোতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে হয়েছে বিশাল শুটিং ইউনিট নিয়ে। এছাড়া আরো কিছু কারণে চলচ্চিত্রের ১৫ ভাগ কাজ বাকি থাকতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই কাজ ফেলে রেখে আমাদের ঢাকা চলে আসতে হয়েছিল। বরিশালের বিভিন্ন লোকেশনে নৃ’র চিত্র ধারণ করা হয়েছিল।
আর কত দিন শুটিং করতে সময় লাগবে?
বাকি এই ১৫ ভাগ শুটিং এর জন্য আমরা ১৫ দিন শ্যূট করতে চাই। যদিও আমাদের ৮৫ ভাগ শুটিং আমরা ৩০ দিনে করেছি । এবারও সেই ধরণের বৈরী সময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হতে পারে। তাই সব রকম সমস্যার কথা মাথায় রেখেই এবার এগুচ্ছি। তাছাড়া আমরা ফিল্মটাকে একটু কঠিন করে তুলতে চাই। খরখরে শুকনো পাতা, পোকা-মাকড়ের হাটা-চলা, বিভিন্ন ধরনের লাইটিংসহ বেশকিছু এক্সপেরিমেন্টাল বিউটিফিকেশনের কাজ বাকি আছে। তাই সব মিলিয়ে আসলে আরো মাসখানেকের একটা জার্নি করবো।
একটা বিরতি হয়ে যাওয়ায় নতুন কোন সমস্যা তৈরি হবে না?
সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব সময়ই আসলে সমস্যার সম্ভাবনা আছে। কারণ আমাদের যে প্রধান চরিত্র সে একটি বাচ্চা ছেলে। সে বড় হয়ে যাচেছ। এমনিতেই সে অনেক বড় হয়ে গেছে। কারণ দেড় বছর আমরা তাকে বসিয়ে রেখেছি। যদি এবারও আমরা শেষ করতে না পারি, তবে আমাদের সিনেমাটা একটা বড় ধরনের ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা আছে। যারা বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেছে, তারা সবাই এই ধরনের সমস্যায় পড়েছে।
চলচ্চিত্রটি কি দেশের বাইরে পাঠানোর ইচ্ছে আছে?
আমাদের দেশীয় সব কিছুর ছাপ এই সিনেমায় থাকবে। আশা করছি সব ধরণের দর্শকের জন্যই এটি উপভোগ্য হবে। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ভাষা ও নন্দনতত্ব এতে যোগ হয়েছে। আমাদের দেশেও যে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র তৈরি করা সম্ভব তা এই সিনেমা দেখলে বোঝা যাবে। আর বিদেশের কিছু ফেস্টিভ্যালে এটি পাঠানোর ইচ্ছা আছে।
কিছু সিনেমা তৈরি-ই হয় শুধু পাবলিক লাইব্রেরী, সিনেপ্লেক্স আর ফেস্টিভ্যালে চালানোর জন্য। নৃ-কে নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?
আমাদের সব হলগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পরিবার নিয়ে এখন আর কেউ হলে যায় না। আমাদের চ্যানেলগুলো পরিবর্তন করে দর্শক বিদেশি চ্যানেল দেখে। আমরা দর্শক ধরে রাখতে পারছি না। নৃ’ হচ্ছে একটি সামাজিক চলচ্চিত্র। তাই সবাই মিলে পরিবার নিয়ে এই সিনেমা দেখতে যাবে। আমরা গল্পটা শব্দে, ছবিতে এমনকি এনিমেশন দিয়ে আধুনিক সিনেমার ভাষা ব্যবহার করে বানিয়েছি।
আমাদের গল্পটা যদিও ৮০’র দশকের, কিন্তু এটি তৈরি করেছি একদম বর্তমানের সেরা প্রযুক্তি ও সেরা ক্যামেরা ওয়ার্ক দিয়ে। ইলেক্ট্রিক ক্রেন থেকে শুরু করে সব আধুনিক যন্ত্রাংশই ব্যবহার করেছি। শিল্প মূল্যে যদি কিছু তৈরি করা হয় তাহলে তা বাণিজ্যিক ভাবেও সফল হবে, আমরা সেরকমটাই আশা করছি।
আমাদের সাধারণ দর্শকতো আসলে আর্ট বোঝে না, তারা বোঝে গল্প, ভালো অভিনয়, তাহলে আপনি কিভাবে আশা করছেন তারা এই আর্ট ফিল্ম দেখবে?
