ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

অভিবাসীবিরোধী হুংকার জার্মানির কট্টর-ডান এএফডির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
অভিবাসীবিরোধী হুংকার জার্মানির কট্টর-ডান এএফডির এএফডির বিরুদ্ধে তরুণ-তরুণীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

সংসদ নির্বাচনে তাদের চমকে দেওয়া ফল দেখেই উদার জার্মানদের মনে বিভক্তির ভয় ধরে গেছে। সেই ভয় আরও বাড়িয়ে দিলো কট্টর ডানপন্থি নব্য নাৎসি সমর্থকদের দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচেল্যান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি)। তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, জনগণ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়ায় এখন ‘বিদেশিদের আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে লড়াই করবে তারা।

ইসলাম-মুসলিম, শরণার্থী ও অভিবাসীবিরোধী দল এএফডি ‘বিদেশিদের আগ্রাসন’ বলতে অভিবাসী-শরণার্থীকেই বুঝিয়েছে বলে স্পষ্ট বিশ্লেষকদের কাছে। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সাধারণ নির্বাচনে লড়ে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রায় ৯৪ আসনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এএফডির প্রতিষ্ঠাতা কো-লিডার আলেক্সান্ডার গুয়ালান্ড দলের এই অবস্থান প্রকাশ করেন।

নির্বাচনী ফলাফলের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এএফডির এ নেতা বলেন, ‘এ দেশে নিয়ে আসা ১০ লাখ বিদেশি জার্মানির একটি অংশকে নিয়ে যাচ্ছে (তাদের মতো গড়ছে), কিন্তু আমরা এটা হতে দিতে পারি না। ’

তিনি অভিবাসীদের উদ্দেশে হুংকার ছেড়ে বলেন, ‘আমরা যেটা বলবো, ভিন্ন সংস্কৃতির বিদেশিদের আগ্রাসনের কাছে আমরা জার্মানিকে হারাতে চাই না। খুব স্পষ্ট। আমরা ভিন্ন নীতি চাই। ’

রোববারের এ নির্বাচনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের সবচেয়ে কম ভোট পেতে হয়েছে। মেরকেল টানা চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর হলেও ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করতে হয়েছে তাকেও। মেরকেলের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ?এএফডির সমর্থকরা বলছেন, তাদের দলের এই ফলাফল অভিবাসন ও শরণার্থী ইস্যুতে মানুষের ভয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার জবাব মেরকেলকে। ‘ইউরোপের নেত্রী’ বলে পরিচিত মেরকেল গত দু’বছর ইউরোপ অভিমুখে নামা শরণার্থীদের জন্য তার দেশের সীমানা খুলে দিয়ে কট্টর-ডানদের ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছিলেন। খোদ দলেরই একটি অংশ তাকে কোণঠাসা করতে সচেষ্ট হয়।

ফল ঘোষণার পর সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে টানা ১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করতে থাকা মেরকেল বলেন, ‘আমরা আরও ভালো ফল আশা করেছিলাম। এখন এএফডিকে ভোট দেওয়া ভোটারদের মন জয় করতে তাদের চিন্তা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়গুলো শুনে কাজ করবো আমরা। ’

সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ পেলেও মেরকেলের সিডিইউ-সিএসইউকে গড়তে হবে জোট। বিগত সরকারের অংশীদার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি) ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে বিরোধী দলের আসনে বসার ঘোষণা দেওয়ায় এখন মেরকেলকে জোট গড়তে হবে অন্য কোনো দলের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সমমনা ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এফডিপি) ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টিকে কাছে টানতে পারেন তিনি। এক্ষেত্রেও অবশ্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে এফডিপি ও গ্রিন পার্টির অবস্থান মুখোমুখি হলেও এএফডিকে সামলাতে মেরকেলকে তাদের সঙ্গেই সরকার গঠন করতে হচ্ছে।

মেরকেল তার বক্তৃতায় বলেছেনও কট্টর-ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা। বলেছেন গণতান্ত্রিক রাজনীতি দিয়ে কট্টরপন্থিদের মোকাবিলার কথা।

মেরকেলেরই সুর আসছে বিরোধী দলের আসনে বসার ঘোষণা দেওয়া এসডিপির নেতা মার্টিন শুলজের কণ্ঠ থেকেও। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘শরণার্থী নিয়ে রাজনীতি করে জার্মান সমাজকে আপাত বিভক্ত করা হলেও জনগণকে সঙ্গে নিয়েই কট্টরপন্থিদের বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে-বাইরে লড়বে এসডিপি। ’

অভিবাসী-শরণার্থীবিরোধী এএফডির বিরুদ্ধে সিডিইউ-এসডিপির পাশাপাশি সাধারণ জনগণও রাস্তায় নেমেছে। ফলাফল প্রকাশের পরই বার্লিনের কেন্দ্রস্থল আলেক্সান্ডার স্কয়ারে এএফডির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে হাজারো তরুণ-তরুণী।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠাকালে এএফডি ইউরো-বিরোধী থাকলেও পরে তারা শুরু করে অভিবাসন ও ইসলামবিরোধী রাজনীতি। দলটি মসজিদের মিনার নিষিদ্ধ করার দাবির পাশাপাশি ইসলামকে জার্মান সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান বলে ঘোষণা দেয়। তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারণায় ছিল ‘ইসলামীকরণ বন্ধ কর, এএফডিকে ভোট দাও’। তাদের প্রচারণায় বোরকা নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়। সংসদে ঢুকে এখন এএফডি মেরকেলের সরকারকে সেসব ইস্যুতেই বেকায়দায় ফেলতে চাইবে তারা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারণেও প্রভাবিত করতে পারে সরকারকে।

এএফডির এই উত্থানের বিষয়ে জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ প্রকৌশলী রাফিউল সাব্বির বাংলানিউজকে বলেন, ‘এএফডির ব্যালটে ভোট বেশি পড়েছে সেসব অঞ্চলের ভোটারদের, যেখানে শরণার্থী এবং বিদেশির সংখ্যা কম। তারা তাদের ট্যাক্সের টাকায় এতো বিপুলসংখ্যক শরণার্থী লালন-পালন করতে রাজি নয়, যদিও অনেক শহুরে জার্মানই শরণার্থীদের পেছনে খরচ লাগলে আরও বেশি ট্যাক্স দিতে প্রস্তুত। ’

নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর এএফডির নেতৃত্বের উচ্ছ্বাস
সাব্বির বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে অভিবাসী-শরণার্থীবিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের ক্ষমতা দখল, ফ্রান্সেও গোঁড়া ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের বিপুল ভোটলাভের পর এএফডি’র এই উত্থান উদ্বেগজনক। পৃথিবীর সব দেশেই এই নব্য ডানপন্থিদের মূল এজেন্ডা হলো ইমিগ্র্যান্ট হটানো, রিফিউজিদের না রাখা ইত্যাদি। এই নির্বাচনকে এককথায় প্রকাশ করলে দাঁড়ায়, জার্মানরা আবার বিভক্ত হচ্ছে। জঙ্গিবাদের উত্থান, রিফিউজি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো এই নির্বাচনে সিডিইউ ও এসপিডির সিট কমে যাওয়া এবং এএফডির মতো কট্টর ডানপন্থিদের সিট বেড়ে যাওয়া। ’

তবে মেরকেলের দল সরকারে থেকে এবং এসপিডি বিরোধী দলে থেকে একসঙ্গে লড়লে এএফডির অভিবাসী ও শরণার্থীবিরোধী তৎপরতায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে বলে মনে করেন অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।