রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া বাজার থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত পুরো খাল ও খালপাড় জুড়ে এই চিত্র।
গুনে দেখা গেলো বাঁশের সাঁকো ১৭টি, ঝুলন্ত ব্রিজ আটটি, পাকা ব্রিজ আটটি।
এগুলো যারা তৈরি করেছেন তাদের মধ্যে দখলদারিত্বের ভাবনা এতটাই প্রকট যে, কেউ কেউ ওই সাঁকোটিকে নিজের করে নিতে এপাড়েই বসিয়েছেন লোহার গেট। তাতে তালা মারা থাকে। যেনো এই খালটিও তারই মালিকানায়। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে নন্দীপাড়া বাজার থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়লো।
নন্দিপাড়া থেকে জিরানী খাল, রামপুরা থেকে একটি খাল ও পূর্বদিক থেকে মান্ডা খালের একটি অংশ একত্রে মিশে গুদারাঘাট-ত্রিমোহনী। মান্ডা মূল খালটি ত্রিমোহনীর গুদারাঘাট ছুঁয়ে বালু নদীতে মিশেছে।
খালপাড়ের পশ্চিমপাড়া ও পুর্বপাড়ায় একটি পাকা ব্রিজ। দক্ষিণ ত্রিমোহিনীতে প্রধান রাস্তায় ইমামবাগ জামে মসজিদের কাছে আরো একটি ব্রিজ। মাতবরবাড়ি রোডে একটি, বড় বটতলায় একটি, ছোট বট তলায় আরো একটি একটি পাকা ব্রিজ। এছাড়া মাতবরবাড়ী থেকে ১০০ গজের মধ্যে বাঁশের সাঁকো রয়েছে ছয়টি। আর নন্দিপাড়া বাজার পর্যন্ত রয়েছে আরো ১১টি বাঁশের সাঁকো। পাড়া আর মোড়ের নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও খুব কাছাকাছিই এসব অবৈধ স্থাপনা। এই দখলদারিত্বে খাল শুকিয়ে এখন মৃত প্রায়। খাল এলাকার লোকজন ময়লা ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে আর পানিও এখন দূষিত। পানি কালচে রঙ ধারণ করেছে। খালের দু’পাশে অবৈধ সারি সারি দোকান খালটি আরো দূষিত করছে, করছে ভরাট।
তবে অনেকেই দুষছেন এই ব্রিজগুলোকে। তারা বলছেন এর কারণেও তৈরি হয়েছে বাধা।
এরই একটি ব্রিজের ওপর আড্ডা দিচ্ছিলেন তিন বন্ধু। তারা জানালেন, এমন নয় যে প্রতিটি বাড়িতে একটি করে ব্রিজ থাকতে হবে। খালের ওপারকে সংযুক্ত করতে যে কয়টি প্রধান ব্রিজ রয়েছে সেগুলো পার হয়ে ওপাড়ের সড়ক ধরে যে যার বাড়িতে যেতে পারে। কিন্তু তাতে চলবে না। প্রত্যেকেরেই চাই নিজের বাড়ির সঙ্গে নিজের ব্রিজ।
বন্ধুদের একজন আবদুস সোবহান বললেন, একটা সময় ছিলো ওপাড়ের সবাই একটা ব্রিজ দিয়ে পার হয়ে নিজ বাড়িতে যেতেন। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। সোবহান বলেন, এখানে আসলে বলার কেউ নেই। ফলে যে যার যা ইচ্ছা তাই করে। একজন নিজের বাড়ির সঙ্গে ব্রিজ বানালেন, তা দেখে আরেকজন বানালেন, তা দেখে আরেকজন। উচ্ছেদের আওতায় এই ব্রিজগুলোও পড়বে জেনে খুশি এই তিন বন্ধুই।
ত্রিমোহনী কবরস্থান বায়তুল মামুর জামে মসজিদ কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা নাসির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, উচ্ছেদের কথা আমরা শুনেছি। খালের ভিতরে অবৈধভাবে সাঁকো, সেতু, টয়লেট, মাঁচা, দোকান রিকশার গ্যারেজ আইনত অপরাধ। তবু এগুলো তৈরি করা হয়েছে। সরকারি জায়গা দখল করে।
পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আলী মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, খালের উপর সাঁকো করা অপরাধ। রাস্তা না থাকায় পারাপারের জন্য করা হয়েছে। তবে খালের পাড়ে বাড়ি নিজস্ব জায়গায় বলে দাবি করেন তিনি। এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এই খালটি বাঁচানোর কথা বলেছেন এলাকার সচেতন লোকজন। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযানেও ঘোষণা দিয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি (রোববার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল, বক্সকালভার্ট ও রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য ঘোষণা দেন। প্রাথমিকভাবে আগামী ৬ এবং ৯ ফেব্রুয়ারি নন্দীপাড়া ত্রিমোহিনী খাল ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি। ঢাকা শহরের খাল ও বক্সকালভার্টগুলো অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে প্রতি বছর। তাই মেয়রের ঘোষণা ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নন্দীপাড়া ত্রিমুখী খালকে পুনরায় সচল করার লক্ষ্যে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান চালবো। একইসঙ্গে বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা দখলমুক্ত করার জন্যও ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযান চলবে।
বাংলাদেশ সময় ২৩৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
আরএটি/এমএমকে