ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সাজেকে ফের হামের প্রাদুর্ভাব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২০
সাজেকে ফের হামের প্রাদুর্ভাব

রাঙামাটি: রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে আবারো হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০০ জন। 

স্থানীয় কার্বারীপাড়া প্রধান, বেসরকারি চিকিৎসক এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।  

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা।

তাদের দাবি, ওই এলাকায় নতুন করে হামে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান জানা নেই। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের টিম কাজ করছে বলেও জানান তারা।

এদিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, সাজেক ইউনিয়নের শিজকছড়া, হাউজপাড়া, সুরুংনালা, মাচলং, উজোবাজার এবং ভূইয়োছড়ি ঘুরে কমপক্ষে ৩৫টি দরিদ্র পরিবারের শিশু নতুন করে হামে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ওই এলাকায় গত এক সপ্তাহে কোনো চিকিৎসকের দেখা মিলেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাল করে নজর না দিলে আমাদের চরম বিপর্যয়ে পড়তে হবে।

সুরুংনালা এলাকার সমাজকর্মী বিজয় কেতন চাকমা জানান, সরকারি-বেসরকারি সবার কাছে সাজেক মানে পর্যটন কেন্দ্র। ওখানে পাহাড় উঠলে প্রকৃতি দেখা যায় কিন্তু মানুষের কষ্ট দেখা যায় না। তাই এখানকার মানুষের অভাব-অনটন, অসুস্থতা জানতে হলে রুইলুই পাহাড় থেকে নেমে চারপাশে হাঁটতে হবে।

উজোবাজারের ফার্মেসি মালিক পুতুল চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে রাঙামাটিতে ‘আশিকা ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ইউনিয়নের সবচেয়ে দুর্গম এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও পরামর্শের পাশাপাশি পরিবারপিছু নগদ টাকা সহায়তাও দিয়েছে।

ইউপি সদস্য সুশীলা চাকমা ও হীরানন্দ ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, সাজেক ইউনিয়নটি ফেনী জেলার সমান আয়তনের। বেশিরভাগ এলাকা দুর্গম এবং দারিদ্র্যপ্রবণ। গ্রীস্ম ও বর্ষাকাল মানেই এখানে খাদ্য সংকটের মৌসুম।  

হাম আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে আসা স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘আশিকা ডেভেপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস’- এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বিমল চাকমা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদের নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গত এক মাসে ইউকে, এইড ও স্টর্ট ফান্ড বাংলাদেশের সহায়তায় সাজেকের দুর্গম কাইচ্ছাপাড়া, অরুণপাড়া, শিয়ালদা, ভূইয়োছড়ি, শিজকছড়া, দাড়িপাড়া, সুরুংনালা এলাকায় ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প, কাউন্সেলিং, বিনামূল্যে ওষুধ এবং নগদ সহায়তা দেওয়া অব্যাহত আছে।

তিনি জানান, সাজেক ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থায়ী বাসিন্দাই জুমজীবী এবং দিনমজুর। বছরের এ সময়টাতে এলাকাজুড়ে খাদ্য ও কাজের সংকট সৃষ্টি হয়। সরকার-বেসরকারিভাবে স্বল্পমূল্যের রেশনিং চালু করা গেলে মানুষের জীবন ও জীবিকা স্থায়িত্বশীল হবে।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন বাংলানিউজকে, সাজেক এলাকায় নতুন করে মাচলংয়ে ৬৪ জন, সুরুনং নালায় ২৮ জন, গঙ্গারাম ও ভাইবোন ছড়ায় ৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আইন-শৃখলা বাহিনীকে আক্রান্তদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
 
ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন আরো জানান, দুর্গম এলাকায় ৯ শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে সবার আগে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। পাশাপাশি অনেক এলাকায় বিজিবিও সহযোগিতা দিয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না এলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারতো।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার বাংলানিউজকে বলেন, নতুন করে হামে আক্রান্ত রোগীর কোনো তথ্য নেই। মাঠে আমাদেও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। প্রয়োজনে তিনি নিজেও এলাকা পরিদর্শন করে নির্দেশনা দেবেন বলে যোগ করেন।

রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ চাকমা বাংলানিউজকে জানান, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। সেনাবাহিনী-বিজিবি ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। নতুন করে আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত হওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলে এলাকার মানুষ বেশি উপকৃত হবেন বলেও মত ব্যক্ত করেন তিনি।   

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সাজেক ইউনিয়ন এলাকায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে ৯ শিশু হামে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তখন আক্রান্ত হয়েছিলো বয়স্ক ও শিশুসহ দুই শতাধিক। এখন চলতি মাসের শেষদিক থেকে আবারো নতুন করে আক্রান্তের খবর মিলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।