ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

তর্ক তাদের বল নিয়ে, দল নিয়ে

কামরুজ্জামান মিলু / খায়রুল বাসার নির্ঝর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪
তর্ক তাদের বল নিয়ে, দল নিয়ে ছবি: নূর - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১২ জুন থেকে টানা এক মাস গোটা বিশ্বব্যাপী চলবে ফুটবল উন্মাদনা। পায়ে ফুটবল, গায়ে প্রিয় দলের জার্সি আর মুখে তর্ক।

অপরপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা। আড্ডা, খাবার টেবিল, নেট দুনিয়া, ফেসবুক স্ট্যাটাস সব জায়গায় আলোচনার বিষয়বস্তু কিন্তু একটাই। আর তা হলো ব্রাজিল বিশ্বকাপ। আমাদের চলচ্চিত্র, টিভি নাটক ও সঙ্গীতের শিল্পীদেরও রয়েছে প্রিয় দল, খেলা দেখা নিয়ে মজার গল্প। তারা কি ভাবছেন এবারের বিশ্বকাপ আসর নিয়ে। এসব জানাতেই বাংলানিউজের বিনোদন বিভাগ আয়োজন করেছিল এক আড্ডার। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে ১৫জন তারকা সেসব গল্পই বলে গেলেন।
 
চলচ্চিত্র অভিনেতা নিরব বাসা থেকে জার্সি পরেই এসেছেন। ইদানিং এই জার্সিতেই তিনি টিভি অনুষ্ঠান, আড্ডা- সব সেরে নিচ্ছেন। বিশ্বকাপে নিরব আর্জেন্টিনা সমর্থক। শুধু সমর্থক বললে ভুল হবে, ক্রেজি সমর্থক বলতে যা বোঝায় তিনি তাই। ফটোশুটের বেশ আগে এসে অন্যান্যদের সঙ্গে আড্ডা জুড়ে দিলেন। আড্ডায় তার মতো আর্জেন্টিনা সমর্থক যেমন আছে, তেমনি আছে ব্রাজিল, জার্মানী এবং স্পেন। আলাপ তাই জমে গেলো মুহূর্তেই।

আর্জেন্টিনার প্রতি নিরবের টান বেড়েছে তার মাকে দেখেই। ছোটবেলায় নিরব ফুটবল খেলতেন। তখন মা তাকে আর্জেন্টিনার জার্সি কিনে দিয়েছিলেন। সে সব স্মৃতি এখনো দোলা দেয় তাকে। প্রিয় দল হারায় গত বিশ্বকাপে খেলা দেখাই নাকি বন্ধ করে দিয়েছিলেন নিরব! বললেন, ‘প্রিয় দল নিয়ে এবার আমি অনেক আশাবাদী। কারণ, চার বছর আগের মেসি আর বর্তমানের মেসির মধ্যে পার্থক্য অনেক। আর্জেন্টিনার খেলা ঘুরিয়ে দিতে তিনি একাই যথেষ্ট। ’
Tarar_Phool_01
নিরবের কথা শেষ না হতেই অভিনেত্রী সিমলা হাজির হলেন। সবাই উৎসাহী দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে। তার সমর্থন কোন দলের দিকে? ‘স্পেন’। কোন রকম ভনিতা না করে বলে দিলেন সিমলা। যুক্তিও দিলেন, ‘বিশ্বকাপে একটা দলকে সমর্থন দিতে হবে, এ কারণে না। স্পেন করি অন্য কারণে। ছোটবেলা থেকে তাদের খেলা আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয় স্পেনই ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ দল। ’ সিমলা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আরেক অভিনেত্রী অমৃতাকে দেখে কথা থেমে গেলো তার। চোখ মুখে ফুটে উঠলো উজ্জ¦ল হাসি। অমৃতাও যে স্পেনের জার্সি পরে এসেছেন!

বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে জার্সিটি কিনেছেন অমৃতা। জানালেন, ‘একটি বিশাল আকৃতির টিভিও কেনার প্রস্তুতি চলছে। ছোটপর্দায় খেলা দেখে কি আর মজা আছে! এক বস্তা পপকর্নও নাকি কিনে রেখেছেন? অমৃতা হেসে বললেন, ‘এক বস্তা না। অনেকগুলো পপকর্নের প্যাকেট মজুদ রেখে দিয়েছি। খেলা দেখার সময় পপকর্ন তো লাগবেই। ’ গত বিশ্বকাপের সময় বন্ধুদের বাসায় বসে খেলা দেখেছেন। এবার বাসায়ই জোরসে আয়োজন চলছে। তার ইতালি সমর্থক মা নাকি ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপে যার দল জিতবে তাকে স্পেশাল গিফট দেয়া হবে। আরো একটি কথা বললেন অমৃতা। স্পেনের স্ট্রাইকার ডেভিড ভিলাকে নাকি ভালো লাগে তার। এমন ছেলে পেলে তিনি এখনই বিয়ে করতে রাজি!

ফটোশুট শুরুর খানিক আগে আসলেন নাঈম। সুবিধামতো জায়গায় গাড়ি পার্ক করেই গায়ে চড়ালেন সাদা রঙের জার্সি। বিশ্বকাপে তিনি জার্মানীর সমর্থক। জোর গলায় বলতে লাগলেন, ‘বিশ্বকাপের ট্রফিটা ধুয়ে মুছে বাসায় রেখে এসেছি। সময় করে বাসায় গিয়ে দেখো এসো। এবারে তো আমরা জিতেই গেছি। সৌজন্যতা দেখানো দরকার, তাই খেলছি আর কি!’ এ কথা খুব গায়ে লাগলো কল্যাণের। তিনি এসেছেন বেশ আগে। বাসা থেকে আর্জেন্টিনার জার্সি পরেই এসেছেন তিনি। নাঈমকে খোঁচা দেয়ার স্বরে বললেন, ‘ওসব কথায় এবার চিড়ে ভিজবে না। আর্জেন্টিনার কাপ এবার কেউ নিতেই পারবে না। কথা যতই হোক, চ্যাম্পিয়ন আমরাই। ’
Tarar_phool_06
পাশ থেকে কল্যাণকে সমর্থন দিলেন সাঈদ বাবু এবং সাব্বির আহমেদ। তিনজন আর্জেন্টিনা সমর্থকের ভিড়ে খানিকটা কোনঠাসা নাঈম। তবুও হাল ছাড়লেন না। যুক্তি দেখাতে লাগলেন। কল্যাণ, সাঈদ বাবু এবং সাব্বির আহমেদেরও পাল্টা যুক্তি। হাসি ঠাট্টায় এ আড্ডা বেশ দীর্ঘ হলো। পাশে বসে টিভি নাটকের আরেক পরিচিত মুখ নওশাবা এদের ঝগড়া উপভোগ করছেন। তিনি কোন দলের জার্সি পরেননি। চারপাশে একটা রহস্য ঘিরে শুধু মুচকি হেসেই যাচ্ছেন। চারজনই এবার দারস্থ হলেন নওশাবার। তিনি কোন দলের জার্সিই পরতে চাননি। ফটোশুটেও হাজির হয়েছেন সাধারণ ড্রেস পরেই। সবার তাই একটাই প্রশ্ন, নওশাবা কোন দলের সমর্থক? উত্তরে এক অদ্ভুত কথা জানালেন তিনি, ‘আমি আসলে কোন দলকেই সমর্থন করি না, আবার সব দলকেই সমর্থন করি। বাসায় একসঙ্গে খেলা দেখতে বসলে, সবাই যে দল সমর্থন করে, আমি করি তাদের উল্টোটা। বলতে পারেন আমি মীর জাফর। ’ কথা শেষ করেই হাসলেন এ অভিনেত্রী।

সাদা রঙের জার্সি পরে তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন অভিনেতা তানভীর। নাঈমের মতো তিনিও জার্মানীর সমর্থক। তানভীরকে দেখে সাহস পেলেন নাঈম। গলার জোর আরো খানিকটা বাড়লো তার।

