ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘চিন্তা করো না’, অস্ত্রোপচারের আগে বাবাকে মুক্তামনি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
‘চিন্তা করো না’, অস্ত্রোপচারের আগে বাবাকে মুক্তামনি মুক্তামনির বাবা- মা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘হেমানজিওমা’ রোগে আক্রান্ত শিশু মুক্তামনিকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার হাতে অস্ত্রোপচার হবে। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই বাবা ইব্রাহীম হোসেনের মন খারাপ। বেশ চিন্তিত তিনি।

 

তখন মুক্তামনি বলে ওঠে, ‘বাবা, চিন্তা করো না,  প্রধানমন্ত্রী আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। ডাক্তাররা অবশ্যই আমাকে ভালো করে তুলবেন’।

বাবা ইব্রাহীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এতোটুকু একটা মেয়ে! আমরা চিন্তা করছি বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সে এ কথাগুলো বলছিলো’।

কেঁদে কেঁদে মা সাহিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তামনি আমাকে বলছিল, মা, অচেতন করার আগে পর্যন্ত তুমি আমার কাছে থেকো’।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মুক্তামনির হাতে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার শুরু হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল সোয়া ৮টার দিকে তাকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।

গত ২৭ জুলাই ভিডিওতে মুক্তামনিকে ও তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন দেখেন এবং ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোর্ড মিটিং করেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।

পরে ই-মেইলে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালটি জানিয়েছিল যে, ‘রোগটি ভালো হওয়ার নয় ও সেটি অস্ত্রোপচার করার মতোও নয়’।

এ পর্যবেক্ষণ জানার পর গত ০২ আগস্ট মুক্তামনির চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভায় ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সকল ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করে বায়োপসি করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। সে অনুসারে গত ০৫ আগস্ট সফলভাবে মুক্তামনির বায়োপসি অপারেশন সম্পন্ন হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাশদাহ গ্রামের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ও আসমা খাতুন দম্পতির মেয়ে মুক্তামনি। এ রোগে তার ডান হাত ফুলে যায়। সাদা রঙের শত শত পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ফুলে যাওয়া অংশে। শরীরের অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণায় মুক্তামনি বসতেও পারে না। এরপর হাতে পচন ধরে। হাতের সঙ্গে বুকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। দীর্ঘ নয় বছরেও মুক্তার রোগ ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা।

গত ০৮ জুলাই বাংলানিউজে ‘নয় বছরেও ধরা পড়েনি মুক্তার রোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। এরপর অনেকেই এগিয়ে এসেছেন, সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন মুক্তার চিকিৎসায়।

এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশনায় একটি প্রতিনিধি দল তার বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে আসেন। গত ১১ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তির দিনই মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মুক্তামনির চিকিৎসায় ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট, ২০১৭/আপডেট: ১৫৪৬
এজেডএস/এএটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।