ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবলিক টয়লেট নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে অচিরেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
পাবলিক টয়লেট নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে অচিরেই পাবলিক টয়লেট নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে অচিরেই-ছবি-শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বেশ কয়েক গজ দূর থেকেই নাকে আসছে দুর্গন্ধ। ভেতরের কমোডগুলো বাদামি রঙ ধারণ করেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এতে পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া পড়েনি অনেক দিন।

দরজাগুলোও মেরামতের অভাবে আধভাঙা অবস্থায়। সবচে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, মহিলা টয়লেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে পুরুষরা।

কখনো আবার চাপ সামলাতে না পেরে পুরুষ টয়লেটে ঢুকে পড়ছেন মহিলা। তবে পরিবেশ এবং পরিস্থিতি যা-ই হোক তা তদারকি করার জন্য কাউকে দেখা গেলো না সেখানে। এই চিত্র গুলশান পার্কের ভেতরের পাবলিক টয়লেটের। অথচ তার উল্টোদিকের অংশটাতেই দাঁড়িয়ে আছে  নগরভবন।  

টয়লেটের সামনে নাক চেপে দাঁড়িয়ে রেশমা নামের এক গার্মেন্টকর্মী। তিনি বলেন, ‘ভেতরে আমার বোন গেছে। অনেক দুর্গন্ধ। ভেতরের অবস্থাও খুব খারাপ। সব নোংরা হয়ে আছে। পাবলিক টয়লেটের সমস্যার সমাধান যে আর কবে হবে! বিশেষ করে আমরা যারা মেয়ে তাদের খুবই সমস্যা হয়। ’

এদিকে সোহরাওয়ার্দী ‍উদ্যানের পাবলিক টয়লেটের চিত্র একেবারেই উল্টো। সেখানের দরজার সামনে বসে এক নারীকর্মী টিকিট দিচ্ছেন। সবাই লাইন ধরে টিকিট সংগ্রহ করে টয়লেটে যাচ্ছেন। ভেতরটা পরিস্কার পরিচ্ছিন্ন। পুরুষ, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। টয়লেটের ভেতরে হাত ধোয়া, নিরাপদ খাবার পানি, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার সিস্টেম ও গোসলের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি ব্যবহারকারীদের মালামাল রাখার জন্য লকারের ব্যবস্থাও রয়েছে। আর নিরাপত্তার জন্য সামনে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পাবলিক টয়লেট নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে অচিরেই-ছবি-শাকিল আহমেদসেখানে টয়লেটের এমন রুচিসম্মত রূপ দেখে রীতিমত খুশি আজাহার আলী। বলেন, ‘আগে তো টয়লেটগুলার অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে যাওন যাইতো না। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এমন অত্যাধুনিক টয়লেট নির্মাণ করায় আমগো অনেক সুবিধা হইছে। ভোগান্তিও কমে গেছে। ’

বুধবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাবলিক টয়লেট ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু পাবলিক টয়লেটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। কিন্তু কয়েক স্থানে নতুন করে নির্মাণ করা পাবলিক টয়লেটগুলোতে দেখা গেছে আধুনিকতা ও রুচির ছোঁয়া। ফলে পাবলিক টয়লেটের জন্য যে ভোগান্তি জনমনে ছিলো তা অনেকটা দুর হয়েছে বলে অভিমত জানালেন বেশ ক’জন ব্যবহারকারী। পাশাপাশি পুরাতন জরাজীর্ণ টয়লেটগুলোর মেরামতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাধারণ মানুষ।

অবশ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীজুড়ে যেভাবে পাবলিক টয়লেট নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে পারলেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে, এমনটাই বলছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

১ বছর আগেও চাহিদার তুলনায় ঢাকা শহরে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা ছিলো নিতান্তই অপ্রতুল। টয়লেটগুলো ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল না। নারীবান্ধব, স্বাস্থ্যকর এবং প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহারের উপযোগী ছিলো না। ফলে বাধ্য হয়ে যেখানে-সেখানে এবং নোংরা টয়লেটেই মলমূত্র ত্যাগ করতেন অনেকে। পাবলিক টয়লেট মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এইড –এর মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুই সিটি করপোরেশনের জায়গায় ৩০টি মানসম্মত পরিচ্ছন্ন টয়লেট নির্মাণ ও পরিচালনা করবে ওয়াটারএইড। পাবলিক টয়লেট নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে অচিরেই-ছবি-শাকিল আহমেদজানা গেছে, রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে মোট ৩৬ টি টয়লেট রয়েছে। এরই মধ্যে মোট ১০টি টয়লেটের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ শেষ। আরো ১০টি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণাধীন রয়েছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে টয়লেট রয়েছে মোট ৪৭টি। সেগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ১৭টি টয়লেটের নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। ভাসমান মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে এসব টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি, গোসলখানা, সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য টয়লেটের সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।

এরই মধ্যে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড, নাবিস্কো হাজি মরণ আলী রোড, ফার্মগেইট ইন্দিরা রোড, শ্যামলী পার্ক, মহাখালী ওয়াসার পানির পাম্প, ওসমানী উদ্যানে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব ও গেট সংলগ্ন, পান্থকুঞ্জ পার্ক, মুক্তাঙ্গণ পার্ক, বাহাদুর-শাহ পার্ক, পৌর ফিলিং স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া চিড়িয়াখানা রোড ও গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেট সংলগ্ন পাবলিক টয়লেট নির্মাণকাজ চলছে। আর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন, মাজেদ সর্দার রোড, টিকাটুলি পার্ক এবং রমনা কালীমন্দির এলাকায় পাবলিক টয়লেট নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

পাবলিক টয়লেট পরিচালনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের থাকলেও এগুলোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াটারএইড নিয়োগ করেছে পেশাদার ক্লিনিং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের। চুক্তি মোতাবেক সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি নিয়মিত টয়লেটের ব্যবস্থাপনার তদারকি করে থাকে। টয়লেটের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয় টয়লেট ব্যবহারকারীদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ। সেই অর্থ কমিটির মাধ্যমে টয়লেট পরিচালনা, কর্মীদের বেতন, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও মেরামত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাবলিক টয়লেট নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে অচিরেই-ছবি-শাকিল আহমেদ

এসম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (জলবায়ু, পরিবেশ) ড. তারিক বিন ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরনো সবক’টি পাবলিক টয়লেট মেরামতের জন্য অলরেডি আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আরো ৭৩টি টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই স্থাস্থ্যসম্মত বেশকিছু পাবলিক টয়লেট আমরা দিতে পারবো। ’

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘এরই মধ্যে ১৭টি টয়লেটের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো ৫০টি অত্যাধুনিক টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। তবে জায়গা পাওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যলেঞ্জ। তাছাড়া পাবলিক টয়লেটে ব্যবহারকারী মানুষের ভোগান্তি দূর করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ’

২০১৬ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় ২০১৭ সালের পর ব্যবহার-অযোগ্য কোনো পাবলিক টয়লেট থাকবে না। ’ উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এমন ঘোষণা না দিলেও ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ স্লোগানে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার‌্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী নেওয়া পদক্ষেপ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা,  ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
জেডএফ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad