ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

তারার ফুল

কেমন হলো ঈদের ছবি (৩)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৬
কেমন হলো ঈদের ছবি (৩)

আগের প্রতিবেদন

‘সম্রাট’
ঈদের আরেকটি ছবি ‘সম্রাট’-এও ডন আছেন! নাম ভূমিকায় শাকিব খানের মাঝে কেমন যেন বলিউডের ‘ডন’ সিরিজের শাহরুখ খানের একটা ছায়া পেয়েছি। যদিও পুরো ছবির কাহিনি মৌলিক।

তবে ‘শিকারি’ দেখার পর ‘সম্রাট’-এর শাকিবকে নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। এখানে তার চরিত্রের কিংবা তার কস্টিউম/লুকের কোনো ধারাবাহিকতা ছিলো না। ‘সম্রাট’ মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের মুক্তিপ্রাপ্ত তৃতীয় ছবি। আমি বিশ্বাস করি, রাজ নিজেও জানেন তিনি যা দিতে চেয়েছিলেন, ‘সম্রাট’-এ তা দিতে পারেননি। প্রযোজক চেষ্টার কমতি করেননি, বাংলাদেশের বাজার তুলনায় বাজেট বেশ ভালো, তবে সব ভালো এক করে সুন্দর একটা মালা গাঁথা কী হলো?

‘সম্রাট’-এর ভালোটা আগে বলি। ছবি যখন শুরু হলো, মুখ থেকে আমার একটি শব্দই বেরিয়েছে-‘ওয়াও’! সম্রাট-এর লুক দেখে বেশিরভাগ সময়ই গর্ব হয়েছে এটি ভেবে, ‘সম্রাট’ বাংলাদেশের ছবি। চন্দন রয় চৌধুরীর চিত্রগ্রহণ এ ছবিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। কালার গ্রেডিং, লোকেশন, শিল্প নির্দেশনা এক কথায় অসাধারণ! কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কিংবা বিশেষ একটি হোটেল মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখেছি। বিশেষ করে থাইল্যান্ডে ‘রাতভর’ গানের চিত্রায়ন ছিল চমৎকার। তিন গীতিকার জনি হক (শিরোনাম গান), রবিউল ইসলাম জীবন (রাতভর), জাহিদ হাসান অভি (নিঃশ্বাস) তথাকথিত শব্দ থেকে বেরিয়ে বাংলা ছবিতে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং সফল হয়েছেন। কস্টিউম ও স্টাইলিংয়ে রামিম রাজকে নিয়ে পরিচালক রাজ দর্শককে যে ভিন্ন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা স্পষ্ট ছিল।


যতোটুকু জানি, এ ছবির মধ্য দিয়েই শাকিব খান তার লুক বদলে ফেলতে শুরু করেছিলেন। এজন্য কিং খানের পাশাপাশি পরিচালক এবং তার ইউনিট ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। বিশেষ করে ফর্মাল স্যুট-টাইয়ের দৃশ্যগুলোতে শাকিবকে দারুণ ম্যানলি লেগেছে, যেমনটি ভালো লেগেছে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে। অন্যদিকে অপু বিশ্বাসকে এ ছবিতে যতোটা সুন্দরী লেগেছে, তা অন্য কোনো ছবিতে লেগেছে কি-না ভাবতে হবে। কিছু দৃশ্যের অতি অভিনয় বাদ দিলে খল চরিত্রে মিশা সওদাগর সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। অর্থাৎ এ ছবিতে সুঅভিনয় শুধু মিশাই করতে পেরেছেন। বাকিরা পারেননি, কারণ তাদের চরিত্রই বিশ্বাসযোগ্য ছিলো না। অপু কেনো বাগদত্তা থাকা সত্ত্বেও ইন্দ্রনীলের কাছ থেকে ছুটতে চাইছেন স্পষ্ট নয়। তিনি কেনো শাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইছেন, শাকিবের সঙ্গে তার এমন কি হলো, যার কারণে বাগদান ভাঙতে চাইছেন? স্পষ্ট নয়। আমার পেছনের সারিতে বসে থাকা এক সাধারণ দর্শক তো বলেই ফেললেন, নায়িকা তো চরিত্রহীন!

