ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বনানী-বিমানবন্দর হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
বনানী-বিমানবন্দর হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গাড়িতে বসে থাকলেও এ সড়কে প্রবেশ মাত্রই মোবাইল ফোন ‘ইন্টারনেট কানেক্টেড’ হয়ে যাবে। আর সড়কের দু’পাশের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলী নজর কাড়বে।

১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভাষা ও স্বাধীনতার আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা প্রবাহ ফুটে উঠবে তিনটি স্মৃতিস্তম্ভে।

সড়কটিতে ১০টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনিও থাকবে। যেখানে ওয়াইফাই, এটিএম, মোবাইল রিচার্জ, ওয়াশরুম এবং কয়েন দিয়ে পণ্য কেনার অত্যধুনিক সুবিধা পাবেন যাত্রী ও পথচারীরা। ১২টি মাউন্টেন ঝরনা থেকে অবিরত পানি ঝরবে। ঝরনার জলে মাছেরা খেলা করবে।

রাতে সড়কটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলতে ব্যবহৃত হবে এলইডি ফোকাস লাইট। সড়কটির একটি অংশে থাকবে আলাদা সাইকেল লেনও।

দেশে এই প্রথম উন্নত বিশ্বের আদলে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের ডিজিটাল রূপ বাস্তবায়নের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। তবে এতে সরকারের কোনো ব্যয় হচ্ছে না। পুরো কাজটি করছে ‘বিনাইল ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। ব্যয় হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি টাকা।
 
গত মাসে শুরু হয়েছে এর নির্মাণ কাজ, মাত্র ছয় মাসে শেষ হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে জানান, উন্নত বিশ্বের আদলে বনানী রেলওয়ে ওভারপাস থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কটি ডিজিটাল রূপ পাচ্ছে। এ ছয় কিলোমিটার সড়কে প্রবেশমাত্রই মোবাইল থেকে ‘ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট’ সুবিধা ব্যবহার করা যাবে। দেশে প্রথমবারের মতো ১০টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হচ্ছে। একেকটি যাত্রী ছাউনি হবে আড়াইশ’ ফুট দৈর্ঘ্যের। যেখানে একশ’ থেকে দেড়শ’ জন বসতে পারবেন।
 
তিনি আরও জানান, ৠাডিসন হোটেলের সামনে জিয়া কলোনির পাশে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি মাউন্টেন ঝরনা ও ২শ’ মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে।

ছয় মাসে অর্থাৎ আগামী বছরের মার্চে শেষ হবে পুরো কাজ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ছড়ার মতো ঝরনা বেয়ে পানি নামছে। আর ‍পানিতে খেলা করছে মাছ। সড়ক থেকে আলাদা করে দেওয়া হযেছে হাঁ‍টার পথ।

সড়কের পাশ দিয়ে গেছে পরিচ্ছন্ন নজরকাড়া ওয়াকওয়ে। রাতে মাউন্টেন ঝরনা থেকে আশপাশে নানা বর্ণের  আলো বিচ্ছুরিত হতে শুরু করেছে এখন থেকেই।
 
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র ‍জানায়, ৠাডিসনের সামনের রাস্তার দু’পাশে ‍দু’টি, শেওড়ায় দু’টি, খিলক্ষেতে দু’টি, বিমানবন্দরের আগে কাউলায় দু’টি এবং বিমানবন্দরে হচ্ছে দু’টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি।
 
যাত্রী ছাউনিগুলোর অত্যধুনিক সুবিধার বর্ণনা দিয়ে সড়কের প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান জানান, ‘নির্দিষ্ট কয়েন ড্রপ করে পছন্দের  পণ্য কেনার সুবিধা যাত্রী ছাউনিতে বসানো হবে। যাত্রীরা নির্দিষ্ট অংকের কয়েন কিনবেন। তারপর কয়েন দিলে তার কাঙ্ক্ষিত খাবার পণ্যটি বের হয়ে আসবে। থাকবে এটিএম বুথ, মোবাইল রিচার্জসহ অন্যান্য সুবিধা। ১০টি যাত্রী ছাউনির মধ্যে ৬টিতে আধুনিক টয়লেট সুবিধা থাকবে। সেখানে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা ও আলাদা নামাজের কক্ষ থাকবে।
 
সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের অনেক জায়গায় ফুটপাতগুলো এলোমেলো ভাবে রয়েছে। কোথাও ফুটপাত সরু হয়ে গেছে, আবার কোথাও একেবারে নেই। তবে এই সৌন্দর্য বর্ধন কাজের আওতায় ছয় কিলোমিটার সড়কজুড়েই থাকবে সুপ্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ওয়াকওয়ে। পুরো ওয়াকওয়ে সারারাত আলোকিত থাকবে। সাদা এলইডি ফোকাসিং করা লাইটের এমন ব্যবহার এই প্রথম দেশের কোনো সড়কে করা হচ্ছে।

ছয় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বাংলাদেশের বীরত্বগাথার স্মৃতিস্মরুপ ৩টি মনুমেন্টও তৈরি হচ্ছে।
 
প্রকৌশলী সবুজ জানান, বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ লা’ মেরিডিয়ান হোটেল পর্যন্ত আলাদা সাইকেল লেন করে দেওয়া হবে, যেখানে সাইক্লিং করা যাবে। রাজধানীতে ‍সাইকেলের জন্য আলাদা লেনও এটাই প্রথম।  

এছাড়া সড়কের নিকুঞ্জ এলাকার অংশে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি প্লেয়িং জোন করা হবে বলেও জানান প্রকৌশলী মো. সবুজ।
 
তিনি বলেন, ছয়টি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সড়কের ডিজিটাল রূপ বাস্তবায়ন ও বিউটিফিকেশনের কাজে আগ্রহী ছিলো। এর মধ্যে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে বিনাইল ওয়ার্ল্ড কাজটি পেয়েছে। তারা এ কাজে ব্যয় করছে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি টাকা।

 বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।