ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফ্লাইট বিএস২১১: বিপজ্জনক বিমানবন্দরটিতে অবতরণই ভীতিকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮
ফ্লাইট বিএস২১১: বিপজ্জনক বিমানবন্দরটিতে অবতরণই ভীতিকর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে। ছবি: সংগৃহীত

হিমালয় কন্যা নেপালের পাহাড় ঘেরা পরিবেশে কাঠমান্ডু উপত্যকায় অবস্থিত ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে। এটি বিশ্বের অন্যতম একটি বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবেও পরিচিত। তাই সেখানে প্রতিবার অবতরণই বেশ ভীতিকর। 

এবার আলোচনা হচ্ছে, ভীতিকর এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। প্রায়ই সেখানে প্লেন দুর্ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ সোমবার (১২ মার্চ) বিএস ২১১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হলে নতুন করে ফের বিশ্বজুড়ে আলোচনায় ত্রিভুবন বিমানবন্দর।  

জানা যায়, বিমানবন্দরটিতে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো ফ্লাইট ওঠা-নামার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু প্লেনই নয়, ঘটেছে হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাও। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে ছয়শ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রিভুবন বিমানবন্দরের দুর্বলতার চিত্রটি নতুন নয়। সোমবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস ২১১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এটি আবারও নতুন করে চোখে পড়েছে।  

প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার পরই নেপালে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগটি আসে বলে মনে করেন তারা।  

সর্বশেষ ফ্লাইট বিএস ২১১ বিধ্বস্ত হওয়ার পরও বিমানবন্দরের এটিসি নিয়ে অভিযোগ করেছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও ইমরান আসিফ।  

তিনি বলেন, প্লেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের এটিসির গাফিলতি থাকতে পারে।    

জানা গেছে, ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নিয়মিত প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই একটি দুর্ঘটনা ঘটে। সেটি ১৯৭২ সালের মে মাসের ঘটনা। থাই এয়ারওয়েজের একটি প্লেন অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে।  

ওই ফ্লাইটটিতে ১০০ জনের মতো যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন। যাদের মধ্যে একজন নিহত হন। ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্যে বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন এয়ারবাসটির ১১৩ জন যাত্রীর সবাই।

একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হয় আরও একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পাকিস্তানের (পিআইএ) একটি যাত্রীবাহী প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ১৬৭ জনের সবাই প্রাণ হারান।

আর ১৯৯৫ সালে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন বেষ্টনী ভেঙে মাঠের ভেতরে ঢুকে যায়। তাতে মৃত্যু হয় দু’জনের।  

আর ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পড়ে জামার্নির লুফথানসার একটি ফ্লাইট। বিমানবন্দর থেকে ওড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয় এয়ারক্র্যাফটি, এতে নিহত হন পাঁচজন।  

এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্ঘটনায় পড়ে কাঠমান্ডুভিত্তিক নিকন এয়ারের একটি প্লেন। বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি টাওয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে কাঠমান্ডু থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি প্লেনটি অরণ্যে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১০ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রুর সবাই নিহত হন।

২০১১ সালে বুদ্ধ এয়ারের একটি প্লেন বিমানবন্দরের দিকে এগিয়ে আসার সময় দুর্ঘটনায় মারা যান ১৯ জন। আরোহীর মধ্যে একজন প্রথমে প্রাণে বাঁচলেও তিনি হাসপাতালে মারা যান।  

২০১২ সালে নেপালের সিতা এয়ারের একটি প্লেন উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। এতে ১৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান। ২০১৫ সালে দুর্ঘটনায় পড়ে তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন।  

বলা হয়, ঘন কুয়াশার মধ্যে নামতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে ফ্লাইটটি। ৩০ মিনিট ধরে এটি বিমানবন্দরের উপর উড়তে থাকে। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় নামতে পারলেও সেটি রানওয়ের থেকে ছিটকে মাঠের ঘাসের উপর চলে যায়। তবে ২২৭ জন যাত্রীকে সেখান থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

২০১৭ সালের মে মাসে সামিট এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন দুর্ঘটনায় পড়ে। আর সর্বশেষ বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস ২১১ ফ্লাইটটি।  যাতে প্রায় ৫০ জন আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮
এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।