বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর সময়কার উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে।
বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর সময়কার উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন, বিশেষ করে বিগত বিএনপি সরকারের সঙ্গে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে’।
বাজেট বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।
বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিটেন্স প্রবাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়। ২০১৭ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২০০৫-০৬ বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত ৯ বছরে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৫৮টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। ৩৬৫টি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে।
খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।
পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, সমগ্র বাংলাদেশকে রেল সংযোগের আওতায় আনার উদ্যোগ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা, পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর নির্মাণ, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এবং রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গ্রিডবিহীন এলাকায় ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনসহ নির্মাণাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, কালভার্ট নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার-লেনে উন্নয়নের কাজ চলছে।
সরকারি কর্মচারিদের বেতনভাতা ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসা সুযোগ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কেউ বেকার এবং দরিদ্র থাকবে না। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ, গবেষণা ও উন্নয়নে ব্লু -ইকোনমি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে।
লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। বাংলাদেশ জেন্ডার সংশ্লিষ্ট এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বে ৫ম স্থান অর্জন করেছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
এমইউএম/এসএইচ