শনিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি জানান, সিপিডি ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) গবেষণা করে দেখেছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে। যা আমাদের মোট বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরুর পর সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে এ সংকট তৈরি হয়। এদিক থেকে চলতি অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত মাসগুলোকে এই গবেষণায় হিসাব করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকটের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের ওপর। এই তিন খাতে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জনসংখ্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা, স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটে পরিবেশের ওপর প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারে মোট বনভূমির পরিমাণ ২০ লাখ ৯২ হাজার ১৬ একর। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এরইমধ্যে ৩ হাজার ৫০০ একর বনভূমি ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকায় বায়ু দূষণ, ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সিপিডি’র পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে অারও প্রবল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। এ সংকট স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় সমাধানযোগ্য নয়, এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুদান বা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থাগুলো অন্য সেক্টরের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। আরও নমনীয় হয়ে অনুদান প্রদান করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প বা এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক চোরাচালান বন্ধে জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে।
সিপিডি’র চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ চাকমা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমসি/এইচএ/