কাজের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করে দেখানোতেই যেন তার তৃপ্তি। তিনি আবেদ মনসুর।
আরও পড়ুন: বনানী-বিমানবন্দর হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক
সম্প্রতি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের অফিসে এসেছিলেন আবেদ। সেই একই সাদামাটা ভাব। বললেন, ‘আমি ফরমাল কিছু বলতে পারি না। শুধু মিলে গল্প করতে পারবো। ’
সেই গল্প.. কিভাবে সড়কের পাশে আগাছা, ঝোপঝাড়ে ভরা ফুটপাতকে বদলে সাংহাই শিকাগো সিঙ্গাপুরের মত বানানো যায়, তার পরিকল্পনা।
আবেদ মনসুর যে এই প্রথম কোন সড়কের বিউটিফিকেশন এর কাজ করছেন তা নয়। কয়েক বছর আগে জাহাঙ্গীর গেট থেকে বনানীর সড়কপথের দুই পাশেও সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করেছিলেন। এখনও ওই রাস্তাটুকুর সৌন্দর্য্য দেশের অন্য যেকোন সড়কের থেকে আলাদাই মনে হয়।
তবে এবার আরও বড় মিশনে তিনি। বদলে দিচ্ছেন বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কপথ। তবে স্বপ্নের দিগন্ত আরও বহুদূর বিস্তৃত। সারাদেশে উল্লেখযোগ্য অনেক সড়কপথেই এমন বিউটিফিকেশনের পরিকল্পনা আছে তার।
আরও পড়ুন- সাংহাই-সিঙ্গাপুর ধাঁচের সড়ক বনানী-বিমানবন্দরে
শুধু সড়ক নয়, রেলস্টেশনগুলোর অভ্যন্তরেও আধুনিকায়নের কাজ করতে চান তিনি। পাশাপাশি স্টেশনগুলোকে উন্নত বিশ্বের মত ডিজিটাল ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে চান তিনি।
জানালেন, বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়ককে প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ডিজিটাল করে দেবেন তিনি। সড়কে থাকবে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই। অর্থাৎ এই সড়ক পথে প্রবেশ করা মাত্রই যাত্রীরা বিনামূল্যে ওয়াইফাই সেবার আওতায় চলে আসবেন। এছাড়া থাকবে ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি। এসব যাত্রী ছাউনিতে মোবাইল চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও থাকবে এটিএম বুথ, ডিজিটাল স্ক্রিন; যেখানে দেখানো হবে এই রুটে যেসব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলে তার বিবরণ। আর এসব করতে গিয়ে সরকারের কোন টাকাই নেবেন না, তার নিজের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড-এর খরচে এসব করে দিতে সক্ষম তিনি!
তবে তার পথ মসৃণ নয়! প্রথমবারের মতো এসব কাজ করতে গিয়ে কারও কারও ‘ইগো প্রবলেম’এর মুখে পড়ছেন। আলাপকালে এমন কথাও জানালেন আবেদ মনসুর। তবে এসব বাধা তুচ্ছ করেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বললেন, সড়ক ও জনপথ থেকে শতভাগ সহযোগিতা পাচ্ছি। একজন ডায়নামিক মিনিস্টার (ওবায়দুল কাদের) এই মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আছেন। সৃষ্টিশীল কাজে তার সহযোগিতা অনুপ্রাণিত করছে।
কিন্তু অন্য অনেক জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হয়। ফাঁকা বুলি ছুড়ে অনেকে ফেসবুক গরম করে ফেলছেন। কিন্তু বাস্তবে চোখে পড়ার মতো কোন সৃষ্টিশীল কাজ দেখাতে পারেন না। এরাই মূলত আমার মত লোকদের নানাভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। ’-বলছিলেন আবেদ মনসুর।
তবে ‘পাছে লোকে কিছু বলবেই’-এটা জেনেই আবেদ এগিয়ে যাচ্ছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর ঢাকার ভিআইপি সড়কপথের আমূল পরিবতন করছেন তিনি। তাও আবার ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে। এতে সরকারের কোন ব্যয় হচ্ছে না। আবেদের মতে, ঢাকায় এমন কর্তৃপক্ষ অনেক আছে যারা এমন কাজ আরও আগে করতে পারতো। সেই সুযোগ ও সামর্থ্য তাদের ছিলো। কিন্তু তাদের সদিচ্ছার অভাব।
আরও পড়ুন- দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক মার্চে
আবেদ যে কাজ করছেন সেটি জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারপরে ক্ষমতায় এসে করেন। কিন্তু কোন জনপ্রতিনিধি না হয়েও সাধারণ একজন নাগরিক হয়ে তিনি এমনটা করে দেখাচ্ছেন।
প্রশ্ন ছিলো, ভবিষ্যতে এমন সুযোগ এলে কি করবেন- জবাবে সোজা উত্তর। ‘জনপ্রতিনিধি হলে আরো সহজে এসব করতে পারতাম। তবে সুযোগ পেলে দেখাতে চাই.. চাইলে যে একজন জনপ্রনিধি কি কি করতে পারে। কাজের মাধ্যমে আমি মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকতে চাই এমনভাবে যাতে আমার নাতি নাতনির প্রজন্মটাও আমাকে মনে রাখে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭
এসএ/আরআই