ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আদালত

উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কে? সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: আইনমন্ত্রীর দেওয়া নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার খসড়ায় ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ শব্দ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

রোববার (৩০ জুলাই) সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। উনি খসড়া দিয়ে গেলেন।

আমি তো খুশি হয়ে গেলাম। যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটা কী! এখানে বলা হলো ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’। এটার মানে কী? সব আইনে ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু এখানে কোনো ব্যাখ্যা নেই।

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে আপিল বিভাগ বলেন, খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত তারিখে বিধিমালার গেজেট কার্যকর হবে। অথচ মাসদার হোসেন মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে পরামর্শ মোতাবেক গেজেট হবে। আমরা যেটা বলেছি তার উল্টোটা খসড়া করে পাঠিয়েছেন। রায়ের ১৬ বছরে এটা হয়নি। আর সরকার নির্ধারিত তারিখে গেজেট হলে ১৬শ বছরেও হবে না!

আপিল বিভাগ আরও বলেন, এখানে বলা হলো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত হবে। তাহলে হাইকোর্টের কি থাকলো না। সব মন্ত্রণালয়ের। ১৮৬১ সালে কলকাতা হাইকোর্ট হয়েছে। তখন থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন। এ ব্যবস্থা চলে আসছে। হাইকোর্ট কেন রাখবেন। হাইকোর্ট উঠিয়ে দেন। ... এখনতো কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কোনো ক্ষমতা নেই।

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেন, আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম আইনমন্ত্রী আসায়। খসড়া দিয়ে যান তিনি। প্রেসে বক্তব্য দিয়েছেন হয়ে গেছে। কিন্তু কি রকম হলো।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি বিদেশ যাওয়ার সময় মন্ত্রণালয় জিও দেয়। জবাবে আদালত বলেন, আপনি তাহলে অ্যাভয়েড করছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না। আদালত বলেন, উনি (আইনমন্ত্রী) এখান থেকে যাওয়ার পর কম্পিটলি ইউটার্ন দেখলাম।  

আদালত বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতি পর্যন্ত দুপুর ২টা থেকে আমি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা পর্যন্ত আপনাদের (সরকার) সময় দেবো। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যেকোনো এক্সপার্ট আসবেন, বৈঠকে বসবো।

পরে আদালত আদেশের জন্য ৬ আগস্ট নির্ধারণ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিধিমালার খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। এটি এখন তিনি দেখবেন। পরে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

গত রোববার (২৩ জুলাই) রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন মঞ্জুর করে এ গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর আগে গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।

এরও আগে গত ০২ জুলাই এক অনুষ্ঠান শেষে ১৫ জুলাইয়ের আগেই প্রকাশিত হবে বলে সাংবাদিকদের কাছে আশা প্রকাশ করেছিলেন আইনমন্ত্রী। ওইদিনই সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের করা দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, ‘এটিই লাস্ট চান্স’।

১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।

বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে ক্ষোভ, বৈঠকে বসার প্রস্তাব

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা,জুলাই ৩০, ২০১৭
ইএস/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।