ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সরকার হাওরবাসীকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৭
সরকার হাওরবাসীকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখবে কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। ছবি: বাংলানিউজ

ইটনা (কিশোরগঞ্জ) থেকে: অকাল ঢলে ভেসে গেছে হাওরের সোনালী ফসলের ক্ষেত। এক ফসলি ধান নির্ভর অর্থনীতি হাওরের। এবারের ঢলে গৃহস্থ-কৃষক পরিবারগুলোর ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি।

তাদের উপর নির্ভরশীল জনমজুর কিংবা ভূমিহীন প্রান্তিক পরিবারগুলোও ভালো নেই। সারা বছরের খোরাকি মেটানোর চিন্তায় চোখে অন্ধকার এখন পরিবারগুলোর।


প্রান্তিক কৃষক পরিবারগুলো তো বটেই, অনেক অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের ভাড়ারেও এখন চাল নেই। হাওরে কান পাতলেই চারিদিকে শোনা যায় হাহাকার।

এ অবস্থায় হাওরবাসী পরিবারগুলোর একমাত্র ভরসা সরকারি সহায়তা।

অবশ্য সরকারও বসে নেই। হাওরাঞ্চলে ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই হাওরে বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ দিনের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তার প্যাকেজ। যার বিতরণ শুরু হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে।

প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। ত্রাণ বিতরণের মহাযজ্ঞে এখন তাদের দিনরাত একাকার। তার ওপর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে ঠিকভাবে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তা বিতরণ করাও তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

কিভাবে তারা ত্রাণ পৌঁছাচ্ছেন দুর্গম এলাকায়, বিষয়টি জানতে কথা হলো কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। একই সঙ্গে তিনি জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সদস্য সচিব। কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক।

সিদ্দিকুর রহমান জানালেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে যেন সরকারি সাহায্য পৌঁছায় সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।

আরো জানালেন, এবারের ঢলে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও নিকলি উপজেলা।

জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ৬২ হাজার ২২৭ হেক্টর জমির আবাদ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার ৪২৮টি।

তাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার কৃষক পরিবারকে সরকারি ত্রাণ সহায়তার নেটওয়ার্কে আনা হয়েছে বলে জানালেন সিদ্দিকুর রহমান।

এই পরিবারগুলোকে আগামী তিন মাস ভিজিএফ কার্ড এর মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫শ’ টাকা করে দেয়া হবে। এছাড়া যারা ভিজিএফ কার্ডের আওতার বাইরে তাদের গ্রুপ রিলিফ বা জিআর সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ সহায়তা বর্ধিত করে সারা বছর চালানো হবে। মোট কথা না খেয়ে থাকবে না হাওরের কোনো মানুষ। জোর দিয়ে জানালেন তিনি।

ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম রোধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসন এ ব্যাপারে তৎপর। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষ ‘জিরো টলারেন্স’ মুডে রয়েছে।  
কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়।  ছবি: বাংলানিউজ
এ ব্যাপারে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের দায়ে ইটনার এক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক ও জরিমানা করার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন তিনি। ত্রাণের চাল আত্মসাতের সময় ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ইটনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গটি টেনে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা বলেন, এভাবেই অনিয়ম রোধ করার ব্যাপারে তৎপর রয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কিভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের(ডিসি) নামে বরাদ্দ আসছে। উপজেলা পর্যায়ে ডিসি বরাদ্দ দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কমকর্তাকে (ইউএনও)।  

ইউএনও ইউনিয়ন পর্যায়ে ত্রাণ বরাদ্দ করছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে।

ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু করতে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড/নন গেজেটেড কর্মকর্তাদের এক একটি ইউনিয়নের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে, ট্যাগ অফিসার। এই ট্যাগ অফিসাররা সশরীরে ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে উপস্থিত থেকে তালিকাভুক্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারি সহায়তা বিতরণ করছেন।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ ও দুর্যাগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে উপজেলা দুর্যাগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব। পিআইওরাও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু করার ব্যাপারে দায়বদ্ধ।

উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ মনিটরিং করার জন্য ইউএনও’র নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করছেন পুরো কার্যক্রম।
এভাবেই একদম রুট লেভেলে ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি ব্যাপক মনিটরিং করা হচ্ছে।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মোট কথা তাদের খাওয়ায়ে বাঁচায় রাখতে হবে। সরকার তাদের খাওয়ায়ে বাঁচায় রাখবে। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল।

বাংলাদেশ সময়:  ১৯০৫ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৭
আরআই/জেডএম/

** হাওরের বুকে ‘কালবৈশাখী’ দর্শন

** অকাল ঢলে ভাটির দেশে ‘অশনি সঙ্কেত’ এর পদধ্বনি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।