বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সভায় ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্লেনারি সেশনে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
দাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সেশনের আলোচনায় আল গোর রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কা করলে শেখ হাসিনা তাকে আশ্বাস দিয়ে এ কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
সেশনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিবেশবিদ আল গোর সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি তোলেন।
তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি, সেটা সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে, ওর্য়াল্ড হেরিটেজ ঘোষিত এলাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে।
আল গোরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাই, বাংলাদেশে আসুন। আপনি নিজেই এসে দেখুন রামপালে কী হচ্ছে, সেখানে কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের নাগরিক, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কিসে ক্ষতি হবে কিসে ক্ষতি হবে না, আমার চেয়ে কেউ উদ্বিগ্ন নয়। কোনো ক্ষতি হলে আমি নিজেই তা করবো না।
রামপালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি তোমরা এসে দেখো। তারা যুক্তিসংগত কোনো কারণ দেখাতে পারেনি। তাদের সেখানে পরিদর্শন করার কথা বলেছি। তারা সাড়া দেয়নি। তারা কেন হইচই করছে তারাই জানে, অযথাই ইস্যু তৈরি করছে। তাদের মনে হয়তো অন্য উদ্দেশ্য আছে।
রামপালে সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে যে পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি সেটা ক্লিন কোল পাওয়ার প্ল্যান্ট। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সুন্দরবন ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনাজপুরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আমাদের একটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। ওখানে কৃষির কোনো ক্ষতি হয়নি, পরিবেশ, গাছপালা, মানুষ কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি। প্রায় দেড় দশক ধরে এখানে কার্যক্রম চলছে, কোনো ক্ষতিই চোখে পড়েনি।
সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের বিরাট অংশ নিমজ্জিত হবে। এ রকম পরিস্থিতি হলে তা কীভাবে মোকাবেলা করা হবে? সেশনের সঞ্চালক থমাস এল ফ্রিডম্যানের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যদি সমুদ্রের পানি এক মিটার বৃদ্ধি পায় বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশ ডুবে যাবে। এটা মোকাবেলার জন্য আমরা নিজস্ব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আমরা উপকূলে গ্রিন বেল্ট করছি, সবুজায়ন করা হচ্ছে। নতুন জেগে ওঠা চরে বনায়ন করা হচ্ছে। নিজস্ব সম্পদে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। ক্ষতি মোকাবেলা ও অভিযোজনে কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র তল বৃদ্ধির জন্য আমরা দায়ী নই। এ সমস্যা আমাদের তৈরি নয়। এটা উন্নত দেশগুলোর সৃষ্টি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্র তলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের জন্য এটা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এটা করছে। তাদেরও দায়িত্ব আছে, বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়া উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী। অথচ আমরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।
দেশে বনায়ন বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে যখন দায়িত্বগ্রহণ করি তখন বাংলাদেশে বন ছিলো মাত্র ৭ শতাংশ। সেটাকে আমরা ১৭ শতাংশে উন্নীত করেছি। দ্রুতই বনায়নকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
সেশনে অন্যদের মধ্যে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ, এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট গালিভার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/
আরও পড়ুন
** ‘লাখ লাখ মানুষ নীরবে উদ্বাস্তু হচ্ছে’
***ডব্লিউইএফ-এ অংশগ্রহণ, অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ
** পানিকে বিশ্ব সম্পদ ভাবতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
** সার্ক এখনো জীবিত: প্রধানমন্ত্রী
**হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম চেয়ারম্যানের
**প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা