ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জ্যামে ঘুমিয়েই পড়লেন চালকেরা!

হুসাইন আজাদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
জ্যামে ঘুমিয়েই পড়লেন চালকেরা! জ্যামে ঘুমিয়েই পড়লেন চালকেরা। ছবি: জনি সাহা

মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু থেকে: কখন জ্যাম ছুটে, কখন একটা টান দিয়ে অনেকখানি এগিয়ে যাবেন, সে চিন্তায় অস্থির থাকার কথা গাড়ির চালকদের। কিন্তু জ্যামের দীর্ঘস্থায়িত্ব ভেবে একেবারে স্টিয়ারিংয়ের ওপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লেন একটি কাভার্ড ভ্যানের চালক। কয়েকটি বাসের চালক সিটের দু'দিকে হাত ছড়িয়ে বেশ এলিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন। কেউ জানে না কখন জ্যাম ছুটবে। তাই রাতে 'কম হওয়া' ঘুমটা পুষিয়ে নিতে এ-ই যেন ভালো 'সুযোগ'।

ঠিক এক জায়গায়ই গাড়ি যদি টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, কার ঘুম আসবে না এই সাতসকালে? সেজন্যই যেন মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতুর (দাউদকান্দি ব্রিজ) ওপর দাঁড়িয়ে পড়া গাড়িগুলোর বেশিরভাগ চালককেই দেখা গেল ঘুমিয়ে পড়তে। জ্যামের সঙ্গে ঘুমটা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো সেতুর দোলনার মতো নাচানাচি।

যদিও এই নাচানাচি বিপজ্জনক বলেই দেশের গণমাধ্যমে দফায় দফায় প্রতিবেদন প্রকাশ-প্রচার হয়েছে।

সকালে ফেনী থেকে যাত্রার সময়ই বাস কাউন্টারের এক কর্মী বলছিলেন, ঢাকায় যাওয়া নৈশকোচগুলো সবে ফিরছে (ফেনীতে)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও দুই বড় সেতু পার হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এই 'আতঙ্ক' নিয়েই বাস ছাড়লো।
কাভার্ড ভ্যানের চালক স্টিয়ারিংয়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন।  ছবি: জনি সাহা
ফেনীর ট্রাংক রোড ধরে বারাহিপুর পার হতেই আতঙ্ক ভয়ে রূপ নিলো। মোহাম্মদ আলী বাজারের মহাসড়কে উঠতে আধঘণ্টারও বেশি সময় লাগলো, যেটা মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। রাস্তার এতো দুর্দশা, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এসি গাড়িতে বসেও মনে হচ্ছিলো, কোনো দোলনা-মতো রাইডে চড়ে যেতে হচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে সেই রাস্তায় চলতে দেখে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি পাশের ক্ষেতে নেমে গেলো। পরে দেখা গেলো, আরে নাহ! ভালো একটু জায়গা পেতে রাস্তার একপাশ থেকে পুরো উল্টোদিকে বাক নিচ্ছে গাড়িটা।

দেড়ঘণ্টায় কুমিল্লা পৌঁছানোর পর যাত্রাবিরতি দেওয়ার সময় সুপারভাইজার বলে দিলেন, দাউদকান্দি ব্রিজ থেকে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত জ্যাম আছে। সেভাবে নাস্তাগ্রহণসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা সেরে নিন। একটু খেদই হলো সুপারভাইজারের ওপর, আগেভাগেই যাত্রীদের ভয় দেখাচ্ছেন কেন তিনি? গতরাতে জ্যাম হয়েছে বলে আজ ছুটির দিন সকালেও হবে নাকি!

দাউদকান্দি ব্রিজে উঠতেই তার প্রতি ভক্তি এসে গেলো। তিনি তো আসলে এদেশের বাস্তবতাই বললেন। জ্যাম লেগেছো তো লেগেছেই, টানা দু' তিন দিন কেন, বড় কোনো ঝাঁকুনি না লাগলে, বিশেষত গণমাধ্যম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে তো, এ জ্যাম সারাতে কোনো উপায় খুঁজে বের করার তাগাদাবোধ করবেন না সংশ্লিষ্ট  কর্তাব্যক্তিরা।
হিমালয় এক্সপ্রেসের চালক শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।  ছবি: জনি সাহা
গাড়ি থেকে নেমে সেতুর এমাথা-ওমাথায় চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, ঢাকামুখি লেনে প্রায় সব গাড়িই স্টার্ট বন্ধ করে আছে। কেবল ঢাকা থেকে বের হওয়া গাড়ি  যাচ্ছে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম লেন ধরে। চালকেরা শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও যাত্রীদের চোখেমুখে অস্থিরতা। বিকেলে ফ্লাইট ধরে বিদেশ যাবেন, এমন এক যাত্রী আর তার স্বজনদের দেখা গেল, বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে চিন্তায় ঘাম ঝরাচ্ছেন। কে জানে কোনো উপায় বের হবে কিনা।

সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সাত্তার মিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছিল জ্যাম নিয়ে। কারণ তার জানা নেই, তবে বললেন, আজ কয়েকদিন ধরেই এমন হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেতুর আরেক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, 'এখনো বড় (কর্মকর্তা) কাউকে এদিকে আসতে দেখিনি। তারা না দেখলে কি আর সমাধান হবে?'

বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি ট্রাকের চালকের কাছে জ্যামের কারণ জানতে চাইলে বলতে পারলেন না তিনিও। সামনে পুলিশ-ট্রাফিক আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাস্তায় পুলিশ থাকলে কি এতো লম্বা জ্যাম বাঁধে?'
মেঘনা-ঘোমতী দ্বিতীয় সেতুর ওপর গাড়ির দীর্ঘ লাইন।  ছবি: জনি সাহা
এই দীর্ঘ জ্যামের সমাধান হওয়া-না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের কিছু হয়তো আসে-যায় না, কিন্তু সমাধান না হলে বিদেশগামী ওই যাত্রী অথবা তারমতো আরও অনেকে ফ্লাইট ধরার তাড়ায় থাকলে কিংবা জরুরি চিকিৎসার জন্য কেউ ঢাকার  হাসপাতালমুখী হলে, তাদের কি কিছু আসবে-যাবে না? কেউ কি জনগণের 'লাভ-লোকসানের এ হিসাব' নিয়ে মাথা ঘামাবে?

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
এইচএ/জেডএস/এসএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।