একজন ডন হয়ে রেস্টুরেন্টে বসে বারবার ম্যাড়মেড়ে প্রেমের সংলাপ আওড়ানো আর প্রথাগত অভিব্যক্তি দিয়ে শাকিব এ ছবিতে কেনো জানি সম্রাট হয়ে উঠতে পারেননি। একজন ডন প্রেম করতেই পারেন। তবে এ ছবির গুটিকয়েক, হালকা চালের প্রেমের দৃশ্যগুলো সম্রাটের ইমেজকে দাঁড়াতে বারবার বাধা সৃষ্টি করেছে। শাকিবের সঙ্গে ডাক্তার অপু কেনো মালয়েশিয়ার বারে নাচতে গেলেন, সে দৃশ্যে কোনো কথা না হওয়ার পরও দেশে ফিরে হাসপাতালে শাকিব তাকে দেখেই কেনো প্রেমে পড়লেন, স্পষ্ট নয়।

গল্প, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ যদি ঠিকঠাকভাবে করা যেত, আমার মনে হয় ‘সম্রাট’-এর একটি ভালো ছবি হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিলো। হিন্দি ‘ডন’ ছবিতে যেমন ‘ডন কো পাকাড়না মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়’-এ ধরনের সংলাপ বাংলা করে কেন বারবার ছবিতে ব্যবহার করতে হবে? ‘সম্রাটকে মেরে ফেলার কথা শুধু কল্পনা করা যায়, কিন্তু যায় না/সম্রাটের চোখে ধুলো দেওয়ার কথা শুধু কল্পনা করা যায়, কিন্তু ধুলো দেয়া যায় না’- শাকিব খানের মুখ থেকে যখন সংলাপগুলো শুনছিলাম, মনে হচ্ছিল তিনি ছড়া বলার চেষ্টা করছেন। অভিনয় যখন অভিনয়ের মতো মনে হয়, তখন তা আর দেখতে ভালো লাগে না। অনুপ্রেরণা হতেই পারে, যেমন ‘ধুম টু’ ছবির হৃতিক রোশন-ঐশ্বরিয়া রাইয়ের পিস্তল দৃশ্য এখানেও করা হয়েছে। এ দৃশ্যে শাকিব-অপুর অভিনয় এতোটুকু বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

সবকিছু নিয়ে আমরা দর্শক যখন ক্লান্ত, তখন হঠাৎ উপস্থিত সাজু খাদেম। সশরীরে নয়, স্বকণ্ঠে। শাকিবের ঠোঁট থেকে সাজু খাদেম বের হচ্ছেন! হয়তো শাকিব ডাবিংয়ের জন্য সময় বের করতে পারেননি, তাই বলে সাজু খাদেম অনুকরণ করতে পারেন বলে তাকে দিয়ে ডাবিং করাতে হবে? বিস্ময়কর হলেও সত্যি, আমি একা নই, আমার চারপাশে সবাই বুঝতে পেরেছেন ঐ দৃশ্যে শাকিব নন, কণ্ঠ দিয়েছেন সাজু খাদেম। যদিও শাকিব নিজে যে দৃশ্যগুলোর ডাবিং করেছেন, সেগুলোতেও বেশকিছু ভুল উচ্চারণ করেছেন। সাম্রাজ্যকে বলেছেন ‘সম্রাজ্য’। এসব অবশ্য এড়িয়ে যেতে চেয়েছি। তবে কিছু ভুল এড়াতে পারিনি।

অপু বিশ্বাস ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার, শাকিবকে দেখানো হচ্ছে তিনি থাকেন কক্সবাজারে। কি করে তিনি রোজ ঢাকা এসে দেখা করেন? বা হাতিরঝিল থেকে ড্রাইভ করতে করতে কক্সবাজারের হোটেলে বসে কথা বলে আবার সেদিনই ঢাকা ফেরেন কীভাবে? ঠিক আছে ধরলাম এটা, সিনেম্যাটিক লিবার্টি। যে স্বাধীনতার সুযোগে অ্যাকশন দৃশ্যে ম্যাজিক চেয়ার আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু অতিথি চরিত্রে চিত্রনায়ক ইমন ছবির শেষ ফাইটিংয়ের পর কেনো এলেন, আর শাকিব খান কীভাবে দেশের বাইরে হুট করে চলে গেলেন তা মাথার ওপর দিয়ে গেলো।

অংক কষে বের করলাম, দক্ষিণ ভারতের ছবি ‘বাহুবলী’র মতো ‘সম্রাট’-এর শেষেও ‘সম্রাট টু’ নির্মাণের একটি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সিক্যুয়েল হোক, সমস্যা নেই। তবে প্রথম পর্ব তো একটু বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে শেষ করতে হবে, নইলে দর্শক কেনো দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করবে? কেনো যেন মনে হয়েছে, এ ছবির বেশকিছু দৃশ্য পরিচালক শুটিংই করেননি, অথবা সম্পাদক খুব বাজেভাবে সম্পাদনা করেছেন। কারণ ‘সম্রাট’-এর গল্পে স্বল্পতা ছিলো প্রেম, আবেগ, সেন্টিমেন্টের। অথচ এমনটি কি হওয়ার কথা ছিলো? বিরক্তির পরিবর্তে কষ্ট পেয়েছি।

* লেখক : চিত্রনাট্যকার

পরের প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।