ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রসঙ্গ ইভিএম: বুয়েট ছাড়া উপায় নেই

ইকরাম-উদ দৌলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫
প্রসঙ্গ ইভিএম: বুয়েট ছাড়া উপায় নেই ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় বিকল হওয়া ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনটি (ইভিএম) এখনো সচল করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যে কারণে কোনো নির্বাচনেই আর ইভিএম ব্যবহার করা যাচ্ছেনা।



তাই ভোট যন্ত্রগুলো সচল রাখতে প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কেই (বুয়েট) পাশে রাখতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
ইসি সূত্র জানিয়েছে, বুয়েটের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সঙ্গে ইভিএম তৈরির যে চুক্তি করা হয়েছিলো, তা আর নবায়ন করেনি বর্তমান কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। এ যন্ত্রটিকে ঘিরে বুয়েটের সঙ্গে যে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো বিগত এটিএম শামসুল হুদার কমিশন, বর্তমান কমিশন তাও রক্ষা করেনি। ফলে যন্ত্রটি বিকল হলেও আর কোনো সহায়তা দেয়নি বুয়েট।
 
এদিকে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বিগত কমিশন বুয়েটের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলো, সেটা ছিলো অনেকটা ওয়ান ম্যান শো। তাই আইসিটি বিভাগের সহায়তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই রাজশাহী নির্বাচনে যে ইভিএম মেশিনটি নষ্ট হয়েছিলো, সে মেশিনে সমস্যা সৃষ্টির কারণ ও সমাধান বের করা যাচ্ছে না।
 
জানাগেছে, বর্তমানে বুয়েটের বিকল্প খুঁজছে নির্বাচন কমিশন। এরইমধ্যে কারিগরি সহায়তা নেওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একটি টিম পাঠাচ্ছে ইসি। অন্যদিকে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
 
সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেছেন, অনেকবার দরকষাকষি করার পরেও বুয়েট সাড়া দেয়নি। তাই চাহিদা অনুযায়ী এবং নির্বাচন উপযোগী প্রযুক্তি সুবিধা সম্মত ইভিএম কেউ প্রস্তুত করে দিলে বিনিয়োগ করবে ইসি। এক্ষেত্রে দুটো পদ্ধতিতে এগুনো যেতে পারে। একটি হচ্ছে-স্বত্ত্বসহ মেশিন বানিয়ে দেবে,  আমার বিনিয়োগ করবো। অন্যটি হচ্ছে- বানানোর পর আমরা স্বত্ত্বসহ কিনে নেব। এভাবে চুক্তির মাধ্যমে করা অন্যের ইভিএম নেওয়া যেতে পারে।
 
এ ভাবনার অংশ হিসেবেই গত ডিসেম্বরে সিলেট মেট্রোপলিট্রন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা সার্ভার সিনক্রোগনাইজ ইভিএম পরীক্ষা করে দেখেছে ইসি।
 
এ বিষয়ে বাংলানিউজকে ইভিএম প্রচলনের সময় দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সময় ইভিএম ব্যবহার করে বেশ সাফল্য পেয়েছিলাম। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটিতে এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। পরে ২০১২ সালে কুমিল্লাতে পুরো সিটি নির্বাচনই ইভিএমে করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমান কমিশন বুয়েটের সঙ্গে সে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি বলেই ইভিএম মেশিনের ব্যবহার আর বাড়াতে পারেনি।
 
বিগত কমিশনের সময় ওয়ান ম্যান শো চুক্তি কেন করা হয়েছিলো আর যন্ত্রটির সফটওয়্যারের পেটেন্ট বা স্বত্ত্ব কেন কেনা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকগুলো কাজ সে সময় করতে হয়েছে। পেটেন্ট বা স্বত্ত্ব কেনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে আর আমরা সময় পাইনি। আমাদের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
 
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান কমিশন বুয়েটের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা তো করেইনি বরং বুয়েটের পরামর্শকেও এড়িয়ে গেছে। তারা ইভিএমে দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করছে। যা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সমর্থন করেনি। এছাড়া প্রস্তুতকারীই জানে তার উদ্ভাবিত যন্ত্র কিভাবে ভালো আউটপুর দেবে। তাই বর্তমান ইসির এ সিদ্ধান্তটিও ভুল ছিলো। আবার আমরা স্বত্ত্ব কেনার সময় পায়নি, কিন্তু বর্তমানে যারা আছেন, তারা তো করতে পারতেন। কিন্তু তারাই বা কেন এ কাজটি করেনি। এখন বিকল যন্ত্র সচল করতে হলেও বুয়েটকেই লাগবে। কেননা, ওরাই যন্ত্রটির ডিজাইন, সফটওয়্যার থেকে শুরু করে সবটুকু জানে। তাই বুয়েট ছাড়া উপায় নেই।
 
এদিকে বারবার তাগাদা দেওয়া স্বত্ত্বেও বুয়েটের আইসিটি বিভাগ সহায়তা না করায় বর্তমানে বিকল ইভিএমটি বুয়েটেরই ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কলসাল্টেশন-বিআরটিসিতে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলছেন, এখনো চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, বুয়েটের আইসিটি বিভাগ যন্ত্রটি তৈরি করেছে। কাজেই তারাই পারবে যন্ত্রটির বিকল হওয়ার কারণ ও তার সমাধান বের করতে।
 
বর্তমান কমিশন আগামীতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করতে চায়। তবে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এ যন্ত্রটি ব্যবহার করবে না। একজন নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন, বিকল মেশিনটির ত্রুটির সমাধান না করা পর্যন্ত এ যন্ত্রে ভোট নেওয়া হবে খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ দুটি সিটি নির্বাচন ইভিএম ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
 
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ও বুয়েটের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ২৩০টি ইভিএম তৈরি করে নিয়েছিলো ইসি। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার কয়েকটি মেশিনের ত্রুটি দেখা দিলেও তা সমাধান করেছিলো ইসি। কিন্তু ২০১৩ ‍সালএ  রাজশাহী সিটি নির্বাচনের সময় একটি মেশিন বিকল হলে তা এখনো সচল করা যায়নি। ফলে সাম্প্রতিক সব নির্বাচনে এ যন্ত্রে ভোটগ্রহণ এড়িয়ে চলছে ইসি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।