ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আনিসুল হকের কুলখানি বুধবার

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৭
আনিসুল হকের কুলখানি বুধবার মেয়র আনিসুল হক (বাংলানিউজ ফাইল ফটো)

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী বুধবার (০৬ ডিসেম্বর)। বাদ আসর রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও কুরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে।

কুলখানিতে অংশ নিতে আত্মীয়-স্বজন, শুভানুধ্যায়ীসহ সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন সদ্য প্রয়াত মেয়রের পরিবারের পক্ষে তার ছেলে নাভিদুল হক।

শনিবার (০২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন আনিসুল হক।

মাত্র ছয় বছর বয়সে মারা যাওয়া ছেলে মোহাম্মদ শারাফুল হকের কবরে দাফন করা হয় তাকে। সদ্যপ্রয়াত মেয়রের মা ফাতেমা জোহুরা বেগমের কবরও পাশেই।
 
আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক, ছেলে নাভিদুল হক, দুই মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা হক ও তানিশা ফারিয়াম্যান হক, নাতনি, ছোট ভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ স্বজনেরা দাফনের সময় পাশে ছিলেন। ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিশিষ্টজনেরাও।

দাফন শেষে মোনাজাতে অংশ নেন তারাসহ কবরস্থানের চারপাশে সমবেত সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ।

মেয়র আনিসুল হকের বাবা ৯০ বছর বয়সী সৈয়দ মাঈনুদ্দীন হোসাইন ছেলের নামাজে জানাজায় অংশ নিলেও কবরস্থান পর্যন্ত আসতে পারেননি।

এর আগে বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে আনিসুল হকের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

নামাজে জানাজার আগে জাতীয় পতাকা ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পতাকা দিয়ে ঢাকা আনিসুল হকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তরের বিশিষ্ট নাগরিকেরা।

নামাজে জানাজার শুরুতে নাভিদুল হক তার বাবার হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন সবার কাছে।

বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে প্রথমে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।

এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে আনিসুল হকের মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন ক্যাপ্টেন মোশতাক আহমেদ। পর্যায়ক্রমে শেষ শ্রদ্ধা জানান সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর পক্ষে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের পক্ষে  সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

এর আগে দুপুরে প্রয়াত মেয়রের বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮০ নম্বর বাসায় রাখা হয় মরদেহ। সেখানে গিয়ে আনিসুল হককে শেষ শ্রদ্ধা জানান, তার পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেন ও সমবেদনা জানান এবং তাদের নিয়ে মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মরহুমের ছোট ভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।

দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ আসার পর বনানীর বাসায় তাকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষেরা। সকাল থে‌কেই ভিড় করেন আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরাও।

তারা শেষ শ্রদ্ধা জানান ও বাসার গে‌টে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০২ ফ্লাইটযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ পৌঁছানোর পর সরাসরি মেয়রের বাসায় নেওয়া হয়। লন্ডন থেকে বিমানে মরদেহ নিয়ে সঙ্গে এসেছেন আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক, ছেলে নাভিদুল হক, দুই মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা ও তানিশা ফারিয়াম্যান হক এবং নাতনি।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন আনিসুল হক।

হাসপাতালে তিনি কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস (ভেন্টিলেশন) যন্ত্র দেওয়া অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র খুলে নিয়ে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) বাদ জুমা লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

আনিসুল হক দীর্ঘ দুই মাস ধরে মস্তিকের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত রোগে ভুগছিলেন।  

গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। গত ১৩ আগস্ট লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে হাসপাতালে চেকআপ করাতে যান। চেকআপ শেষে বাসায় ফিরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ডাক্তারি ভাষায় একে ‘মাইল্ড ব্রেইন স্ট্রোক’ বলা হয়।

পরে তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা।

এরপর থেকে মেয়র আনিসুলকে ওয়েলিংটন হাসপাতালের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি ঘটলে তাকে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়।

গত রোববার (২৬ নভেম্বর) শরীরে নতুন করে ইনফেকশন দেখা দেওয়ার পর মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে ফের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

শারীরিক অবস্থার আরও কিছুটা অবনতি হলে পরে আনিসুল হককে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হক বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পান। তৈরি পোশাকখাতের এই ব্যবসায়ী এক সময় এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

২০১১ সালের ০১ ডিসেম্বর গঠিত হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএ/এমএসি/এএসআর
** প্রিয় মেয়রকে নাগরিকদের শেষ শ্রদ্ধা বিকেল ৩টায়
** মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায়
** মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ বাসায়
** ‘মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো’
** আনিসুল হকের বাসায় গেলেন প্রধানমন্ত্রী
** প্রিয় মেয়রকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নাগরিকরা
** মেয়র আনিসুল হককে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি
** আনিসুল হকের নামাজে জানাজা শেষ
** চিরনিদ্রায় শায়িত আনিসুল হক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।