রাত ঠিক ২টা ১১ মিনিটে উপর থেকে নিচের রাস্তায় হঠাৎ চোখ আটকালো একটি রিকশায়। এক যাত্রীকে ঘিরে ধরেছে দু’জন।
ঘটনা জানতে ফ্লাইওভারের উপর থেকে সিএনজি দ্রুত এগিয়ে গেলো। মৌচাক মার্কেটের সামনে দিয়ে নেমে ঘুরে আসতে ঘটনাস্থল ডিআইটি রোড মালিবাগে আসতে কেটে গেলো কয়েক মিনিট। দুই ব্যক্তির শিকার ওই ব্যক্তি এদিক-ওদিক করছিলেন, অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছিলো তার অবয়বে।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে একটু স্বস্তি পান মধ্যবয়সী সেই ব্যক্তি। পরিচয় জানালেন- ওমর ফারুক, শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। একটু আগে গ্রামের বাড়ি ফেনী থেকে বাসে করে এসে নেমেছেন মালিবাগ রেলগেটে। সেখান থেকে রিকশায় করে বাসায় যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হলেন ফারুক।
‘রাস্তার ওপাশ থেকে দৌড়ে এলো দু’জন ছেলে। দু’পাশে দাঁড়িয়ে রিকশা থামাতে বললো, দু’জনের হাতে ধারালো অস্ত্র। বললো চিৎকার করা যাবে না। যা আছে দিয়ে দেন…। আমার ব্যাগ টান দিলো, মানিব্যাগ, মোবাইল, নগদ টাকা পকেট থেকে বের করে নিয়ে নিলো!’
নিজেকে রেস্টুরেন্ট মালিক পরিচয় দিয়ে ফারুক জানালেন, ব্যাগের মধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের তিনটি এটিএম কার্ড, পকেটে প্রায় ১৫ হাজার টাকাও ছিল।
নিজে অপারেশেনের রোগী দাবি করে ফারুক বলেন, আমি জোর করিনি। ভয় হচ্ছিলো। যদি কোপ দেয়। দিয়ে দিয়েছি সব। ওরা চলে যাওয়ার সময় বললাম, টাকাগুলো নিয়ে নেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের কার্ডগুলো ফেরত দেন। তখন তারা বললো দাঁড়ান, ৫ মিনিটের মধ্যে এই স্থানে পেয়ে যাবেন। ’
রিকশাচালক আব্দুল ওয়াহাবও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তার পাশে।
রিকশাচালক বললেন, দু’জন দুই পাকে আইলো, কইলো রিকশা থামাও। চকচকে চাপাতি দ্যাখে কইলো কী আছে বাইর কর…।
ছিনতাইয়ের শিকার ফারুক ও রিকশাচালকের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যে সেখানে জড়ো হলো আরো কয়েকজন রিকশাচালক, পথচারী, বাসাবাড়ির নিরাপত্তাকর্মী। এলো টহল পুলিশও।
শাহজাহানপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ আশপাশের কয়েকজন পথচারী ও নিরাপত্তাকর্মীকে ছিনতাইকারীদের চিনতে পেরেছে কিনা- তা জানতে চাইলো। কিন্তু নিরাশ করলেন সবাই। তাকে পরামর্শ দিলেন থানায় জিডি করতে।
পুলিশ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ টহলে থাকলেও হঠাৎ হঠাৎ ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এই ছিনতাইয়ের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে শান্তিনগরের বাসায় দুর্ঘটনার খবরটি জানালেন ভয়ার্ত কণ্ঠে। ছিনতাই হওয়া নিজের মোবাইল নম্বরেও ডায়াল করলেন, কিন্তু বন্ধ। ১৫ মিনিট কেটে গেলেও জিনিস-পত্র ফেরত দিতে তারা আসেনি।
পরে আবাসিক এলাকার নিরাপত্তাকর্মীকে বাসার মোবাইল ফোন নম্বরটি লিখে দিয়ে অনুরোধের স্বরে বললেন, ভাই যদি কাগজগুলো পাওয়া যায় তো কল দিয়েন।
এরপর ওই রিকশাতেই চেপে বসলেন ফারুক, আব্দুল ওয়াহাব প্যাডেল চাপলেন শান্তিনগরের উদ্দেশে…।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমআইএইচ/এএ