মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দুপুরের পর থেকে লাল-সবুজের পোশাক পরে হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে সমাবেশ স্থলে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা।
খালেদা জিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন জোটের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার মুখে গণতন্ত্রের কথা! যে মানুষ খুন করে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, তাদের হাতে এ দেশের গণতন্ত্র আর তাদের মুখে এ দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষার কথা কোনদিন মানায় না।
তার (খালেদা জিয়া) কাছ থেকে আমাদের রাজনীতি শিখতে হবে বা গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবে- সেটা বাংলাদেশের মানুষ কোনদিন মেনে নেবে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে, সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে। আর মানুষ যখন ভালো থাকে তখন তার বুকে অন্তর্জ্বালা!
বিগত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার সহিংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করেছেন। মানুষের ওপর জুলুম করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন ঠেকাবে। কেন ইলেকশন ঠেকাবে? নির্বাচনের সময় হয়েছে, নির্বাচন হবে। তিনি নির্বাচন করতে দিবেন না, নিজেও করবেন না। এই কথা বলে আন্দোলনে নেমে মানুষ হত্যা শুরু করলেন। ২০১৪-তে ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে পারলো না। ২০১৫ সালে আবার শুরু করলো তাণ্ডব। বাসা ছেড়ে অফিসে এসে বসলেন সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ২শ’ ৩১ জনকে পেট্রোল বোমা দিয়ে হত্যা করেছে সেই সময় খালেদা জিয়া। ... হাজার হাজার মানুষ তাদের পেট্রোল বোমায় আহত হয়েছেন। ৩ হাজার ৩৬ জন মানুষকে নানাভাবে আহত করেছেন খালেদা জিয়া। ২৯টি রেল গাড়ি, ৯টি লঞ্চ, রেললাইন ধ্বংস করেছেন, ২৩ জন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছেন। মসজিদে আগুন দিয়েছেন, শত শত কোরআর শরীফ পুড়িয়েছেন। এই ছিলো তার আন্দোলন। জনগণের প্রতিরোধের মুখে অফিস ছেড়ে আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি, সন্ত্রাসের স্থান হবে না। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আহ্বান জানাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তি, সৌহার্দ্য, ভাতৃত্বের ধর্ম। ইসলামে কখনো মানুষ হত্যা শেখায় না। ইসলামে হত্যা, আত্মহত্যা মহাপাপ। আজকে যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস করছে, আত্মঘাতী হামলা করছে, মনে করছে বেহেশতে যাবে, তারা সেখানে যেতে পারবে না। ইসলাম কখনো এসবকে প্রশ্রয় দেয় না।
তিনি বলেন, এদেশে সকলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিতে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।
পালিয়ে বেড়ান কেন? খালেদাকে হাসিনার প্রশ্ন
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মামলায় হাজিরা দিতে যান, একদিন যান, ১০ দিন যান না পালিয়ে বেড়ান! ব্যাপারটা কী? এতেই তো ধরা পড়ে যায় যে চোরের মন পুলিশ পুলিশ!
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। এতিমের নামে টাকা এসেছিলো।
বিএনপি সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিলো মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন করবে কিভাবে? যদি লুটপাটে ব্যস্ত থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, অত্যাচার নির্যাতন, দুর্নীতি, খুন খারাবি, লুটপাট, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি, আর অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কিছুই তারা করতে পারে নাই।
কথা নয়, কাজে বিশ্বাস করি
আওয়ামী লীগ সরকার কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যা ওয়াদা করি তা পালন করি।
তিনি বলেন, অনেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ঠাট্টা করেছিল, তারা বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দেখিয়েছি। তা আজ বাস্তব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকবে না, স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি করবো, প্রতিটি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করবো, প্রতিটি গ্রাম নগর হয়ে গড়ে উঠবে। জাতির পিতা যে রূপরেখা দিয়েছেন ঠিক সেভাবে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো।
এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম
১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে পাক শাসকরা হত্যা করতে চেয়েছিলো। বাঙালি মানুষের দোয়া, বাংলার স্বাধীনতা, বিশ্ব জনমতের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে তারা বাধ্য হয়েছিলো। আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। বাংলার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে পেয়েছিলো।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বেঁচে থাকলে আরও আগেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হতো।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক এবং দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ।
মঞ্চে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭/আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা
এমইউএম/এসকে/এমসি/এমজেএফ