ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি দোকানে সাজিয়ে রাখা চিংড়ি-ছবি- রানা

সোয়ারীঘাট ঘুরে: মোসলেমের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে। নগরীর বিভিন্ন মহল্লায় ফেরি করে মাছ বিক্রি করেন তিনি। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানীর সবচেয়ে পুরাতন মাছ বাজার সোয়ারীঘাটে পরিচয় হয় তার সঙ্গে।   
 
 

অভিজ্ঞ মোসলেম ছুঁয়েই বলে দিতে পারেন কোনটি কেমন মাছ, কিংবা ভেজাল আছে কিনা। দু’চার কথায় আলাপ জমে যায়।

চিংড়ি প্রসঙ্গ আসতেই বলেন ভেজালে ভরে গেছে পুরো ঢাকা। ভালো চিংড়ি খুবই কম।
 
কীভাবে চিনব এমন প্রসঙ্গ উঠতেই ডেকে নিয়ে গেলেন মনির হোসেন ব্যাপারির আড়তে। প্রথমেই দাম জিজ্ঞেস করলেন বিক্রেতার কাছে। বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন দাম হাঁকলেন, চারশ’ টাকা কেজি। সঙ্গে খানিকটা রসিকতা করে বললেন, নিলে ভাই। না হলে দূর হ ভাই।
 
খামাল থেকে একটি চিংড়ি হাতে নিয়ে পেটে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে উল্টা আঁচড় কাটলেন মোসলেম। সঙ্গে সঙ্গে নখের ওপর জেলি আবরণ উঠে এলো। এবার চিংড়িটির ঘেটি ধরে বাঁকা করলেন। সেখানেও জেলির আবরণ। একই পদ্ধতিতে আরও কয়েকটি জেলি মিশ্রিত চিংড়ি দেখালেন তিনি। দোকানে সাজিয়ে রাখা চিংড়ি
 
মোসলেম’র কাছে প্রশ্ন ছিল, তুলনা করার জন্য ভালো চিংড়ি পরখ করতে চাই। এই বাজারে কি নির্ভেজাল চিংড়ি পাওয়া যাবে? এবার বাজারটির ঠিক মাঝামাঝিতে এক আড়তে নিয়ে গেলেন তিনি। চিংড়ি হাতে নিয়ে আগের কায়দায় চিংড়ির পেটে নখ দিয়ে আঁচড় কাটলেন। এবার কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলো না।
 
নখ সামনে এনে বললেন, দেখেন কিছুই নেই। এটাতে কোন ভেজাল মেশানো হয়নি। বিক্রেতার গলাতেও যেনো একটু বেশিই জোর। বললেন, নির্ভেজাল পেতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। বিক্রেতার কাছে প্রশ্ন ছিল ভাই, এই চিংড়িগুলো কি খুলনা থেকে আনা হয়েছে?
 
জবাবে বিক্রেতাতে বললেন, খুলনার লোকজন যদি কোরআন মাথায় নিয়ে বলে ভেজাল দেয় নি, তাহলেও বিশ্বাস করব না। এগুলো আনা হয়েছে কোটালীপাড়া থেকে। এগুলো সাড়ে ৫’শ টাকা কেজি (বিশ থেকে পঁচিশটি চিংড়ি এক কেজি হবে)।  এখানেই রয়েছে ভেজাল চিংড়ি
 
মনির হোসেন ব্যাপারির আড়তের চিংড়ির মতোই একই সাইজের। কিন্তু কেজিতে দামের ব্যবধান দেড়’শ টাকা। যে কারণে মনির ব্যাপারিদের আড়তে ভিড় বেশি। হরদম বেচাকেনা চলছে। আর এই চিংড়ি চলে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও ‍অভিযাত চেইন শপে। চারশ’ টাকার চিংড়ি হয়তো আড়ং কিংবা মিনা বাজারে গিয়ে বিক্রি হবে সাত থেকে ‌আটশ’ টাকা কেজি দরে।  
 
সোয়ারীঘাটে প্রায় পয়ত্রিশটি আড়ত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পনেরটি আড়তে শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) চিংড়ি বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। ঘুরে ঘুরে প্রত্যেকটি আড়তেই হানা দেই, আসল নকল পরখ করতে। মোসলেমের শেখানো পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখেই অনেক বিক্রেতা বুঝে ফেলেন।
 
লিটন নামে এক বিক্রেতা হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে দেখেই বলে ওঠেন, ডাক্তারী চলবে না।  একদাম তিনশ’ আশি টাকা মাত্র। আরেকজন তো বলেই ফেললেন, ৬’শ টাকার জিনিস চারশ’ টাকায় পাচ্ছেন। জেলি থাকবে নাতো কি থাকবে। এখানেই রয়েছে ভেজাল চিংড়ি
গুণে গুণে পনেরটি আড়ত ঘুরে মাত্র ৪টিতে নির্ভেজাল চিংড়ি দেখা গেলো। আর এগারোটিতেই ভেজালে ভরপুর ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মাছের আড়তটি। কোন এক সময় এই একটি আড়তের ওপর নির্ভরশীল ছিল ঢাকার খুচরা বিক্রেতারা।  কালের পরিক্রমায় আরও বেশ কয়েকটি পাইকারি বাজার বসেছে। কিন্তু বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা সোয়ারীঘাট এখনও অনেক জনপ্রিয়।
 
এর হাত ধরে কতজন ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলেছেন। এখানে যেমন ভালো মানের মাছ পাওয়া যায় তেমনি ভেজালেও ভরপুর। এমন অভিমত ব্যক্ত করলেন আনোয়ার হোসেন। সোয়ারীঘাটে ৩৭ বছর ধরে কাজ করেন।  নিজের পরিচয় দিলেন ব্লাকার আনোয়ার হিসেবে।
 
তাকে নাকি নাম ধরে না খুঁজে, ব্লাকার বললেই চিনবে। কেন তাকে ব্লাকার বলা হয়, সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু এই উপাধি যে তার খুব পছন্দের তা খুশিতে গদগদ হওয়া দেখেই বুঝা গেলো। তিনি কাজ করেন মনির হোসেন ব্যাপারির আড়তে। অন্যরা যখন পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা কেজি দরে গলদা চিংড়ি ( ২০-২৫টি এক কেজি) বিক্রি করেন, আনোয়ার হোসেনরা তখন বিক্রি করেন সাড়ে তিনশ’ থেকে চার’শ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এসআই/জেডএম

**
‘৬শ’র মাল সাড়ে ৩শ’তে লইবেন, জেলি তো থাকবোই’
** বাইছা লন, ক্যানসার ছাড়া লন
** সব বাজারেই জেলি চিংড়ি!
** কাপড়ের বিষাক্ত নীলে চকচকে চিংড়ি
** শক্ত খোলসেই পোয়াবারো চিংড়ি ভেজালিদের
** চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!
** চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও
** কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে
** এ যেন টাকা দিয়ে মৃত্যু কেনা !

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।