ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ইভিএম ত্রুটির সমাধান এখনো পায়নি ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৪
ইভিএম ত্রুটির সমাধান এখনো পায়নি ইসি

ঢাকা: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি ত্রুটির কারণে ভোটগ্রহণ বাতিল করতে হয়েছিলো। কিন্তু নির্বাচনের ১৬ মাস পরও সে ত্রুটির কারণ নির্ণয় এবং সমাধান বের করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।


 
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ১৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করে ইসি। কিন্তু সে সময় রাজশাহীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রের একটি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট নেওয়া হলেও সেসব ভোট আর গণনা করা যায়নি। মেশিনটির কন্ট্রোল ইউনিটে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় পুরো নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশেও বিলম্ব হয়। এতে পুরো নির্বাচন প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।

শুধু তাই নয়, সেদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি দল ইসিতে এসে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের কাছে রাজশাহী সিটির ফলাফল বিলম্বের কারণ জানতে চান। এক পর্যায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেও আবু হাফিজকে ফোন করেন। এরপর ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী ইভিএমের যান্ত্রিক ত্রুটির ব্যাখ্যা দিলে তারা শান্ত হন।

রাত ২টায় ওই সিটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিলো। তবে কাউন্সিলর পদের জন্য ওই কেন্দ্রে আবার ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হয়। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪১৮টি আর ওই কক্ষের ভোট সংখ্যা ছিলো ৩১০টি।
 
জানা গেছে, ইভিএম প্রস্তুত ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। কিন্তু মেশিনটি নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে কয়েকবার চিঠি দিয়েও বুয়েটের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পায়নি ইসি। তবে বুয়েট ছাড়া অন্য কোনো বিশেষজ্ঞ টিমের সহায়তা নেওয়ারও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে এতোদিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণ ও সমাধান বের করতে পারেনি ইসির তথ্য, যোগাযেগ ও প্রযুক্তি (আইসিটি) শাখা।

ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। যদিও এখন পর্যন্ত নিজস্ব কোনো এক্সপার্ট টিম গঠন করতে পারেনি ইসি। এ অবস্থায় এ যন্ত্রে ভোটগ্রহণ কতোটুকু সফলতা আনবে তা নিয়ে খোদ ইসি কর্মকর্তারাই প্রশ্ন তুলছেন।
 
তবে এ বিষয়ে ইসির আইসিটি শাখার প্রধান, সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বুয়েটের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা লিখিভাবে এ নিয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। তাই আগামী ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গে একটি বৈঠক করা হবে। সেখানেই এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে সমস্যা ও সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আশা করি, দেরিতে হলেও ভালো ফল পাবো।
 
ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, বুয়েট ত্রুটি সমাধানে কোনো সাড়া না দেওয়ায় আমরা বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে তারা যেহেতু মেশিনগুলো প্রস্তুত করেছে এবং স্বত্ত্ব কেনা হয়নি, তাই তাদের ওপরে বাধ্য হয়েই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।
 
এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত নির্বাচন কমিশন ২০১০ সালে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়ার প্রচলন সীমিত আকারে চালু করে। সে সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৩০টি মেশিন ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য পায় ইসি। কিন্তু এরপর যতোটি নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই কোনো না কোনো মেশিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছিলো। সেগুলো আবার সারিয়েও তোলা হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী সিটি নির্বাচনে সৃষ্ট সমস্যা বড় বিধায় তার সমাধান এখনো বের করতে পারেনি ইসি।
 
বুয়েটের কাছ থেকে দু’দফায় ৫৩০টি এবং বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ৭০০টি ইভিএম কিনেছিলো নির্বাচন কমিশন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।