আর্জেন্টিনার কড়া সমর্থক কল্যাণ। তার ভাষায়, ‘জন্ম থেকেই আমি আর্জেন্টিনার’। গত বছর এটা নিয়ে ব্রাজিল সমর্থকদের সঙ্গে একদফা মারামারির স্মৃতিও আছে তার! বললেন, ‘কয়েকজন ব্রাজিল সমর্থককে নিয়ে এক সঙ্গে খেলা দেখছি। আর্জেন্টিনার চার গোল খেয়ে গেল। ওদের সে কি আনন্দ! আমাকে কথা শুনিয়ে দিলো। আমিও কম যাই কেন? মারামারি করে লাল হয়ে গিয়েছিলাম। ’ তবে এসব মধুর ঝগড়া! সবাই জানে, এটা হয়েই থাকে। খেলা শেষ, আবার দোস্তি জমজমাট। শুটিং থাকলে কল্যাণ শুটিং স্পটে বসেই খেলা দেখেন। আর শুটিং না থাকলে বন্ধুর বাসায়, অথবা মহল্লার মোড়ে। ’ এবারও সেটাই হবে বলে জানালেন তিনি।
Tarar_Phool_03
আর নাঈম বললেন, ‘সেহেরী খেয়ে খেলা শেষ করেই তবে শুটিংয়ে যাবো। না ঘুমালে একটু সমস্যা হবে। কিন্তু কি করা? খেলা মিস করা যাবে না। ’ গত বিশ্বকাপে তিনি আবার এত ‘ক্রেজি’ ছিলেন না। বললেন সে কথাও, ‘গত বার। বাসায় তিন জন মিলে খেলা দেখতাম। একজন ব্রাজিল, আরেকজন আর্জেন্টিনার সমর্থক। আর আমি ছিলাম বিশ্লেষক। একটু ঘুমাতাম, একটু খেলা দেখতাম। ঘুম থেকে উঠে চলতো বিশ্লেষণ। ’

অভিনেতা সাঈদ বাবু আবার কয়েক ধাপ এগিয়ে। যেদিন আর্জেন্টিনার খেলা থাকে, সেদিন শুটিং স্পটে সবাইকে আর্জেন্টিনার জার্সি গিফট করেন তিনি। বিরোধী পক্ষকে খোঁচা দিয়ে ঘায়েল করতেও তিনি ওস্তাদ! বললেন, ‘গতবার যখন ব্রাজিল হারলো, খুঁজে খুঁজে পরিচিত সকল পরিচিত ব্রাজিল সমর্থকদের বাসায় গিয়ে খোঁচা দিয়ে এসেছি। ’

আর্জেন্টিনার সমর্থক হিসেবে অভিনেতা সাব্বির আহমেদ বেশ নিরীহ। কথা বলেন খুব কম। আগে বিরোধী পক্ষের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে যান, তারপর আস্তে ধীরে পাল্টা যুক্তি দেন। সেদিন এমনিতেই তার হাতে সময় একেবারেই কম। জরুরি কাজ ফেলে ফটোশুটের জন্য এসেছেন। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এক সঙ্গে ছবি তুলে, অল্প কিছুক্ষণ বসে তিনি চম্পট দিলেন। যাওয়ার আগে বললেন, ‘আর্জেন্টিনার কড়া সমর্থক বলতে যা বোঝায় আমি তাই। এ দলের খেলা ভালো লাগে, তাই সমর্থন করি। যুক্তি তর্ক বুঝি না। চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু করেছি, প্রচুর কাজ থাকবে। কিন্তু খেলা দেখা মিস নেই। ’
Tarar_Phool_04
আরেফিন রুমিকে দেখে এক প্রকার হই হই করে উঠলেন লিজা-কর্নিয়া-পূজা-ইমরান ও নওমী। ইমরান, কর্নিয়া ও লিজাই অন্যদের চেয়ে বেশি খুশি। কারণ? রুমির গায়েও তাদের প্রিয় দলের পোশাক। আরেফিন রুমির চোখে সেরা ফুটবলার মেসি। আর সেরা দল আর্জেন্টিনা তো অবশ্যই।


