ঢাকা: প্রদেশিক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে একমত নন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশের জন্য একীভূত অর্থনীতি ভালো।
তিনি বলেন, ‘জেলা সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও জেলা সরকার গঠনে সম্মতি দিয়েছেন। ’
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে নর্থ বেঙ্গল ডেভলপমেন্ট ফোরাম আয়োজিত ‘উত্তরাঞ্চলের উন্ন্য়ন ও বাজেট’ র্শীষক এক সেমিনারে প্রাদেশিক সরকার গঠনে সুপারিশ করা হলে তিনি এ কথা বলেন।
সংগঠনের আহবায়ক শাহরিয়ার আলম এমপির সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আছাদুজ্জামান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার তুলনায় জেলা সরকার গঠিত হলে আঞ্চলিক উন্নয়ন সাধিত হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারসাম্য আসবে। পাশাপাশি জেলা সরকারের কার্যক্রম শুরু হলে ‘উন্নয়ন হচ্ছে না’ এবং ‘বৈষম্য করা হচ্ছে’ এমন অভিযোগ কমে যাবে। ’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সরকার ৪০টি বিষয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করে। এর থেকে ১৭/১৮টি কাজ জেলা সরকারের কাছে স্থানান্তর করা সম্ভব। ’
এদিকে সেমিনারে নর্থ বেঙ্গল ডেভলপমেন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে মোট ৩৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহ, বিভিন্নমুখী শিল্পের বিকাশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভারতে ইট রপ্তানি বন্ধ করা, শিক্ষার বিকাশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আইটি ভিলেজ স্থাপন।
সেমিনারে উত্তরাঞ্চলের সরকার দলীয় এমপিদের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী।
সেমিনারে বক্তরার বলেন, উত্তরবঙ্গ অনেক দিন ধরেই অবহেলিত হয়ে আসছে। বৈষম্যের শিকার হয়েছে এ অঞ্চলের জনগণ। তাই দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর সঙ্গে এর অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সরকারে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পুরণ করে এলেও এ অঞ্চলের উন্নয়নে সরকার তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে সেমিনারে বক্তারা অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, উত্তরাঞ্চল বঞ্চিত হয়েছে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ন্যায্য হিস্যা থেকে। তাই ভবিষ্যতে সরকারকে উত্তরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
দুপুর ১১টায় শুরু হওয়া এ সেমিনারে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার সরকার দলীয় সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, সরকারি আমলা এবং এনজিও নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই আর্থমন্ত্রী তার ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটা আমার জন্য ব্যর্থতা যে ২০০২ সালের পর আমি উত্তরবঙ্গে যাইনি। ’
আসন্ন বাজেটে উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের সুপারিশের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অনেক দেরি করে ফেলেছেন। এ আলোচনা অনেক আগে হলে আমি কিছু করতে পারতাম। ’
তবে তিনি উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবারহের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিবেচনা করব। ’
এছাড়া এ সুপারিশের মধ্যে থেকে আরও কয়েকটি কাজ করার আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কয়লানীতি বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে সরকার কিছু করতে পারছে না। কারণ এ নীতি বাস্তবায়ন হলেও তা কার্যকর করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ বছর লেগে যাবে। ’
তবে কয়লা উত্তলন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
কয়লা উত্তলন হবে কি হবে না সে ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার গঙ্গা ব্যারেজের কাজ শুরু করেছে। এছাড়া রংপুর বিভাগের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। ’
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পুরো উত্তরাঞ্চল অনেক পিছিয়ে। কৃষিভিত্তিক শিল্প উন্নয়নে এই অঞ্চলে গ্যাস সরবারহ, কয়লা উত্তোলন ও কয়লানীতির বাস্তবায়ন, শিল্প পার্ক স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।
সেমিনারে ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান এমপি, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আবদুল মান্নান এমপি, ইসরাফিল আলম এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জিয়াউর রহমান টুকু, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, বাপেক্স এমডি মোর্তজা আহমেদ ফারুক, নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স সভাপতি শামসুল হক, বরেন্দ্র ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়্যারমান নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডু বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জিয়াউর রহমান এমপি, আবদুল ওয়াদুদ এমপি, একেএম মাইনুল ইসলাম এমপি ও অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা এমপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১১