প্রায় ১৭ লক্ষাধিক লোক অধ্যুষিত বাগেরহাটের ৯ উপজেলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র বাগেরহাট সদর হাসপাতাল। জনগুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট সমাধানের দাবি এলাকাবাসীর।
জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০ শয্যার জনবলে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। আর বর্তমানে সেই ৫০ শয্যার জনবলও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে দিন দিন দুরাবস্থায় পড়ছে চিকিৎসা সেবা। ভয়াবহ এ চিকিৎসক সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
৫০ শয্যার লোকবল অনুযায়ী হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসকের ১১টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে কনসালট্যান্টের ১২টি পদের মধ্যে ৭টি এবং মেডিকেল অফিসারদের ১২টি পদের ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ১৭টি পদ শূন্য রয়েছে।
চিকিৎসকের শূন্য পদগুলো হলো- সিনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক সার্জারি, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, সিনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, জুনিয়র কনসালটেন্ট রেডিওলজি, মেডিকেল অফিসার দুইজন, মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) একজন এবং প্যাথলজিস্ট একজন। এদিকে কাগজ কলমে ১৩ জন চিকিৎসক থাকলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. কামরুন সাত্তার এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) ডা. মনোয়ার হোসেন তালুকদার অনুপস্থিত রয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১১জন। যদিও অনুপস্থিত দুই জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (৫ মার্চ) দুপুরে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোর ও ইনডোর দুই জায়গাতেই রোগীর ভিড়। রোগীর ভিড়ের মধ্যেও ১১ চিকিৎসকের মধ্যে তিনজন ছুটিতে রয়েছেন।
উপজেলার পাটরপাড়া গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নূর মোহাম্মাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গলার ব্যথার জন্য ডাক্তার দেখাতে সকালে আউটডোর টিকিট কেটেছি। এর পর আমাকে দোতলায় জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামানের রুমে আসতে বলা হয়েছে। আমি সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ডাক্তারের দেখা মেলেনি। রুমও তালা দেওয়া রয়েছে। ’
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ সাহেরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসছি এ হাসপাতালে। কিন্তু আমাকে যে ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়েছে তিনি নাকি ছুটিতে আছেন।
খালেদা বেগম নামে আরেক রোগী বলেন, ‘গত চারদিন ধরে শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে রয়েছে। ৩ মার্চ (রোববার) এসে টিকিট কেটেছি, কিন্তু এ সংক্রান্ত ডাক্তার না থাকায় দেখাতে পারিনি। আজ (সোমবার) আবারও এসেছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা টিকিট দেন তারা আমাকে আফসানা ম্যাডামের কাছে যেতে বলেছেন। আফসানা ম্যাডামের কাছে গেলে তিনি বলেন ফয়জুল স্যারের কাছে যেতে, ফয়জুল স্যারের কাছে গেলে তিনি বলেন মনিরুজ্জামান সাহেবের রোগী আমি দেখি না। ফয়জুল সাহেব আমার কোনো কথাই শুনলেন না। ’
অপারেশনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক রোগীকে চলে যেতে হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ অন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আউটডোর ও ইনডোরে দৈনিক ৪শ থেকে ৫শ রোগী চিকিৎসাকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। অল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ’
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জিকে সামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ৫০ শয্যার অর্ধেকের মতো জনবল আছে। শয্যা ১০০ হলেও সবসময় ১৫০ থেকে ১৬০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এদের চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। ’
চিকিৎসক সংকটের কথা প্রতিমাসে লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে জানানো হচ্ছে। অচিরেই চিকিৎসক সংকট সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৯
জিপি/