ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

চল রে বন্ধু মাছ দেখিবার...

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬
চল রে বন্ধু মাছ দেখিবার... ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চগড় ঘুরে: ‘চল রে বন্ধু মাছ দেখিবার/রাইতের বেলা খামু হামরা ভাত মাছ দিয়া...’ বন্ধুকে চিরায়ত গ্রামের বর্ণনা তুলে ধরে নদীতে মাছ ধরা দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন গীতিকার সরকার হায়দার।

আর দরদভরা কণ্ঠে সুর তুলে মুগ্ধ করেছেন বাউল শিল্পী রইসউদ্দিন সরকার।

আঞ্চলিক ভাষার এ গানে সবুজ-শ্যামলা বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বর্ণনা এভাবেই পাওয়া যায়।

এতে রয়েছে করতোয়ার কূলে গড়ে ওঠা পঞ্চগড়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যও। উঠে এসেছে মানুষের নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতিও। বলা হয়েছে, আন্তঃসীমান্ত নদী ডাহুক ও বিলুপ্ত প্রায় পাখি কালা তিতিরের কথা (শেখ ফরিদ পাখি)।

তবে আকাশ সংস্কৃতি আর নতুনত্বের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এখানকার সত্যপীরের গান, বাউল, হোলীধামসহ নানা লোকজ সংস্কৃতি। বাউল গান, লালনগীতি ও পালাগান হয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে দিবস কেন্দ্রীক আয়োজনে।

তরুণ বাউল শিল্পী রইসউদ্দিন বলেন, বাবার আগ্রহে ছোটবেলায় গান শেখার শুরু। ওস্তাদের কাছে তালিম নেওয়া শেষে বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে যাচ্ছি।
যদিও আগের মতো আর অনুষ্ঠান হয় না। সে রকম সম্মানীও নেই।

‘কোনো মাসে দুইটা কিংবা চারটা গানের অনুষ্ঠান হয়। কোনো মাসে হয় না। সম্মানী হিসেবে কোনোদিন ৫শ’ টাকাও পাই। বড় অনুষ্ঠান হলে পাই ৫ হাজার টাকা। তবে এ সংখ্যা খুবই কম’।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো অভিযোগ নেই, আমরা বাউল গান চর্চা করে যেতে চাই। তবে কোনো পৃষ্টপোষকতা পেলে আগ্রহ বাড়ে।

বর্তমান বাউলদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলে ধরে এই শিল্পী বলেন, শিল্পীদের অবস্থা খুবই খারাপ। সংসার চলে না- এরপরও ভালো লাগা থেকে শত অভাব অনটনেও আনন্দের সঙ্গে গান ধরে রাখছি।

সীমান্ত ঘেঁষা দেশের উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়াও শান্ত হলেও এর বুক চিরে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা ডাহুক, গোবরা এখন নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে কালা তিতিরের উপস্থিতি।

গীতিকার হায়দার বলেন, প্রকৃতির ওপর যে মানুষের নির্দয় আচরণ তা নিয়েও আমরা কাজ করেছি। ভূমিজ নাট্য সংগঠন থিয়েটারও করেছে। গানে বর্ণনা করা হয়েছে।

গবেষকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, কালা তিতির একটি বিপন্ন প্রজাতির পাখি। স্থানীয়রা একে শেখ ফরিদ নামে ডাকেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, পাখিটি দেখার সঠিক সময় হলো খুব সকাল আর সন্ধ্যা।

‘পাখিটি মানুষের নড়াছড়া দেখলে ভয় পায় বলে খুব সাবধানে দেখতে হয়। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে নিমেষেই পালিয়ে যায় ঝোপের আড়ালে’।

এক সময়ের যৌবনা ডাহুক নদীর দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে ছিলো ১০ কিলোমিটার। মৃত প্রায় নদীটির কোথাও কোথাও ধান চাষ করতে দেখা যায় এখন! তবে জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ডাহুক এখনও প্রচুর নুড়িপাথর, উন্নতমানের বালু ও কাঁচবালু নিয়ে আসে। যা ভাগ্য বদলাচ্ছে পাথর উত্তোলনকারীদের।

ব্রিটিশ শাসনামলে ডাহুক বোদা থানা ও দার্জিলিং জেলার সীমানা নির্ধারণ করতো বলেও জানান কেউ কেউ।

তেঁতুলিয়ার গ্রাম-খেতে আঁকা-বাকা হয়ে এগিয়ে মাঝিপাড়া ক্যাম্পের দক্ষিণ দিক দিয়ে ফের ভারতে চলে গেছে ডাহুক।

‘এত কিছু থাকার পরও আমাদের পাশে কেউ আসে না। তবুও নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’ -যোগ করেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা এলাকার তরুণ শিল্পী রইস।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬
এটি/

**
‘অনেক লাঞ্ছনার পরও বাউল গানকে ধরে রাখছি’
** দু’মাসি ভাদ্রে বৃষ্টির খেলা
** স্বপ্নে পাওয়া সত্যপীরের গান
** বিলাসী মহেন্দ্রের সাক্ষী হাওয়াখানা
** গাঁয়ের বধূর মনের কথা মেয়েলী গীত
** ‘নিজ সংস্কৃতি নিয়ে হীনমণ্যতা বিলুপ্তির কারণ’
** দাড়িয়াবান্ধা নেই, বিলুপ্ত বৌচি
** লোকজ সংস্কৃতিতে চলে পানের আপ্যায়ন
** বাদল দিনে নেই বৃষ্টির খনা
** বাহে শোন মোর ভাওয়াইয়া গান
** ‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’
** আহা! সেকি সুর শিরিষের সারিন্দায়! (ভিডিও)
** হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...
** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।