ঢাকা: দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) উদ্ভাবন করলে বিনিয়োগ করবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে কপিরাইট বিক্রি করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব সিরাজুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
এর আগে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন উদ্ভাবিত ইভিএমের কার্যকর দিক খতিয়ে দেখতে এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠান ও পরে বৈঠক করে ইসি। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য কমিশনার, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ত্রুটি সারাতে বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অনেকবার দরকষাকষি করার পরেও তারা সাড়া দেয়নি। তাই যে কেউ চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি সুবিধাসম্মত ইভিএম প্রস্তুত করে দিলে বিনিয়োগ করবে ইসি।
‘এক্ষেত্রে দুটো পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে। একটি হচ্ছে- কপিরাইটসহ মেশিন বানিয়ে দেবে আমরা বিনিয়োগ করবো। অন্যটি হচ্ছে- বানানোর পর আমরা কপিরাইট কিনে নেব। এভাবে চুক্তির মাধ্যমে করা অন্যের ইভিএম নেওয়া যেতে পারে। ’
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত সার্ভার সিনক্রোনাইজ ইভিএম নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন ছাত্র এটা তৈরি করেছেন। তারা ফরমালি ইসিকে দেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো। তাই আজ এটা পর্যবেক্ষণ করে দেখল ইসি। তবে তাদের নির্বাচন নিয়ে কোনো ধারণা নেই। নির্বাচন উপযোগী করে এটা তৈরি করা হয়নি। এছাড়া সার্ভার সিনক্রোনাইজ ইভিএম বাইরে থেকে হ্যাক করা যায়। এ ধরনের ইভিএম ইউরোপের অনেক দেশ এখন আর ব্যবহার করে না।
‘তাই তাদের ব্রিফ করা হয়েছে কী ধরনের ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী। সিইসি তাদের উৎসাহ দিয়েছেন। তারা এটা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। এটা যদি তারা উন্নয়ন করে কার্যকর প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারে তবে, তাদের ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আলোচনার একটা সুযোগ থাকবে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বুয়েট যেহেতু সহায়তা করেনি, তাই অন্য যে কেউ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন কার্যকর ইভিএম প্রস্তুত করলে ইসি তাকে সাধুবাদ জানাবে।
তাহলে আগের ইভিএমগুলো কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুব সহসা ইসির তথ্য প্রযুক্তি অণুবিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি টিম ভারতে পাঠানো হবে। কারণ ভারত আমাদের মতোই একই প্রযুক্তির ইভিএম ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছে। তাই নিজস্ব একটি বিশেষজ্ঞ টিম তৈরির জন্য ভারতের সহায়তা নেওয়া হবে।
২০১০ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন যন্ত্রে ভোট নেওয়ার প্রচলন শুরু করে।
সে সময় বুয়েটের কাছ থেকে ইভিএম প্রস্তুত করিয়ে নেয় ইসি। তখন বুয়েট তাদের উদ্ভাবিত মেশিনের কপিরাইট দেয়নি ইসিকে।
ফলে পরবর্তীতে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় এতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ইসি তা সারাতে পারেনি। বুয়েটও কোনো সহায়তা করেনি। সে কারণেই অন্যের উদ্ভাবিত ইভিএম ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
এ অবস্থায় সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত মেশিন যেন ভরসার আলো নিয়ে আসে। তাই, তাদের মেশিনটি পরীক্ষা করে দেখলো ইসি।
নতুন উদ্ভাবিত ওই মেশিনটি সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন করেন। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিলের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা এ প্রজেক্টটি সফল করে তোলেন। তাদের দাবি, প্রচলিত ইভিএমের চেয়ে এটি ভোট গ্রহণে অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