ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধর্ষিতা শিক্ষার্থী ও তার মাকে এবার চুল কেটে নির্যাতন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
ধর্ষিতা শিক্ষার্থী ও তার মাকে এবার চুল কেটে নির্যাতন বগুড়ায় মা-মেয়েকে চুল কেটে নিযার্তন, আটক চারজন-ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বগুড়ায় ধর্ষিতা এক শিক্ষার্থী ও তার মাকে পিটিয়ে অমানবিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সদ্য এসএসসি পাস করা ওই মেয়েটিকে ধর্ষণের দশদিন পর শালিসের নামে এ নির্যাতন চালিয়েছেন ধর্ষক ও তার স্বজনেরা।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে ধর্ষকের স্ত্রীর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলার মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তার স্বজনেরা অমানবিক এ নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাউন্সিলর রুমকির চকসূত্রাপুর এলাকার বাসায় অমানবিক এ নির্যাতনের পর আহত ওই ছাত্রীকে রাতে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর নির্যাতিতা মা নারী কাউন্সিলর রুমকিসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

শনিবার (২৯ জুলাই) ভোর রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নারী কাউন্সিলরের ছোট বোন জামাই ধর্ষক তুফান সরকারসহ চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি কাউন্সিলর, তার মা রুমি ও ছোট বোন আশা পলাতক। তাদেরকেও গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বাদিনী নির্যাতিতা গৃহবধূ জানান, তার স্বামী নন্দীগ্রাম উপজেলার আতাইল গ্রামে চায়ের দোকান করে সংসার চালান। লেখাপড়ার কারণে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে শহরের চকসূত্রাপুর বেগম বাজার লেন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। মেয়েটি এবার বাদুড়তলার জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে।

মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে নারী কাউন্সিলর রুমকির ভগ্নিপতি (ছোট বোন জামাই) তুফানের বন্ধু আলী আযম দিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। দিপু তাদেরকে নিয়ে গেলে কলেজে ভর্তিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেতুফান। এরই প্রেক্ষিতে তুফানের সঙ্গে মাঝে-মাঝেই মোবাইলে যোগাযোগ করতো মেয়েটি।

ওই মা অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই বন্ধু আতিক কৌশলে তার মেয়েকে ডেকে চকসূত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকার তুফানের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তুফান মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। পরদিন ১৮ জুলাই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান তিনি।

এদিকে তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন বিষয়টি জানতে পেরে তার বড় বোন স্থানীয় নারী কাউন্সিলর রুমকিকে জানান। তারা অভিযোগ তোলেন, ওই ছাত্রী তুফানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

এ অভিযোগে গত ১৮ জুলাই বিকেলে কাউন্সিলর রুমকি ওই ছাত্রীদের ভাড়া বাসায় গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। নিজের বাড়ির পাশে মেয়েটির নানার বাড়িতে গিয়েও হুমকি-ধমকি দেন কাউন্সিলর। ঘটনার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ির তালা খোলা হবে না বলেও জানান রুমকি।

বিষয়টি জানার পর বাদিনী তার মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বগুড়ায় ফেরেন। বিকেলে রুমকির বাসায় যান মা-মেয়ে। এ সময় রুমকির মা রুমি বেগম ও ছোট বোন তুফানের স্ত্রী আশা ওই বাসাতেই ছিলেন। তারা মা ও মেয়েকে বসিয়ে রেখে মোবাইল ফোনে দিপু, আতিক, মুন্না, রূপমসহ কয়েকজনকে ডেকে নেন। নারী কাউন্সিলর কোনো শালিস দরবার না করেই মা-মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করায় রুমকি এবং তার মা-বোন তাদেরকে মারধর করেন।

একপর্যায়ে তারা মুন্নার সহায়তায় ওই ছাত্রী ও তার মায়ের চুল কেটে মাথা ন্যাড়া করে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এমবিএইচ/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।