আসলে কোন চলচ্চিত্রই তো আর্ট ছাড়া তৈরি করা সম্ভব না। সব সিনেমাই আর্ট। তবে গ্রামের লোকজন এই সব আর্ট বুঝে না আর আর্ট দেখতেও তারা হলে যাবে না। একজন রিক্সাওয়ালাকে যদি উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শুনতে বলা হয় সে ক্যাসেট প্লেয়ার ভেঙে ফেলতে পারে। তাই আমরা সিনেমাটিতে খুব সুচতুরভাবে কোন আঞ্চলিক সংলাপ ব্যবহার না করে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করেছি, কিছুটা থিয়েটারের স্টাইলে সংলাপ সাজিয়েছি। যাতে দর্শক খুব সহজেই সংলাপের মাধ্যমে গল্পে ঢুকে যেতে পারেন। তাই এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা সামাজিক সিনেমা।
যেভাবে গ্রাম বাংলার মানুষ বাংলা সিনেমায় দেখতে চায় এবং যে ভঙ্গিতে তারা ডায়লগ শুনতে চায়, সেভাবেই বিন্যাস করেছি। শ্রমিক, কৃষক, মজুরসহ সব ধরণের দর্শকই যাতে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন সেই চেষ্টাই করছি। আর তাই এই অঞ্চলের সার্বজনীন ভাষাই আসলে আন্তর্জাতিক ভাষার জন্য সহায়ক হয়ে উঠবে। এটি আসলে আর্ট ফিল্ম না, আর্ট নির্ভর ফিল্ম। আর্টের সব ধারাই এখানে যুক্ত হয়েছে।
আপনার এই ফিল্মে কারা কাজ করছেন?
এই ফিল্মে প্রায় ৪০ জনের মতো একটি টিম কাজ করছে। এর মধ্যে দু’একজন ব্যতিত কাউকেই মানুষ তেমন চেনে না। এই সিনেমার সম্পাদনা করছে সামির আহমেদ, যে কিনা বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে। সবার কারণেই আসলে এই ফিল্ম বানানো সম্ভব হচ্ছে। তারা সবাই পরিচিত না হলেও যোগ্যতার মাপকাঠিতে কাজের প্রতি অথবা এই বিষয় অথবা এই সিনেমার প্রতি তাদের যে মায়া-ভালবাসা রয়েছে, এটাই আমাদের বড় শক্তি, এটাই সবার বড় যোগ্যতা। এছাড়া মিডিয়া আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। তারা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে এগিয়ে এসেছে। এইভাবে সবার সহযোগিতা থাকলে আশা করি সুন্দরভাবেই সব শেষ হবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমায় আমাদের দেশের প্রযোজকের বিষয়টা যদি বলেন?
এশিয়ায় কোরিয়ানরা অনেকগুলো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করে। তারা বিভিন্নভাবে ফিল্ম মেকারদেরকে ফান্ড দেয়। নতুন ফিল্মকে তারা প্রমোট করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা দেখলাম অনেক দেশেই নাচ, গান, চিত্র যে কোন বিষয়ে ফান্ডের ব্যবস্থা আছে। অথচ আমাদের দেশে কোন ফান্ডিং ব্যবস্থা নাই। এই দেশেও ফান্ড আসে তবে তা কোথায় যায় তা আমরা জানি না। যদিও সরকারি অনুদানে কিছু ফান্ডের ব্যবস্থা আছে কিন্তু তা খুবই সামান্য। সরকারিভাবে বলা হয়েছে চলচ্চিত্রকে শিল্প আকারে আসার কারণে ব্যাংকগুলো লোন দেবে। কিন্তু তারা তো কোন নতুন মানুষকে দিবে না। তারা ব্যবসার জন্য দিবে প্রতিষ্ঠিত কোন প্রতিষ্ঠানকে।
ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যপারে আপনি কি ভাবছেন? যেহেতু এটি একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম...
ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যপারে আমাদের একটু আলাদা ভাবনা আছে। তবে এই মূহূর্তে এই বিষয়ে কিছু জানাতে চাচ্ছি না। ছবিটি শেষ হোক, তখন এই বিষয়ে কথা বলবো।
আপনাকে ধন্যবাদ
বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