ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উচ্ছেদের ঘোষণায় হাত গোটালো দখলদাররা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
উচ্ছেদের ঘোষণায় হাত গোটালো দখলদাররা খালপাড়ের দখলদারিত্ব উচ্ছেদের ঘোষণায় থেমে গেল দোকানটির নির্মাণ কাজ। ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল ঘুরে: পাকা সড়কটা ঘেঁষে খালের পাড়ে দৈর্ঘ্যে ৯ ফুট আর প্রস্থে ৪ ফুটের মতো জায়গা করে রাখা হয়েছে ইট, সিমেন্টের কয়েকটি বস্তায় ভাঙা ইট, সুরকি ও ‍বালু। 

নন্দীপাড়ার হাজীবাড়ী রোডের আবেদ আলী মার্কেট সংলগ্ন এই জায়গাটায় নতুন স্থাপনা নির্মাণের এই ‍আয়োজনের আশপাশে কাউকে দেখা গেলো না। তবে জায়গা দেখে বোঝা গেল নতুন দোকানঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেউ একজন।

দক্ষিণ-পশ্চিমের নন্দীপাড়া থেকে উত্তর-পূর্বে ত্রিমোহনী বাজার যাওয়ার পথে এবার চোখে পড়লো টং ঘরের মতো ‘অর্ধেক নির্মিত’ দোকান। ১৩টা বাঁশের খুঁটির ওপর কাঠের মেঝে আর ইটের চালায় দোকানটা গড়ে উঠেছে ৬ কি ৭ বর্গফুটের মতো জায়গা নিয়ে। দেওয়া হয়নি কেবল বেড়া।

সড়কের পাশে ওয়াসার অধীন মান্ডা খালের নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী অংশের (জিরানী খাল) পাড় বা সরকারি জায়গা দখল করে নতুন দোকান নির্মাণের এ কার্যক্রম এখানেই থেমে গেছে। সোমবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর আওতাধীন দখলকৃত খাল বা স্রোতধারাগুলো উদ্ধারের  ঘোষণা দেওয়ায় এভাবেই হাত-পা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন দখলদাররা। নতুন করে দোকান নির্মাণের আয়োজন থেমে গেল জিরানী খালপাড়ে।  ছবি: রানানন্দীপাড়া মোড় থেকে ত্রিমোহনী বাজার গুদারা ঘাট (নৌঘাট) পর্যন্ত এমন অন্তত ৬-৭টি দোকান বা টং নির্মাণ কার্যক্রম শুরুতে বা অর্ধেক পথে বন্ধ দেখা গেল।

ত্রিমোহনীর দিকে যাওয়ার পথে নন্দীপাড়ার শেষ সীমানায় দু’টি দোকানের ফাঁকে সড়কঘেঁষে আড়াআড়ি ৫ ফুটের মতো জায়গা পেয়ে সেখানে একটি দোকান তোলার ইচ্ছে হয় রিকশা-সাইকেল মেরামত দোকানের কর্মী ফুল মিয়ার। বেড়া বা চালা না দিলেও বাঁশের খুঁটির ওপর দোকানের মূল কাঠামো গড়েও ফেলেন তিনি। কিন্তু সোমবার যা শুনলেন, আর এগোতে পারলেন না।

‘অর্ধেক নির্মিত’ দোকানের সামনেই কথা হচ্ছিল ফুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, “ভাই এক জায়গায় (সাইকেল মেরামত গ্যারেজ) কাজ করি। এখানে জায়গাটা দেখে আশপাশের ভাইদের সাথে কথা বলি দোকানটা উঠাইতে। এখন শুনি সরকার নাকি উঠাই দিব। ”অর্ধেক পথে থেমে গেল দোকানটির নির্মাণ কাজ।  ছবি: রানাকেন উঠিয়ে দেবে জানেন? ফুল মিয়া জবাব দেন, “সরকারের জায়গা, সরকার এর আগেও অনেকবার উঠাই দিছে। শুনছি খাল নাকি সুন্দর করবো, এই খাল ভরে যাওয়ার কারণে ঢাকায় নাকি পানি জমে, সে কারণে খাল পরিষ্কার করবে। টিভিতে তা-ই কইছে। ”

৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এখানে উদ্ধার অভিযান চালানোর ঘোষণা হলেও এ ব্যাপারে এখনও স্থানীয় বা দখলদারদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।  

তবে টেলিভিশন দেখা আর পত্র-পত্রিকায় খবর শোনা ফুল মিয়ার মতো অনেকের মুখেই দোকানপাট বা বসতি গোটানোর প্রস্তুতি শোনা গেল।

ফুল মিয়ার দোকান থেকে নন্দীপাড়ার দিকে খানিকটা পথ হাঁটলে আরেকটি ‘অর্ধনির্মিত দোকান’। সিমেন্ট-সুরকির পিলার, গাছ আর বাঁশের খুঁটির ওপর কাঠের মেঝেতে গড়ে তোলা এ দোকানটারও ছাদ নেই। এই দোকান পেরিয়ে আরেকটু গেলেই কাজী জাহাঙ্গীর আলমের বাঁশ আর বাঁশের তৈরি বেড়ার দোকান। দোকানটা হাতের ডান দিকে তার নিজের জায়গায় হলেও তিনি শ’কয়েক বাঁশ রেখেছেন খাল পাড়ে মাটি ফেলে কিছুটা জায়গা দখল করে। নতুন করে দোকান নির্মাণের আয়োজন থেমে গেল জিরানী খালপাড়ে।  ছবি: রানাকাজী জাহাঙ্গীরই বললেন তারা ৬ ফেব্রুয়ারির জন্য প্রস্তুত। তারাও চান খাল দখলমুক্ত হোক। এই খাল দখলমুক্ত হলে যে রাজধানীতে বর্ষার সময় সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসবে তা তারাও বোঝেন। সেজন্য সবার স্বার্থে খালটা দখলমুক্ত হলে জাহাঙ্গীররা নাখোশ হবেন না বলেই জানালেন।

তিনি বলেন, “সরকার যদি ৬ তারিখ শিওর আসবে বলে, তার আগেই আমি আমার বাঁশ সরিয়ে নেবো। আমিও চাই এই খাল সুন্দর হোক। রাস্তাটাও সুন্দর হোক। ”

কেন এভাবে সেখানে বাঁশ রাখতে খালপাড় ভরাট করেছিলেন প্রশ্ন করলে জাহাঙ্গীর সরল গলায় বলেন, “সেই দিক (নন্দীপাড়া বাজার) থেকে অনেকে দখল করছে দেখে আমি এখানে বাঁশ ফেলতে একটু জায়গা নিছি। এটাতো সরকারি, অন্য কারও না। ”

খালপাড় দখল করে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে বাঁশ।  ছবি: রানাফুল মিয়া-জাহাঙ্গীরদের মতো উদ্ধার অভিযানকে স্বাগত জানাতে চান খালপাড় দখল করে কার্যক্রম চালানো অন্য ব্যবসায়ীরাও। দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণায় এখানকার বাঁশ-কাঠের দোকানগুলোতে বিক্রি-বাট্টায় একেবারেই ভাটা পড়ে গেছে।  

‍কারণটা জানালেন দোকানদাররাই। নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর খালপাড় দখল করে টং ঘরের মতো দোকান নির্মাণে বেশি বিক্রি হয় বাঁশ-কাঠ। যেহেতু খাল পাড় দখলমুক্তির ঘোষণা এসেছে, সে কারণে থমকে গেছে নির্মাণ কাজ, তাই কমে গেছে বেচাকেনাও।  

জীবিকার পথ খানিকটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়লেও খাল দখলমুক্তিতে নাখোশ না হওয়ার কথা বলেন দোকানিরা। তবে তাদের কেবল একটা আর্জি, যেহেতু সরকারি জায়গায় বসে এতোদিন রুটি-রুজি চালাচ্ছিলেন, তাই এখন খাল পাড় দখল উচ্ছেদ করতে চাইলে তাদের যেন কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।