সোনার বাংলা এক্সপ্রেস থেকে: ‘...ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই?’ কবি শামসুর রাহমানের লেখা এই ছড়ার প্রশ্নটির উত্তর হতে পারে ‘চট্টগ্রাম’। ট্রেনের বাড়ি চট্টগ্রাম।
রোববার (২৬ জুন) সকাল ঠিক ৭টায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করলো বহুল কাঙ্ক্ষিত বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’।
ঝকঝকে চকচকে ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে সোয়া ৭টার মধ্যে বনানী ছাড়িয়ে ৭টা ২৫ মিনিটে পৌঁছে যায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। এরপর আর কোনো স্টপেজ নেই, গন্তব্য সেই ‘ট্রেনের বাড়ি চট্টগ্রাম’।
আগের দিন শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলা ট্রেনটির উদ্বোধন করেন। লাল-সবুজ আর সাদা রঙের সেই ট্রেন এখন ছুটছে চট্টগ্রামের পথে। বাংলাদেশের রেল জগতে সোনার বাংলাই এখন সবশেষ এবং সর্বাধুনিক বিলাসবহুল ট্রেন। জানালার গ্লাস দিয়ে না তাকালে যাত্রীরা ট্রেনটির থামা থেকে শুরু করে ৭২ কিলোমিটার গতিতে চলার কোনো অনুভূতিই পাবেন না।
বাংলানিউজকে এমন আরামদায়ক যাত্রার সুখবর আগেই জানিয়েছিলেন সোনার বাংলার পরিচালক ফারুক আহমদ ও কামাল ইউ আহমেদ।
সেই আরামদায়ক যাত্রার উচ্ছ্বাসই যেন ঝরছিলো প্রথম যাত্রার সৌভাগ্যবান যাত্রীদের মুখে। ঢাকায় বেড়াতে এসে চট্টগ্রামে এই ট্রেনে ফিরছেন কাস্টম ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট ব্যবসায়ী চিরঞ্জিত চৌধুরী ও উর্মিলা চৌধুরী দম্পতি।
পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ট্রেনেও একাধিক যাত্রার অভিজ্ঞতা আছে তাদের।
চিরঞ্জিত চৌধুরী সংক্ষেপে উত্তর দিলেন, ‘এটা ভেরি স্পেশাল মনে হচ্ছে। সিটগুলো ভারতের ট্রেন থেকেও অনেক সুন্দর। যেহেতু দ্রতগামী বলেছে, আশা করছি টাইমটা মেনটেইন করবে। ’
আর উর্মিলা চৌধুরী বললেন, ‘যেভাবে দেখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাতে ভালো লেগেছে। আসলে এটা খুব দরকার। ’
এমন প্রত্যাশা প্রকাশের পর তাদের ছেলে হৃদয়কে বলতেই হলো, ‘গুড লাক। এনজয় ইওর জার্নি। ’
হৃদয় তখন উপভোগ করছে ট্রেনের জানালার ঝকঝকে কাঁচের ওপারে রাজধানী ঢাকার দৃশ্য।
সোনার বাংলায় রয়েছে দু’টি এসি স্লিপিং চেয়ার, চারটি এসি চেয়ার, সাতটি শোভন চেয়ার, একটি খাবার গাড়ি এবং একটি পাওয়ার কার। প্রতিটি এসি চেয়ারে ৫৫টি সিট, প্রতিটি এসি স্লিপিংয়ে ৩৩টি এবং প্রতিটি শোভন চেয়ারে ৬০টিসহ আসন রয়েছে সর্বমোট ৭৪৬টি।
এসব আসনে যাত্রীদের ভাড়া গুণতে হবে যথাক্রমে এসি স্লিপিং চেয়ারে ১২০০ টাকা, এসি চেয়ারে ১ হাজার টাকা আর শোভন চেয়ারে ৬০০ টাকা।
সোনার বাংলায় প্রতিটি আসন পর্যাপ্ত জায়গা নিয়ে করা হয়েছে। শোভন থেকে শুরু করে স্লিপিং- প্রতিটি আসনে যাত্রীরা যেন আরামে বসতে পারেন, সেজন্য এক আসন থেকে আরেক আসনের যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। আর কাপড় নয়, লেদারের কোমল আসন এসি ও শোভন সিটগুলোতে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ৭০১ নম্বর ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে। আর ৭০২ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা থেকে বিকেল ৩টায় ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে রাত সাড়ে ৮টায়।
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের রুটে নতুন যাত্রা করা এ সোনার বাংলা এক্সপ্রেস শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছুবে। আবার চট্টগ্রাম থেকে বিকেল ৫টায় ছেড়ে রাত পৌনে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছুবে।
এই ট্রেনের সঙ্গে একটি খাবার গাড়ি আছে। আছে নামাজের কক্ষ। যাত্রীরা খাবার গাড়ি ও নামাজের কক্ষে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। খাবার ঘরে রাখা আছে সুনির্দিষ্ট মূল্য তালিকা। কোনো অভিযোগ বা সুপারিশ থাকলেও তা অবহিত করা যাবে।
ট্রেনের ঘোষণায় বলা আছে খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ট্রেনের ঝুড়িতে ফেলার কথাও।
** সবই আছে, নেই শুধু ওয়াইফাই
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬/আপডেট ০৮৩৩ ঘণ্টা
এসএ/টিআই/এইচএ/