বছরখানেক হতে চললো চোখে ভাল করে দেখতে পারছিলেন না। এমনকি ভাতটা পর্যন্ত দেখে খেতে পারতেন না।
একদিন বাড়ির পাশ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছিল আদ্-দ্বীন ফ্রি আইক্যাম্পের। মাইকিং শুনে ক্যাম্পে গিয়ে ২০ টাকার টোকেন মানি দিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্যে চোখ পরীক্ষা করান আমিন।
এরপর আদ্-দ্বীনের নিজস্ব বাসে করে তাকে নিয়ে আসা হয় ঝিকরগাছা আদ্-দ্বীন চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চোখের ছানি অপারেশন করা হয় তার। অপারেশন শেষে বেডও বরাদ্দ করা হয়।
সেই বেডে বসেই বাংলানিউজকে নিজের আনন্দিত অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুর হুদা উপজেলার বাসিন্দা আমিন। তার পাশেই আরেক রোগী শমসের আলী একসময় খেতে খামারে কাজ করে পেট চালাতেন। গত দেড় বছর চোখে ঝাপসা দেখছেন। ঘাসটা পর্যন্ত দেখতে সমস্যা হচ্ছিল শমসের আলীর। এখন দুই চোখে ফিরে এসেছে আলোর ঝলকানি। যেন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু। এখানেও ত্রাতার ভূমিকায় আদ্-দ্বীন ফ্রি আইক্যাম্প।
যশোর জেলার পুলের হাটে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এর অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে চক্ষু হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল। কয়েকটি শাখা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো। এসবের মধ্যে যশোর চাঁচরা ডাল মিল এলাকার চক্ষু হাসপাতাল একটি। হাজার শয্যার হাসপাতালে রয়েছে চক্ষু অপারেশনের সর্বাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। রয়েছে অভিজ্ঞ চক্ষুসার্জন ডা. মিনহাজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম।
খুলনা বিভাগের যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ায় প্রতি মাসে একটি আইক্যাম্প হয়। সেখানে মূলত রোগীদের চোখের ছানি শনাক্ত করা হয়। এরপর আদ্-দ্বীনের নিজস বাসে করে রোগীদের এনে ছানি অপারেশন করা হয়। এর পাশাপাশি অপারেশন-পরবর্তী ওষুধ সরবরাহ করা হয়। রোগীদের একটি কানাকড়িও খরচ করতে হয় না। এভাবে প্রতিবছর ১০ হাজার চোখে-ছানি-পড়া রোগীকে বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে আদ্-দ্বীন। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়। এই খরচটা আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন বহন করে থাকে।
আদ্-দ্বীন চক্ষু হাসপাতালের কো-অর্ডিনেটর রবিউল হক এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সারাদেশে কম বেশি সাড়ে ৭ লাখ অন্ধ মানুষ রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ জন্মান্ধ। কেউ কেউ ছানিজনিত সমস্যার কারণে চোখে দেখতে পান না। আমার বিনা পয়সায় গরিব রোগীদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে একটি ফান্ড করেছি। ওই ফান্ডে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন নিজ তহবিল থেকে দেন দুই কোটি। আর এক কোটি টাকা আসে আদ্-দ্বীনের স্টাফদের বছরের ৬ দিনের বেতন থেকে। বাইরের কোনো রকম সহযোগিতা ছাড়াই মানবসেবার এই কাজটি করে যাচ্ছে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাজাসপাতাল।
ছানিপড়া রোগীদের ৪ হাজার ২০০ টাকার প্যাকেজের ভারতীয় লেন্স চোখে পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একদম নিখরচায়। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ৪৫ জন রোগী ছানি অপারেশন করিয়ে চক্ষু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বুধবারও ১৬ জনকে বিনা পয়সায় অপারেশন করা হয়। সারাদেশেই এই ক্যাম্প হয়। এছাড়া একটি মোবাইল চক্ষু হাসপাতালও রয়েছে তাদের। একটি গাড়িতে অপারেশনের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যায় রোগীর সন্ধানে। আসছে অক্টোবর মাসে খুলনা বিভাগের যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ায় ৩১টি আইক্যাম্পের আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়:...ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
এসএম/জেএম