এ নিয়ে আড্ডায়, বাসায়, স্টুডিওতে হাসি মুখে প্রচুর তর্কও করছেন। ভাল লাগছে তর্ক করতে। বললেন, ‘আর্জেন্টিনাই এবার ট্রফি ঘরে আনবে, এটা কনফার্ম। এখন শুধু অপেক্ষায় আছি, কবে খেলা শুরু হবে। কাজ কর্ম বন্ধ। শুধু খেলা দেখা চলবে। ’ রুমির কথা শেষ হতেই হাত তালি দিয়ে উঠলেন ইমরান।

গানের ছেলে ইমরান ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনার ভক্ত। আর এবার ফুটবল খেলা নিয়ে মাহবুবুল এ খালিদের লেখা ‘বিশ্বকাপে বিশ্বমাতে’ শিরোনামের একটি গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ফুটবল খেলা দেখা নিয়ে রয়েছে তার বিরাট প্ল্যান। ইমরান বলেন, ‘আমি আমার পরিবার সবাই আর্জেন্টিনার সমর্থক। তাই খেলা দেখতে বসেও একসঙ্গে হাসি একসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করি। হারুক বা জিতুক আমি ফুটবল খেলা মিস করতে চাই না। আর আর্জেন্টিনার কিছু ম্যাচ বন্ধু বান্ধবের বাসায়ও দেখার ইচ্ছে আছে।

তার কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে তরুণ সঙ্গীতশিল্পী পুজা বলে উঠলো, ‘আর্জেন্টিনার জার্সি দেখলেই কেমন যেন লাগে। আমরা [পুজা-নাওমি] দু’জনেই ব্রাজিল। আর একসাথে খেলা দেখারও পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা জানি, ব্রাজিল ইস দ্য বেস্ট। ’

পুজার কথা শেষ না হতেই নাওমি বললেন, ‘ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা অনেক পরিশ্রম করে খেলে। আমি তো লড়াইটা দেখতে চাই। আমার মনে হয় আর্জেন্টিনা না, ব্রাজিলই শেষমেষ টিকে থাকবে। আর আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্বকাপ নিয়ে তা প্রমাণ দিয়েছি। ’
Tarar_Phool_05
ইমরান, পুজা ও নাওমির কথা শেষ হতেই আর্জেন্টিনার জার্সি পরে পাশে দাঁড়াল পাওয়ার ভয়েজের শিল্পী কর্ণিয়া। তার ভাষ্যে, ‘আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল দুই দলেই আমার পছন্দের খেলোয়াড় আছে। তবে আর্জেন্টিনার মেসির খেলা খুব ভালো লাগে। এবার সময় পেলে পাওয়ার ভয়েজের সব বন্ধুদের নিয়ে খেলা দেখতে চাই। আর ছোটবেলায় বাসার বারান্দায় বড় পতাকা দিয়ে রাখতাম। এবার মাও আমার সাথে খেলা দেখবে। খুব মজা করতে চাই। ’

কর্ণিয়া ও ক্লোজআপ তারকা লিজা দু’জনেই আর্জেন্টিনার সমর্থক। তাই দুজনের একই পোশাক। দুজন একই প্রতিযোগিতা থেকে না আসলেও দুজনের সম্পর্ক অনেক ভালো। খেলা নিয়ে লিজা বললেন, ‘আমি ফুটবল অনেক পছন্দ করি। প্রতি বছর ফুটবল নিয়ে প্রাইমারি স্কুলের জন্য জাতীয় পর্যায়ে আমি একটি থিম সং গাই। এবারও গেয়েছি। এটিএন বাংলায় দেখানো হবে। আর এবার বাসায় সবার সাথে আর্জেন্টিনার খেলা দেখার পাশাপাশি আমি যেখানে বড় হয়েছি (ময়মনসিংহ এর গৌরিপুরে) চাচার পরিবারের সাথে গিয়েও খেলা দেখার ইচ্ছে আছে। ছোটবেলায় সবসময় খেলা দেখতাম সেখানে। এবারও মিস করতে চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।