ইতোমধ্যে অর্থাভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যেতে পারেননি তিনি। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির টাকা জমার শেষ তারিখ ২৬ নভেম্বর।
রায়হানের পরিবার থাকে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সাচিবুনিয়া গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে। তার বাবা বজলুর রহমান শিকারী একজন দিনমজুর। বর্তমানে সামান্য আয়ের টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। মা সেলিনা বেগম গৃহিণী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে রায়হান সেজো। বাকী চার ভাই-বোনও লেখাপড়া করে।
রায়হানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ২৪৯৯৩৯, মেধাক্রম: ৩৯৬। ‘ঘ’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগের মোট আসন সংখ্যা ৪১০। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ৩১০৭০৭, মেধাক্রম: ৪৪৮। মোট আসন সংখ্যা ৪৮০। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ১৮৪৬৮, মেধাক্রম: ৭৭০। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এ রায়হান এবার ভর্তি পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ২৬ নভেম্বর। ভর্তির জন্য তার প্রয়োজন ১০/১১ হাজার টাকা। ঢাবিতে প্রয়োজন ১৪-১৫ হাজার টাকা। রায়হানের পরিবারের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। অর্থাভাবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ এবং স্বপ্ন দুই-ই হাতছাড়া হতে বসেছে তার।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, অন্যের বাড়িতে থেকে (লজিং) এবং টিউশনি করিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করেছি। আর টিউশনির টাকা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেছি। কতো দিন কতো রাত যে না খেয়ে কাটিয়েছি। সে হিসাব জানা নেই। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়িনি।
তিনি আরও বলেন, পাইকগাছার গোড়োইখালী আলমশাহী স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর খুলানার আযমখান সরকারি কর্মাস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। ধার-দেনা করে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি।
এতো দিন টেনে-টুনে লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি। আল্লাহর রহমতে ঢাকা, জগন্নাথ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সও পেয়েছি। আমাদের অভাব-অনটনের সংসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্ভব হবে কী-না তা নিয়ে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমার স্বপ্নপূরণে কেউ এগিয়ে এলে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
ইতোমধ্যে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে রাবির ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে মুখ মলিন করেন অদম্য মেধাবী রায়হান।
রায়হানের বাবা বজলুর রহমান শিকারী বাংলানিউজকে জানান, রায়হানের মা স্ট্রোকের রোগী, দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। তার চার ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তার পক্ষে চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনাহারে-অর্ধাহারে ওরা লেখাপড়া করছে। যেদিন কাজ হয় সে দিন খাবার জোটে।
তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের ছেলে তো চান্সই পায় না। রায়হানতো তিনটায় পেয়েছে। এখন রায়হানকে ভর্তি করার মতো অর্থ হাতে নেই। কিভাবে টাকা জোগাড় করবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন। আর কোনোভাবে ভর্তি করা গেলেও পরবর্তীতে কিভাবে পড়াশুনার খরচ জোগাবেন তা নিয়েও চিন্তা।
তিনি জানান, রায়হানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি বা সংস্থা যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হবে। রায়হানকে সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন: মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর, খুলনা, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। মোবাইল: ০১৭১০৩১২৭৬০।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
এমআরএম/ওএইচ/এসএইচ