বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সমালোচনামূলক প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নজরে আনার পর এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এজলাসে বসলে কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তার নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনও এ বক্তব্যের সপক্ষে বক্তব্য দেন।
প্রধান বিচারপতি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। আপনারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বলছেন। তবে রায় ঘোষণার পর সমালোচনাকে স্বাগত জানাবো। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা না করলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হলে কোনো রাজনীতি আনবেন না। আমরা রায় দিয়ে দিয়েছি। বিচার বিভাগ কোনো রিজয়েন্ডারও দেবেন না’।
জয়নুল আবেদীন তখন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলছি’।
এ সময় আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আমরা সচেতন, আমরা দেখছি’।
বুধবার (০৯ আগস্ট) ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সংসদকে অপরিপক্ক বলে সমালোচনা করা হয়েছে। এটা তো ঠিক নয়, উচিৎ নয়’ বলে মন্তব্য করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন আইন কমিশনের ওই বক্তব্যকে ‘আদালত অবমাননাকর’ উল্লেখ করে আদালত অবমাননার রুল জারির কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অনুরোধ জানাবো, আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যা সবার জন্য মঙ্গলকর। সরকার বা বিরোধী দল- কারো ফাঁদে পড়বো না, আমরা সচেতন। সাতজন বিচারপতি চিন্তা-ভাবনা করে রায় দিয়েছি। রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না’।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আদালতকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে’।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যেন কেউ ফায়দা লুটতে না পারেন। আপনারা আরও সচেতন হবেন’।
এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান দায়িত্বশীল পদে আছেন। তিনি এভাবে বলতে পারেন না’।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উই কনসার্ন’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ওই বক্তব্য অবমাননাকর’।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা যে কেউ করতে পারেন। একদিন ইতিহাস বিচার করবে’।
গত ০১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ০৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে মূল রায়টি দিয়েছিলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। সর্বোচ্চ রায়ের ফলে প্রথম দফার মহাজোট সরকারের আমলে আনা সংশোধনীটি বাতিল হয়ে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে চলে এসেছে।
রায়ের পরে গত ০৬ আগস্ট প্রথম সভাও করেছেন পুনর্বহাল হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৮
ইএস/বিএস/এএসআর