সম্প্রতি বাংলানিউজের মুখোমুখি হন ন্যানসি ও রোদেলা। কথা হয় গান নিয়ে রোদেলার স্বপ্ন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, মেয়েকে নিয়ে ন্যানসির ভাবনা এবং তার বর্তমান ও আগামী ব্যস্ততা নিয়ে।
বাংলানিউজ: দেশের অন্যতম সেরা গায়িকা হিসেবে আপনি প্রতিষ্ঠিত। গানের ভুবনে যাত্রা শুরু করেছেন আপনার মেয়ে রোদেলাও। তো, মা এবং একজন গায়িকা হিসেবে সংগীতাঙ্গনে মেয়েকে কোন অবস্থানে দেখতে চান কিংবা মেয়েকে নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
ন্যানসি: আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো- শুধুমাত্র গান করে আমাদের দেশে কোনো শিল্পী দীর্ঘ ক্যারিয়ার গড়তে পারেন না। এখানে অধিকাংশ শিল্পীরই নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর নিজ অবস্থান থেকে ছিটকে পড়তে হয়। তাই আমি চাই না, আমার মেয়ে গানকে পেশা হিসেবে চূড়ান্ত করুক।
লেখাপড়া শেষ করে অন্য একটা পেশার পাশাপাশি সে গান করুক, মা হিসেবে এটাই আমার চাওয়া। মা হিসেবে মেয়েকে বলবো, এখন গান-লেখাপড়া দুটোই যেমন একসঙ্গে নিয়মিত করছে, পেশাগত জীবনেও যেন সে চাকরী-গানটা নিয়মিত করে। আর রোদেলা এটা করতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস।
বাংলানিউজ: রোদেলা আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সংগীত নিয়ে স্বপ্নের কথা জানতে চাই-
রোদেলা: আমি আসলে গানটা ভালোভাবে শিখতে চাই। পড়ালেখার পাশাপাশি সংগীত-চর্চাটা নিয়মিতই করছি। ভালো গান করতে চাই। অবশ্য ভব্যিষতে কিছু একটা করার পাশাপাশি’ই গানটা করবো। তবে আমি এখনো জানি না, আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী। মানে, এখনো বলতে পারছি না- আমি কী হতে চাই বা কী হতে পারবো। তবে ইচ্ছে আছে বড় হয়ে সমাজসেবামূলক কাজ করার, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। সেজন্য সবার কাছে দোয়া-প্রার্থনা চাই। আর আম্মু তো পাশে আছেনই, যার সব রকমের সমর্থন আমি পাচ্ছি।
বাংলানিউজ: রোদেলার শুরুটা খুবই ভালো হয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান দিয়ে শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। এরপর দ্বিতীয় গান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সামনে রোদেলার নতুন কোনো গান আসছে কী?
ন্যানসি: ভালোবাসা দিবসে তার একটি গান প্রকাশের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু সময়-সুযোগের অভাবে হলো না। তবে আশা রাখি, আসছে পহেলা বৈশাখে রোদেলার গান পাবেন শ্রোতারা। আর মেয়ের কণ্ঠে জাতীয় কবির ‘প্রজাপতি’ এবং বিশ্বকবির ‘আমরা সবাই রাজা’ শীর্ষক গান দুটির জন্য অনেকের প্রশংসা পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমিও ভীষণ খুশি।
বাংলানিউজ: দেশের বাইরে কনসার্টের কথা বলছিলেন। এ বিষয়টা সম্পর্কে বলবেন?
ন্যানসি: এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনসার্ট আছে। সেটি হবে ফ্লোরিডাতে, ১৮ এপ্রিল। এখনো পর্যন্ত একটি শো’র বিষয়ে আলাপ হয়েছে, তবে দুটিও হতে পারে।
বাংলানিউজ: রোদেলা, গান নিয়ে আপনার বিশেষ একটা ইচ্ছের কথা বলেন-
রোদেলা: আমার গানের হাতেখড়ি মায়ের কাছে। ওস্তাদ বিজন তপদার’র পাশাপাশি এখনো মায়ের কাছ থেকে শিখছি। তাছাড়াও বলতে পারি, আমি একজন গর্বিত সন্তান। কারণ আমার মা গান গেয়ে অসংখ্য মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। একবাক্যে মাকে সবাই চেনেন এবং ভালো গানের ও গায়কীর শিল্পী হিসেবে ভালোবাসেন। তাই ইচ্ছে আছে মায়ের সঙ্গে একটি দ্বৈত অ্যালবাম করার।
বাংলানিউজ: মেয়ের ইচ্ছে মায়ের সঙ্গে মায়ের দ্বৈত অ্যালবাম করার। এখন মায়ের ইচ্ছেটা পাঠকদের জানাবেন-
ন্যানসি: এটা অবশ্যই খুব ভালো সিদ্ধান্ত। আমাদের মা-মেয়ের একটা দ্বৈত অ্যালবাম করার ইচ্ছে অবশ্যই আছে। কাজটা হয়তো এ বছরই শুরু করতে পারি।
বাংলানিউজ: অডিও-সিনেমার খুব মন্দা সময় যাচ্ছে। এ মন্দা সময়ে তথা নতুন বছরে তিনটা অডিও এবং তিনটা সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তো, এ সময়টাতে প্রত্যাশানুযায়ী কাজ করতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে কী?
ন্যানসি: প্রত্যাশার বিষয় না, অস্থির সময় যাচ্ছে- এটাই সমস্যা। এ অবস্থার দ্রুত অবসান ঘটুক, শিল্পী হিসেবে এটাই প্রত্যাশা করি। কারণ অনেক শিল্পীরাই কিন্তু গানের বাইরে কিছু করেন না। তাই এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে বড় ক্ষতিটা তাদেরেই হবে। আর একটা বিষয় হচ্ছে, শিল্পীদের ব্যয়টা কিন্তু সবসময়ই এক রকম থাকে। কারণ হাত একবার বড় হয়ে গেলে সেটা কমানো খুবই কঠিন, এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বললাম।
বাংলানিউজ: বিশ্ব ভালোবাসার দিনে (১৪ ফেব্রুয়ারি) পাঠকদের উদ্দেশ্যে মা-মেয়ে মিলে কিছু বলুন-
ন্যানসি: যেকোনো পবিত্র সম্পর্কের জয় হোক। প্রত্যেকটা মানুষ যেন সম্পর্কের সম্মান বজায় রাখেন, একে-অপরকে ভালো রাখেন, ভালোবেসে ভালোবাসায়। তবে ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকুক! আমার দুই মেয়ে, স্বামীসহ কাছের মানুষ, পরিচিত-ভক্ত-অনুরাগী সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।
রোদেলা: আমি বিশ্বাস করি- সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। তাই আমার আম্মু-পরিবার, গানের মানুষসহ সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
ওএফবি