ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাইব্যুনাল

মৃত ব্যক্তির বিচার, ময়মনসিংহের এসপির নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
মৃত ব্যক্তির বিচার, ময়মনসিংহের এসপির নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা

ঢাকা: মারা যাওয়ার পরেও পলাতক দেখিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার রাজাকার ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নূরুল ইসলাম।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তলবে হাজির হয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিনের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তিনি। বেলা বারটার পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

 

গত ৩১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের এসপিকে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শককেও (আইজিপি) ব্যাখ্যা দিতে বলেন।


ওয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে একই মামলায় ফুলবাড়িয়ার আলবদর সদস্য রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ধার্য ছিল ওইদিন। প্রসিকিউশনের আবেদনে ওয়াজ উদ্দিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সেটিও পিছিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।

পরে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গত ১১ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করে। যাতে বলা হয়, ‘মৃত ব্যক্তিকে পলাতক ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে যুদ্ধাপরাধী ওয়াজ উদ্দিনের। এমনকি তার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আইনজীবীও’।

পরদিন গত ১২ জানুয়ারি কিভাবে মামলাটি চলছে, সে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন মৌখিকভাবে প্রসিকিউটরদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

ওই সময় আদালতে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও ঋষিকেষ সাহা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘একটি অনির্ধারিত বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, তারা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, একজন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা চলছে, কিভাবে চলছে?’ জবাবে আমরা বলেছি, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি’।

‘এ বিষয়ে আদালত বলেছেন, এটি আইনবিরুদ্ধ কাজ’।  

এরপর গত ১৯ জানুয়ারি ওয়াজউদ্দিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আবেদন জানান এ মামলার প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা।

টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অভিযোগ গঠনের ৭ মাস আগেই মারা গেছেন তিনি। সাবেক আইনমন্ত্রীর মত, ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি না জানানোয় সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তা দায় এড়াতে পারেন না’।

‘একাত্তরের হত্যা, গণহত্যা মামলার আসামি ওয়াজ উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের অক্টোবরে তদন্ত শুরু করেন তদন্ত সংস্থা। শুরু থেকেই পলাতক দেখিয়ে তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও ট্রাইব্যুনালে রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ’।

‘এমন প্রেক্ষাপটে গত ১১ ডিসেম্বর ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে তার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে আসামিকে নিয়ে এতো তৎপরতা, সে আসামি মারা গেছেন প্রায় ৮ মাস আগে। এমনকি স্থানীয় থানাকে বিষয়টি অবহিত করার কথাও জানিয়েছে আসামির পরিবার’।

‘আসামির ভাই বলেন, ‘আমার বড়ভাই ওয়াজ উদ্দিন মারা গেছে। তার নামে যুদ্ধাপরাধের মামলা আছে শুনেছি। এখন কি অবস্থায় আছে এটা আমরা জানি না’।
 
‘সবচেয়ে মজার ঘটনা হচ্ছে, মৃত্যুর ২ দিন পর তাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আদেশ আসে ট্রাইব্যুনাল থেকে। সাবেক আইনমন্ত্রীর মতে, প্রসিকিউশনের তথ্যের ভিত্তিতে এমন আদেশ। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তার দায় রয়েছে’।

‘একটি সনদে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৭ মে ওয়াজ উদ্দিন মারা যান’।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।